সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রয়োজন

দেশে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে হলে রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রয়োজন। একই সঙ্গে দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য প্রকৃত রাজনীতিবিদদের ভূমিকা রাখতে হবে বলে মনে করেন সমাজের বিশিষ্টজনেরা।

শনিবার (১৪ জানুয়ারি)  ঢাকা গ্যালারিতে এডিটর্স গিল্ড আয়োজিত ‘কোথায় দাঁড়িয়ে রাজনীতি?’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা সভায় তারা এ কথা বলেন।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ৭০-এর নির্বাচনে কেউ কোটি কোটি টাকা নিয়ে নামেনি। কিন্তু বর্তমানে ৬০ শতাংশ ব্যবসায়ী নির্বাচনে নমিনেশন পাচ্ছে। তারা ৫ কোটি টাকা দিয়ে নমিনেশন কিনে, ১০ কোটি টাকা বিলি করে। যার জন্য এই দুর্নীতিগুলো হচ্ছে। যতক্ষণ না রাজনীতিবিদরা নিজের হাতে রাজনীতি না নিবে ততদিন পর্যন্ত এই বিশৃঙ্খলা থাকবে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচনের সময় প্রশাসন-আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ অন্যদের নিরপেক্ষতা, একই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা প্রয়োজন। এরা যদি নিরপেক্ষ আচরণ করে তাহলে যে সরকারই হোক কোনও অসুবিধা নেই। কিন্তু অতীতের অভিজ্ঞতায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই সবাইকে নিরেপক্ষ ভূমিকা পালন করতে দেখা গেছে।

জনগণ কাউকে ক্ষমতায় যাবার জন্য ভোট দেয় না, বরং তাদের দায়িত্ব পালনের জন্য ভোট দেয় মন্তব্য করে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও রাষ্ট্রদূত শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, আজকের রাজনীতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে—তা সম্পূর্ণ নির্ভর করে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর। নির্বাচন যেহেতু নির্বাচন কমিশন আয়োজন করে, তাদের কার্যক্রমের মাধ্যমে জনগণের আস্থার জায়গায় ওঠে আসতে হবে। জনগণ যদি মন থেকে ভোট দিতে পারে তাহলে সেটা হবে প্রকৃতপক্ষে একটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন।

সিনিয়র সাংবাদিক সোহরাব হাসান বলেন, আমাদের ১১টি জাতীয় নির্বাচন হয়েছে। সবচেয়ে কম বিতর্কিত হয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনের চারটি নির্বাচন। এখানে স্বীকার করে নিতে হবে রাজনীতিকদের ব্যর্থতা রয়েছে৷ এখন আমরা যদি ২০২৪ সালের নির্বাচনটি সুষ্ঠু, অবাধ, শান্তিপূর্ণ ও প্রতিযোগিতামূলক দেখতে চাই তাহলে আওয়ামী লীগকে এর নিশ্চয়তা দিতে হবে। এবং বিএনপিকেও নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় আসতে হবে। আমার জানা মতে, বিএনপি এখন পর্যন্ত এমন কোনও কথা বলেনি যে তারা নির্বাচন ছাড়াই ক্ষমতায় যেতে চায়। কিন্তু তারা দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না আবার আওয়ামী লীগ চায় দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচন হোক। এখন আমরা জনসাধারণ চাই—এর মাঝে যে বাধা তা চিহ্নিত করে সমাধানে আসুক সবাই। এখন নির্বাচনের এক বছর আছে এই একবছরে ক্ষমতাসীনরা তাদের প্রতিটি কর্মকাণ্ডে নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে পারলে হয়তো বিরোধীদল কিছুটা আস্থা রাখবে। এর সঙ্গে আরেকটি কথা বলতে হয়—বাংলাদেশের বাস্তবতায় সরকারি দলের অধীনে সরকার না চাইলে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে নিরপেক্ষ নির্বাচন করা সম্ভব নয়।

ইউজিসি’র সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান বলেন, দায়িত্ব আপনি কাদের হাতে ছাড়বেন? ওই ব্যক্তিদের কাছে—যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিশ্বাস করে না!

এডিটরস গিল্ডের সভাপতি মোজাম্মেল বাবুর সঞ্চালনায় গোলটেবিল আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন মানবাধিকার ও উন্নয়নকর্মী খুশী কবির, প্রযুক্তিবিদ ও শিক্ষক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ, সিনিয়র সাংবাদিক নাঈমুল ইসলাম খান, সাবেক নির্বাচন কমিশনার শাহাদাত হোসেন।