কোথাও ১১ তলা, কোথাও ৬ তলা, দার্জিলিং কি দ্বিতীয় যোশীমঠ? বসে যাচ্ছে তিনধরিয়া!

গত কয়েকবছরে দ্রুত বদলে গিয়েছে বাঙালির চিরচেনা দার্জিলিং। পাহাড়ের বুকে একের পর এক মাথা তুলছে বিরাট কংক্রিটের বিল্ডিং। অভিযোগ তার মধ্যে বহু বিল্ডিং অবৈধভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু তবুও যেন ঘুম ভাঙছে না সরকারের। এদিকে উত্তরাখণ্ডের যোশীমঠে একের পর এক বাড়িতে ফাটল দেখা দিয়েছে। তারপর থেকেই দার্জিলিংয়ের অবৈধ নির্মাণ নিয়ে নতুন করে বিতর্ক দানা বেঁধেছে। এবার এই বিতর্ককে উসকে দিয়েছেন হামরো পার্টির প্রধান অজয় এডওয়ার্ড। তাঁর দাবি, অবৈধ নির্মাণের বিরুদ্ধে সরব হওয়ার জেরেই তাঁদের ক্ষমতাচ্যুত হতে হয়েছে।

অজয় এডওয়ার্ড সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, চারদিকে অবৈধ নির্মাণ। বিল্ডার্সরা আমাদের টাকা দিতে চেয়েছিল। আমরা টাকা নিতে চাইনি। তারা তিন চারকোটি টাকা দিয়ে কাউন্সিলরদের কিনে নিয়েছে। সেই কাউন্সিলরদের শিলিগুড়িতে ফ্ল্যাট রয়েছে। ৩০-৪০ লাখ দিয়ে তারা ফ্ল্যাট কিনছে।

কার্শিয়াং কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ তথা পরিবেশবিদ প্রভাত প্রধান হিন্দুস্তান টাইমস বাংলাকে জানিয়েছেন, অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়।দার্জিলিংয়ে নতুন করে বিল্ডিং করার মতো আর জায়গা বিশেষ নেই। সেকারণে বিল্ডিংয়ের তলা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। এতেই উদ্বেগ আরও বাড়ছে। এনিয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন হতেই হবে। আগামী দিনে দার্জিলিংয়ের পরিস্থিতি যোশীমঠের মতো হবে না তা কে বলতে পারেন? সবার আগে মনে রাখতে হবে হিমালয় রিজিয়নটাই ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা।

তবে বাস্তবিকই দার্জিলিংয়ের চৌরাস্তা, গান্ধী রোগ, সেন্ট টেরেসা রোড আপনি যেদিকেই চোখ দেবেন একের পর এক বহুতল। দ্রুত বদলে যাচ্ছে দার্জিলিংয়ের চালচিত্র। গড়ে উঠছে একের পর বহুতল, হোটেল। এমনকী কংক্রিট ও কাঠের কাঠামো মিলিয়ে দার্জিলিংয়ে এগারো তলা, ৬ তলা বিল্ডিংও গড়ে উঠেছে। সব মিলিয়ে কংক্রিটের জঙ্গল দার্জিলিংয়ে।

এদিকে বরাবরই দার্জিলিং ভূমিকম্পপ্রবণ। সিসমিক জোন ৪-৫ এর মধ্যে পড়ে দার্জিলিং। মাঝেমধ্যে কম্পনও হয়। আর সেটাই যদি বেশি হয় তবে কি আদৌ দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে কংক্রিটের বিল্ডিং। এত ভার কি নিতে পারবে পাহাড়?

যোশীমঠের বিপর্যয়ের পরে দার্জিলিংকে ঘিরে নতুন করে উদ্বেগ মাথাচাড়া দিয়েছে। শুধু দার্জিলিং শহরে নয়, সংলগ্ন একাধিক জায়গায় মাটি বসে যাওয়ার নজির দেখা যাচ্ছে। তিনধরিয়া এলাকায় একটা সময় অবৈধভাবে মাটির নীচে থেকে কয়লা তোলা হত। পরে সেই প্রবণতা কিছুটা বন্ধ হয়। কিন্তু মাটি বসে যাওয়ার বিষয়টি ভাবাচ্ছে অনেককেই।

একদিকে অবৈধ নির্মাণ, অন্যদিকে মাটি ধসে যাওয়া, মাটি বসে যাওয়ার প্রবণতা ও অন্যদিকে দার্জিলিংয়ে জনসংখ্যার চাপ সব মিলিয়ে ক্রমেই উদ্বেগ যেন মাত্রাছাড়া হয়ে উঠেছে।