Didir Suraksha Kavach: পঞ্চায়েত ভোটে গণতন্ত্র ‘দিদির সুরক্ষা কবচ’ পাবে তো ?

পঞ্চায়েত নির্বাচনে নিবিড় জনসংযোগ গড়ে তৃণমূলের নয়া কর্মসূচি’দিদির সুরক্ষা কবচ’ যা বাড়ি বাড়ি নিয়ে যাবে’দিদির দূত’। প্রায় তিন লক্ষ তৃণমূল নেতা-কর্মী গ্রামে যাবেন, বাড়ি বাড়ি ঘুরবেন আবার গ্রামেতেই রাত্রিবাস করবেন। তারা খোঁজ নেবেন তৃণমূল সরকার ক্ষমতা আসার পর কন্যাশ্রী, স্বাস্থ্যসাথীর মতো যে প্রকল্পগুলো চালু হয়েছে তা ঠিক মতো পাচ্ছেন কি না। অর্থাৎ তারা দিদির সুরক্ষা কবচের তলায় আছেন কি না, তার খোঁজ নেবে গ্রামে যাওয়া’দিদির দূত’। না পেলে কোন প্রকল্পের সুবিধা তারা পাচ্ছেন না তা নোট করবেন। পরবর্তীকালে তাঁরা যাতে ওই সুবিধাগুলি পান তারও ব্যবস্থা করবেন।

দলীয় সূত্রে খবর ইতিমধ্যেই রোস্টার তৈরি হয়ে গিয়েছে। কে কোন গ্রামে কবে যাবেন তাও ঠিক হয়ে গিয়েছে।’দিদির দূত’ হিসাবে যাঁদের নির্দিষ্ট করা হয়ে তাঁদের কাছে রোস্টার ও অন্যন্য কাগজ পোঁছে দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। ‘দিদির সুরক্ষা কবচ’ নিয়ে গ্রামে পৌঁছনোর প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে গিয়েছে।

দুয়ারের সরকারের পরিপূরক কি’দিদির সুরক্ষা কবচ’?

২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক আগে আগে দুয়ারে সরকার প্রকল্পের ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিভিন্ন সরকারি বিভাগ একেবারে এলাকায় হাজির হয়ে কোনও প্রকল্পর জন্য নাম নথিভুক্তকরণ, প্রকল্পের সুবিধার পেতে কোনও সমস্যা হলে তার সমাধান, এর ধরনের পরিষেবা দিতে শুরু করে দুয়ারে সরকার। অর্থাৎ কোনও প্রকল্পের সুবিধা পেতে হলে আর সরকারি অফিসের দরজায় দরজায় ঘুরতে হবে না দুয়ারে সরকারে এলেই মিলবে সমাধান। খুব স্বাভাবিক ভাবে জনপ্রিয়তাও বেড়েছে এই প্রকল্পের। তাই বাধ্য হয়ে ডিসেম্বর মাসে প্রকল্পের সময়সীমা বৃদ্ধি করতে হয় সরকারকে। গত বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল জয় পেয়ে তৃণমূলের ক্ষমতা আসার পিছনে দুয়ারের সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করেন ভোট বিশেষজ্ঞরা।

কিন্তু দুয়ারে সরকার রাজ্য সরকারের প্রকল্প, আর ‘দিদির সুরক্ষা কবচ’ দলের কর্মসূচি। দুটোর মধ্যে গুণগত তফাৎ আছে। দ্বিতীয় কাজটিও সরকারি কর্মীদের দিয়েই করা যেত। অর্থাৎ সরকারের সামাজিক কর্মসূচির সুবিধা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছচ্ছে কি না তা সরকারি কর্মীদের দিয়ে খোঁজ নেওয়া যেত। কিন্তু তার বদলে একে দলীয় কর্মসূচিতে নিয়ে যাওয়া হল। এখানেই একে রাজনৈতিক সৃজনশীল কৌশল বলা যেতে পারে। যে সৃজনশীলতার পাঠ দিয়ে গিয়েছেন ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর। লোকসভা নির্বাচনের আগে’দিদিকে বলো’ এবং ২০২৩ বিধানসভা নির্বাচনের আগে’দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচিতে। অর্থাৎ ১১ বছর ধরে সরকারে থাকার ফলে মানুষের মধ্যে সরকারের বিরুদ্ধে যে রাগ ক্ষোভ তৈরি হয়, তাতে কিছু প্রলেপ লাগাতে পারে এই ধরনের কর্মসূচি।

