সাগরপাড়ে ফুলের মেলা

পরিত্যক্ত জমিতে এক সময় ছিল মাদকের আখড়া। দখল করে অনেকে উঠিয়েছিল ঝুপড়ি ঘর। মাত্র এক মাসের ব্যবধানে পাল্টে গেছে চিত্র। এখন এ জমিতে শোভা পাচ্ছে গোলাপ, গাঁদা, টিউলিপসহ শতাধিক প্রজাতির দেশি-বিদেশি ফুল। 

চট্টগ্রামে গড়ে তোলা হয়েছে মনোমুগ্ধকর এই পার্ক, যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘ডিসি পার্ক’। এই পার্কে শুক্রবার (১০ ফেব্রুয়ারি) প্রথমবারের মতো শুরু হয়েছে ফুল উৎসব। এ উৎসব চলবে আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। 

শুক্রবার বিকালে ফুল উৎসবের উদ্বোধন করেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। এ সময় শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল উপস্থিত ছিলেন।

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, ফুল উৎসবকে কেন্দ্র করে শুক্রবার প্রথমবারের মতো এ পার্ক দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। শিশু, বৃদ্ধ থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয় ফুল উৎসবটি। দেশি-বিদেশি ফুলের সঙ্গে দর্শনার্থীদের ছবি তুলতে দেখা গেছে। পাশাপাশি দুই দীঘির পাড়ে সময় কাটাতে দেখা গেছে তাদের।

১৯৪ দশমিক ১৩ একর জায়গা জুড়ে ডিসি পার্কে রয়েছে দুটি বিশাল দীঘি। দর্শনার্থীদের জন্য দীঘিতে মাছ ধরার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। 

ডিসি পার্কের সৌন্দর্যবর্ধনের দায়িত্বে রয়েছেন সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাটের ইফা নার্সারির মালিক কাউসার আল ইমরান। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এখানে ১২২ প্রজাতির শীতকালীন ফুলের চারা লাগানো হয়েছে। এ স্থানের মাটিতে লবণাক্ততা বেশি। অন্য স্থান থেকে মাটি এনে এখানে ফুলের চারা লাগানো হয়েছে। এসব চারা চট্টগ্রাম ছাড়াও ঢাকা, রংপুর, যশোরসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আনা হয়েছে।’

ফুল উৎসবে আসা ফারুক মনির নামে এক দর্শনার্থী বলেন, ‘চট্টগ্রামে বিনোদনের স্থান খুব কম। বাচ্চাদের নিয়ে সময় কাটানোর মতো বেশি বিনোদনকেন্দ্র নেই। এ পার্কে যত ধরনের দেশি-বিদেশি ফুল রয়েছে তা চট্টগ্রামের অন্য কোনও পার্কে নেই। যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ নানা কারণে এ পার্ক দর্শণার্থীদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে।’

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের এনডিসি তৌহিদুল আলম বলেন, ‘জমিটি দীর্ঘদিন ধরে দখলে ছিল। কোনও ইজারা না নিয়ে পার্ক করা হয়েছিল। মাছ চাষের জন্য বড় বড় জলাশয় করে সাগর পাড়ের ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল ধ্বংস করা হয়েছে। দখলদাররা বিশেষ প্রক্রিয়ায় গাছ মেরে ফেলছে। এরপর সেখানে আরও জলাশয় খনন করতে চেয়েছিল দখলদাররা। জায়গাটি উদ্ধার করা না হলে পুরো এলাকার বনায়ন ধ্বংস করে ফেলতো তারা।’

ফুল উৎসবে গিয়ে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, ‘খাস জায়গাটি দীর্ঘদিন ধরে অন্যরা ব্যবহার করতো। সেটি দখলমুক্ত করে ফুলের বাগান করা হয়েছে। মানুষের জন্য এটি উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সমুদ্র সৈকতের পাশে জনসাধারণের জন্য বিশাল একটা জায়গা তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। চিত্তবিনোদনের জন্য সমুদ্রের নির্মল পরিবেশে বাতাসের জন্য মানুষ এখানে আসেন।’

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, ‘বেদখল হওয়া জায়গা উদ্ধারের পর এ পার্ক গড়ে তোলা হয়েছে। এখানে কায়াকিং ও সাম্পানের ব্যবস্থা, শিশুদের জন্য কিডস জোন এবং ঘুড়ি উড়ানোর ব্যবস্থা রয়েছে। পুরো এলাকা সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তাৎক্ষণিক সেবা প্রদানের জন্য একটি মেডিক্যাল টিমও রয়েছে।’

গল ৪ জানুয়ারি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও ফৌজদারহাট-বন্দর সংযোগ সড়কের সংলগ্ন বেদখল থাকা এ জমি উদ্ধারে জেলা প্রশাসন অভিযান চালায়। জায়গাটি উদ্ধারের পর চট্টগ্রামে পর্যটন শিল্পের প্রসারে উদ্যোগ নেয় জেলা প্রশাসন।