মায়ের হাতের পিঠা খাওয়া হলো না শিশু মোরসালিনের

সকালে ঘুম থেকে উঠেই মায়ের হাতের পিঠা খেতে চেয়েছিল শিশু মোরসালিন (৭)। তাই শীতের রাতে না ঘুমিয়ে রান্নাঘরে পিঠা বানাচ্ছিলেন মা মোসলেমা খাতুন। তখন রাত ১০টা। ঘরে কাঁথা জড়িয়ে ঘুমাচ্ছিল মোরসালিন। পাশের ওয়াবদা বাঁধের সড়ক দিয়ে গাছের গুঁড়িবোঝাই ট্রাক যাচ্ছিল। এ সময় চালক নিয়ন্ত্রণ হারালে গাছের গুঁড়িসহ ট্রাকটি উল্টে যায়। এতে ঘর ভেঙে ও গাছের গুঁড়ি চাপা পড়ে মারা যায় মোরসালিন।

রবিবার (০৮ জানুয়ারি) রাত ১০টার দিকে কুড়িগ্রামের সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের যাত্রাপুর হাটের পশ্চিমে ওয়াবদা বাঁধের ধারে এই ঘটনা ঘটে। যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

মোরসালিন যাত্রাপুর ইউনিয়নের ওয়াবদা বাঁধের পাড়ের বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম-মোসলেমা দম্পতির ছেলে। সফিকুল যাত্রাপুর ঘাটে চা বিক্রি করে সংসার চালান।

মোরসালিনের এমন মৃত্যুতে বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন মোসলেমা খাতুন। হাতে তখনও পিঠা বানানো আটার ছাপ। নিজ হাতে বানানো পিঠা সকালে ছোট ছেলেকে খাওয়ানো হলো না তার।

শফিকুল ইসলাম বলেন, ‌‘রাতে মোরসালিনের মা পিঠা বানাচ্ছিলো। মোরসালিন ঘরে ঘুমাচ্ছিল। এ সময় গাছের গুঁড়িবোঝাই একটি ট্রাক বাঁধের রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় উল্টে যায়। ট্রাকে থাকা গাছের গুঁড়িগুলোর কয়েকটি ঘরের ওপর পড়ে। এতে মোরসালিন গুরুতর আহত হলে তাকে উদ্ধার করে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। কিন্তু হাসপাতালের চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’

হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. হাসান বলেন, ‘শিশুটিকে রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল। কিন্তু আমরা তাকে মৃত পাই। সম্ভবত মাথায় আঘাত পাওয়ার কারণে শিশুটি ঘটনাস্থলেই মারা গিয়েছিল।’

যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর বলেন, ‘দুর্ঘটনাকবলিত ট্রাক জব্দ করা হয়েছে। শিশুটির পরিবারকে উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সহায়তার ব্যবস্থা করা হবে।’

কুড়িগ্রাম সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খান মো. শাহরিয়ার জানান, শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ট্রাকের চালক ও হেলপার পালিয়ে গেছে। এ ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।