কী বলছে বিরোধীরা

বিরোধীরা বলছেন, বিপদে পড়লে মানুষ যেমন কবচ, তাবিজ ধারণ করে,‘দিদির সুরক্ষা কবচ’ তেমনি। আদালতের জন্য একের পর এক দুর্নীতির প্রকাশ্যে ঘটনা প্রকাশ্যে আসছে। দুর্নীতির দায়ে দলের দুই ডাকসাইটের নেতা জেলবন্দি। দুর্নীতি এতো গভীরে পৌঁছেছে, আবাস যোজনাকে দুর্নীতিমুক্ত করতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে প্রশাসনকে। এই অবস্থায় মুখরক্ষা করতে কোনও তাবিজ-কবচ ছাড়া গতি নেই শাসকদলের। বিরোধীদের যুক্তির সত্যতা আছে ধরে নিয়ে বলতে হয়, উল্টো দিকে সাধারণ মানুষ যে তাদের আকড়ে ধরে শাসকদলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ছুড়ে দেবেন তেমনটাও তো হচ্ছে কই। শুধু আদালত নির্ভর রাজনীতি করলে এক পায়ে হাঁটা হয়ে যায়। দুপায়ে হাঁটা অর্থাৎ নিবিড় জনসংযোগ, স্থানীয় দাবিদাওয়া নিয়ে আন্দোলন—এ সব না করতে পারলে, শুধু সভার ভিড় বা সোশ্যাল মিডিয়া লাইক শেয়ারের সংখ্যা ভোটের বাক্সে নজরে আসবে না। আসেওনি গত বিধানসভায়।

পঞ্চায়েত থেকে লোকসভা

পঞ্চায়েত ভোটে আসলে লোকসভা ভোটের সলতে পাকানো। সেই লক্ষ্যেই‘দিদির সুরক্ষা কবচ’ নিয়ে বাড়ি বাড়ি যাবেন‘দিদির দূত’। এই জনসংযোগ কর্মসূচির প্রভাবে যদি পঞ্চায়েত ভোটে পড়ে তবে তার রেশ থেকে যাবে আগামী বছর লোকসভা নির্বাচনেও।

প্রশ্ন হল, পঞ্চায়েত নির্বাচন অবাধ ও শান্তিপূর্ণ হবে কি? বিরোধীরা আশঙ্কা করছেন এবারও তাদের মনোনয়ন জমা দিতে দেওয়া হবে না। কোচবিহার, মুর্শিদাবাদ, উত্তর ২৪ পরগনা, হাওড়া ও বর্ধমানে তাজা বোমা উদ্ধার হয়েছে।  যদিও তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিক বিভিন্ন সভায় বলছেন, পঞ্চায়েত নির্বাচন অবাধ ও শান্তিপূর্ণ হবে। বিরোধীরা সবাই মনোনয়ন জমা দিতে পারবেন। বীরভূমের জেলা সভাপতি অনুব্রত মন্ডলও এজলাসে বসে বা জেলে ফেরার পথে বলছেন, নির্বাচন শান্তিপূর্ণ করতে হবে। আবার উল্টো দিকে তৃণমূলের কোনও কোনও নেতা বলছেন,‘আমরা কাউকে মনোনয় জমা দিতে বাধা দেব না। আসলে বিরোধীরা প্রার্থী হিসাবে দাঁড় করানোর লোকই জোগাড় করতে পারবে না।’ এখানে লুকিয়ে আছে প্রচ্ছন্ন হুমকির সুর। তাই দিদির সুরক্ষা কবচে শুধু কন্যাশ্রী, স্বাস্থ্যসাথী নয় গণতন্ত্রকেও রাখতে হবে। তারপর বাকিটা ঠিক করুক না জনতা জনার্দন।