আদানি দেশ ছেড়ে পালানোর আগে গ্রেফতার করা উচিত, সুর চড়াল তৃণমূল

নবান্নে জোড় হাতে মাথা নিচু করে গৌতম আদানি। বিশ্বের অন্যতম ধনী শিল্পপতি। আর সামনে হাসিমুখে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

সপ্তাহখানেক আগে পর্যন্তও আদানি গোষ্ঠীর সঙ্গে রাজ্য সরকারের সম্পর্ক একটি মধুর দিকে এগোচ্ছিল। দরপত্রের মাধ্যমে তাজপুরে গভীর সমুদ্র বন্দরের বরাত পেয়েছিল আদানি গোষ্ঠী। ডিসেম্বরে তাঁদের কর্তারা এসে ‘সাইট ভিজিট’ও করে গিয়েছেন। কিন্তু এরই মধ্যে কেমন যেন ছবিটা বদলে গেল।

এখন সেই গৌতম আদানির বিরুদ্ধেই সরব তৃণমূল কংগ্রেস। আদানি ইস্যুতে মুলতুবি প্রস্তাব পর্যন্ত আনলেন তৃণমূল সাংসদ গৌতম রায়। সৌজন্যে, মার্কিন শর্ট-সেলার হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের একটি রিপোর্ট। তাতে দাবি করা হয়, আদানি গোষ্ঠী শেয়ারের ভ্যালুয়েশন অনায্যভাবে বাড়িয়েছে। সংস্থার ঘাড়ে অস্বাভাবিক অঙ্কের দেনা আছে বলেও দাবি তোলা হয়। গত ২৪ জানুয়ারির সেই রিপোর্টেই ধস নেমেছে আদানি গোষ্ঠীর শেয়ারে। মাত্র দিন পাঁচেকেই আদানি গোষ্ঠীর শেয়ার বাজার থেকে প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার হাওয়া হয়ে যায়। যদিও আদানি গোষ্ঠী পাল্টা জানিয়েছে, হিন্ডেনবার্গের অভিযোগ ভিত্তিহীন। তবে তাতে বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বেচে দেওয়ার হিড়িক কমেনি।

এমন পরিস্থিতিতে সময় থাকতেই আদানি গোষ্ঠীর তদন্তের দাবিতে সরব হয়েছেন বিরোধী দলনেতারা। তবে পশ্চিমবঙ্গের সমীকরণটা কেমন যেন অন্যরকম। কেমন?

ছবি হাতে শুভেন্দু

নবান্নে মমতা-আদানি সাক্ষাত্কার। বৃহস্পতিবার সেই ছবির প্রিন্ট আউট নিয়ে সাংবাদিকদের সামনে হাজির হন শুভেন্দু অধিকারী। বিধানসভার বিরোধী দলনেতার দাবি, ‘আমরা সবাই জানি, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর (আদানি) সঙ্গে একটা গোপন আঁতাঁত করেছিলেন। আমি তাজপুর বন্দর নিয়ে ইতিমধ্যেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছি। ২৫,০০০ কোটি বিনিয়োগের কথা বলা হয়েছিল। ১০ লাখ চাকরি দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। সেই প্রতিশ্রুতির এবার কী হবে?’ পড়ুন সেই খবর: তাজপুরে ১০ লাখ চাকরির কী হবে? ‘আদানি’ ইস্যুতে মমতাকে খোঁচা শুভেন্দুর

তখন

বিগত কয়েক মাসে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে আদানি গোষ্ঠীর সম্পর্ক একটি শুভ দিকেই এগোচ্ছিল বলা চলে। মাস কয়েক আগে বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিটেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল গৌতম আদানিকে।

দরপত্রের মাধ্যমে রাজ্যের হেভিওয়েট তাজপুর বন্দর প্রকল্পও জিতে নেয় আদানি গোষ্ঠী। রাজ্য সরকারের বিজয়া সম্মিলনীতেই আসেন গৌতমপুত্র করণ আদানি। তাঁর হাতে তাজপুর বন্দরের নথি তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পড়ুন: তাজপুর বন্দরের নথি আদানির হাতে তুলে দিলেন মমতা, বিজয়াতে শিল্পদিশা

ফাইল ছবি: টুইটার/করণ আদানি

(Twitter)

এখন

আদানির শেয়ার টালমাটাল। হু-হু করে টাকা হারাচ্ছে আদানি গোষ্ঠীর ৭ সংস্থা। আর এমন পরিস্থিতিতে পূর্ব বর্ধমানের এক সভা থেকে নাম না করেই তোপ দাগেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘কালকে তো প্রায় সরকার পড়ে যাচ্ছিল। কেন পড়ে যাচ্ছিল? শেয়ার বাজারে ধস নেমেছিল। এবার কাউকে কাউকে অনুরোধ করে…আমরা জানি তাঁরা কারা। নামগুলো বলে আমি আর তাঁদের দুর্বিসহ করতে চাই না।’  

সরব হন তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়ও। তিনি বলেন, ‘ইডি, সিবিআইয়ের মতো যে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি বিরোধীদের পিছনে ক্ষ্যাপা কুকুরের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে তাদের ছায়া পর্যন্ত আদানি গোষ্ঠীকে স্পর্শ করতে পারল না। কেন পারল না?’

এরপরেই অবশ্য আসল ‘বোমা’টা ফাটান সুখেন্দুশেখর রায়। তিনি বলেন, ‘অবিলম্বে তদন্ত হওয়া উচিত্। কিন্তু তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার আগে আদানি গোষ্ঠীর কর্ণধাররা যাতে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে না পারেন তাই তাঁদের গ্রেফতার করা উচিত। পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করা উচিত। তাঁদের বিরুদ্ধে সমস্ত এয়ারপোর্টে লুক আউট নোটিস জারি করা উচিত। এমনকি ইন্টারপোলকেও সতর্ক করা দরকার।’

কিন্তু আদানির সঙ্গে রাজ্যের সুসম্পর্কের কী হবে?

এই প্রশ্নের উত্তরে সুখেন্দুশেখর বলেন, ‘কারোর সঙ্গে কোনও ব্যক্তিগত সম্পর্ক নেই। কেন্দ্রীয় সরকার থেকে ভারতবর্ষের বিভিন্ন সরকার শিল্প সম্মেলন করে। আমাদেরও শিল্প সম্মেলন হয়েছে। আমাদের শিল্প সম্মেলনে আম্বানি ও আদানিও এসেছেন। পাশাপাশি অন্যান্য শিল্পপতিরাও এসেছেন। যাঁরা আমাদের রাজ্যে বিনিয়োগ করতে চান তাঁদের সবসময় স্বাগত। কিন্তু তাই বলে সাত খুন মাফ হয়ে যাবে তা হয় না।’

আদানির জন্য রাজ্যের কোনও প্রকল্পও আটকে যাবে না। আশ্বাস দিয়েছেন তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষও। পড়ুন সেই খবর: ‘আদানির জন্য রাজ্যের প্রকল্প আটকাবে না,’ শুভেন্দুর খোঁচায় জবাব কুণালের

এই খবরটি আপনি পড়তে পারেন HT App থেকেও। এবার HT App বাংলায়। HT App ডাউনলোড করার লিঙ্ক https://htipad.onelink.me/277p/p7me4aup