মার্চের মধ্যে ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলপত্র প্রণয়ন করবে বাংলাদেশ

গত বছর মার্চে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্ডার সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড ঢাকা সফরের সময়ে বার্তা দিয়ে গিয়েছিলেন, বৃহৎ ইন্দো-প্যাসিফিক ক্যানভাসের মধ্যে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। এরপরে ওয়াশিংটনের সঙ্গে ঢাকার প্রায় সব বৈঠকে ইন্দো-প্যাসিফিক নিয়ে আলোচনা হয়েছে এবং হচ্ছে। বাংলাদেশও ইন্দো-প্যাসিফিক নিয়ে নিজস্ব কৌশল নির্ধারণ করছে। আশা করা হচ্ছে, এ বছরের মার্চের মধ্যে এই কৌশল প্রণীত হবে।

ইন্দো-প্যাসিফিক নিয়ে বাংলাদেশের চাওয়া প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘আমাদেরও একটি নিজস্ব অবস্থান থাকবে। একটি নীতি নিয়ে কাজ করছি। এ বছরের প্রথম তিন মাসের মধ্যে একটি সামগ্রিক গাইডলাইনস এবং প্যারামিটারস দিয়ে আমাদের প্রত্যাশাগুলো ব্যক্ত করতে পারবো।’

উল্লেখ্য, গত বছরের মার্চে নুল্যান্ড জানিয়েছিলেন, ‘ইন্দো-প্যাসিফিকে অর্থনৈতিক, নিরাপত্তা, প্রযুক্তি উপাদান আছে এবং আমরা খুশি হবো, বাংলাদেশে যেভাবে চায় সেভাবে এখানে অংশগ্রহণ করুক।’

ইন্দো-প্যাসিফিক কী

ইন্দো-প্যাসিফিক বলতে সাধারণভাবে ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলকে বোঝায়। একাধিক দেশ ভৌগোলিকভাবে এই অঞ্চল কত বড় সেটি ভিন্ন-ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সম্প্রতি প্রকাশিত ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি অনুযায়ী প্রশান্ত মহাসাগরের মার্কিন উপকূল থেকে শুরু করে গোটা ভারত মহাসাগরের অন্তর্ভুক্ত।

অস্ট্রেলিয়া ২০১৭ সালে প্রকাশিত ফরেন পলিসি হোয়াইট পেপারে বলা হয়েছে, পূর্ব ভারত মহাসাগর থেকে প্রশান্ত মহাসাগর পর্যন্ত হচ্ছে ইন্দো-প্যাসিফিক।

আবার ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের স্ট্র্যাটেজি অনুযায়ী আফ্রিকার পশ্চিম উপকূল থেকে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগর পর্যন্ত। সম্প্রতি কানাডার কৌশলপত্রে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে ৪০টি দেশ আছে বলে উল্লেখ করা হয়।

এখানে একটি বিষয় পরিষ্কার, ভৌগোলিকভাবে প্রতিটি দেশ বা অঞ্চলের ইন্দো-প্যাসিফিক মানচিত্রে বাংলাদেশের অবস্থান রয়েছে।

ইন্দো-প্যাসিফিক ভিশন

ইন্দো-প্যাসিফিক ভিশন সম্পর্কে ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করে। রাজনৈতিকভাবে ইন্দো-প্যাসিফিক ভিশনের মধ্যে চারটি মূল্যবোধভিত্তিক উপাদান আছে। সেগুলো হচ্ছে, প্রতিটি দেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতাকে সম্মান, শান্তিপূর্ণ উপায়ে দ্বন্দ্ব নিরসন, স্বাধীন ও উন্মুক্ত বাণিজ্য এবং আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধা।

এই ভিশন অর্জনের জন্য আলাদাভাবে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নসহ কিছু দেশ ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি বা কৌশলপত্র প্রণয়ন করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজিতে পাঁচটি বৃহৎ উপাদান আছে। আবার ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের কৌশলপত্রে সাতটি বৃহৎ উপাদান আছে।

বাংলাদেশের অবস্থান

২০১৮ সালের মে মাসে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে লেখা এক চিঠিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছিলেন, ’মুক্ত, খোলা, অন্তর্ভুক্তিমূলক, শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ’ ইন্দো-প্যাসিফিক ভিশনের সঙ্গে একমত পোষণ করে বাংলাদেশ।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘সম্প্রতি কানাডা একটি কৌশলপত্র দিয়েছে এবং সেটি বেশ ভালো। তাদের যে মৌলিক পয়েন্টগুলো আছে সেগুলো আমাদের সঙ্গে মিলে যায়।’

তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান একটি নীতির মাধ্যমে ব্যক্ত করেছে এবং পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন দেশও করেছে। আমরাও আশা করছি আমাদেরও একটি অবস্থান থাকবে।’