উদ্বৃত্ত সরকারি বই গোপনে বিক্রির অভিযোগ

কুড়িগ্রাম শহরের খলিলগঞ্জ স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে বিগত বছরের উদ্বৃত্ত সরকারি বই বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ ও সহকারী প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। প্রায় এক মাস আগে প্রতিষ্ঠানের স্টোর রুম থেকে ট্রলি ভর্তি সরকারি বই বিক্রির ঘটনা ঘটলেও বিষয়টি সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক-কর্মচারীরা বলছেন, শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ সরকারি বই বিতরণের পর উদ্বৃত্ত বই কর্তৃপক্ষের কাছে ফেরত দেওয়ার বিধান থাকলেও অধ্যক্ষ ও সহকারী শিক্ষক যোগসাজশে তা বিক্রি করেছেন।

এ ব্যাপারে সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জহুরুল হক বলেন, ‘আমরা বিষয়টি জেনেছি। এভাবে সরকারি বই বিক্রির কোনও এখতিয়ার প্রতিষ্ঠানপ্রধানের নেই। ইতোমধ্যে বিক্রিকৃত কিছু বই উদ্ধার করা হয়েছে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রতিষ্ঠানটির কয়েকজন শিক্ষক ও অভিভাবক সদস্য জানান, গত এক মাস আগে রাতের বেলা সহকারী প্রধান শিক্ষক আনোয়ারুল ইসলাম সরদার স্টোর রুম থেকে গত বছরের উদ্বৃত্ত বই বের করে বিক্রি করেন। এসময় দায়িত্বরত নৈশ প্রহরী তাকে প্রশ্ন করলে তিনি অধ্যক্ষের নির্দেশনার কথা বলে স্টোর রুম থেকে বই বের করে কাগজ বিক্রেতা হান্নানের কাছে হস্তান্তর করেন। হান্নান একটি ট্রলিতে করে প্রায় ৫ মণ বই স্কুল থেকে নিয়ে যান।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কাগজ ব্যবসায়ী হান্নান কিছু বই বিভিন্ন মুদি দোকানে বিক্রি করেন। অবশিষ্ট বই তিনি শহরের পুরাতন রেল স্টেশনের কাছে রুবেল নামে এক কাগজ ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করে দেন। সেসব বই কেনার কথা স্বীকারও করেছেন হান্নান ও রুবেল। রুবেলের দোকানে গিয়ে কিছু সরকারি বই পাওয়া গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রতিষ্ঠানটির একজন শিক্ষক বলেন, ‘রাতের আঁধারে বিগত বছরের প্রায় দুই থেকে আড়াইশ’ সেট বই বিক্রি করা হয়েছে। সেগুলো ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির বই ছিল। প্রতিবছর চাহিদার চেয়ে বেশি বই নেওয়া হয়। অধ্যক্ষ উদ্বৃত্ত বই ফেরত দেন না, বিক্রি করে দেন।’

প্রতিষ্ঠানটির নৈশ প্রহরী কাদের জানান, ‘কয়েক দিন আগে সহকারী প্রধান শিক্ষক আনোয়ারুল ইসলাম সরদার কাগজ ব্যবসায়ী হান্নানকে সাথে নিয়ে এসে স্টোর রুম থেকে এক ট্রলি বই বের করে নিয়ে যান। তাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, অধ্যক্ষ ম্যাডাম নিয়ে যেতে বলেছেন। আমি আর কিছু জানি না।’ 

কাগজ ব্যবসায়ী হান্নান বলেন, ‘প্রায় এক মাস আগে আমি প্রায় তিন মণ বই কিনে নিয়ে সেগুলো বিক্রি করে দিয়েছি। আর কে কে বই নিয়ে গেছে সেটা জানি না।’

এ বিষয়ে খলিলগঞ্জ স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী প্রধান শিক্ষক আনোয়ারুল ইসলাম সরদার বলেন, ‘অধ্যক্ষ ম্যাডামের নির্দেশে কিছু কাগজপত্র বিক্রি করেছিলাম। এ বিষয়ে ম্যাডামের সাথে কথা বলুন।’

তবে অধ্যক্ষ রিতা রাণী দেবের দাবি, শুধু পুরাতন কাগজপত্র ও কিছু গাইডবই বিক্রি করা হয়েছে। সেখানে সরকারি বই ছিল না। বিদায়ের আগ মুহূর্তে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘অনেক বছর ধরে প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছি। এতদিন কোনও সমস্যা হয়নি। এখন বিদায়ের আগে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে এসব অভিযোগ করা হচ্ছে। আমি সরকারি বই বিক্রি করিনি।’

সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জহুরুল হক বলেন, ‘কোনও প্রতিষ্ঠানে বিতরণের পর বই উদ্বৃত্ত থাকলে তা কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে ফেরত দিতে হয়। উপজেলা কমিটির মাধ্যমে যথাযথ প্রক্রিয়া ছাড়া সরকারি বই বিক্রির কোনও বিধান নেই। প্রতিষ্ঠান প্রধান বিধিবহির্ভূত কাজ করেছেন। সম্প্রতি ঘটনাটি জানার পর আমরা কিছু বই উদ্ধার করে প্রতিষ্ঠানে ফেরত এনেছি। ঘটনা তদন্তে কমিটি করা হচ্ছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রাসেদুল হাসান বলেন, ‘ঘটনা তদন্তে ইতোমধ্যে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হবে।’