গমের কাঁচা গাছ কেটে বিক্রি, উৎপাদন ব্যাহতের শঙ্কা

গবাদি পশুর খাদ্য হিসেবে গমের কাঁচা গাছ কেটে বাজারে বিক্রি করছেন কৃষকরা।  প্রতি আঁটি বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকায়। ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে ঘুরে কয়েকদিনে এমন দৃশ্য লক্ষ্য করা গেছে। 

গত বছরের তুলনায় চলতি বছর গমের কাঁচা গাছ বিক্রি দিগুণ বেড়েছে। প্রায় শতাধিক ব্যক্তি এটি ব্যবসা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। এর ফলে গম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না হওয়ার শঙ্কা করছেন কৃষি কর্মকর্তারা।

গবাদি পশু পালন করে এমন কয়েকটি পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গবাদি পশুর জন্য চারণভূমি সংকট ও গোখাদ্যের দাম বৃদ্ধির ফলে গমের কাঁচা গাছের চাহিদা বাজারে বেড়েছে। ছাগল ও গরুর কাঁচা ঘাসের চাহিদা পূরণে খামারিরা এটি কিনে খাওয়াচ্ছেন। 
 
বালিয়াডাঙ্গী বাজারের সমবায় মার্কেটের সামনে গমের কাঁচা গাছ বিক্রি করছিলেন রাণীশংকৈল উপজেলার নেকরমদ ইউনিয়নের কুমোরগঞ্জ গ্রামের আফসার আলী। তিনি জানান, চাষিদের কাছ প্রতি বিঘা কাঁচা গমক্ষেত ১৩-১৪ হাজার টাকায় কেনার পর সেই গাছ কেটে আঁটি বেঁধে বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করেন। এক বিঘা জমিতে সর্বনিম্ন ২ হাজার এবং সর্বোচ্চ ২ হাজার ৬শ আঁটি হয়। সেই আঁটিগুলো বাজারে ১০ টাকা দরে বিক্রি করেন। এক বিঘা জমির কাঁচা গম কেটে বিক্রি হয় ৩-৫ দিনের মধ্যে। এতে মজুরি বাদ দিয়ে কমপক্ষে ৮-১০ হাজার টাকা লাভ হয় তার।
 
চাড়োল ইউনিয়নের লাহিড়ী বাজারে গমের কাঁচা গাছ বিক্রি করছিলেন রাণীশংকৈল উপজেলার বাসনাহার গ্রামের আধুরাম চন্দ্র সিংহ। তিনি জানান, এ বছর ৬ দিনে দেড় বিঘা জমির কাঁচা গমক্ষেত কেটে আঁটি বেঁধে বাজারে বিক্রি করছেন। ঠাকুরগাঁও জেলার বিভিন্ন উপজেলায় গবাদি পশুর বাজারগুলোতে প্রচুর বিক্রি হয় গমের কাঁচা গাছের আঁটি। গরু-ছাগল বিক্রি করতে আসা লোকজন এসব কেনেন। একদিনে বাজারে ৭-৮ শ আঁটি বিক্রি করা সম্ভব।
 
দুওসুও ইউনিয়নের মহিষমারী গ্রামের আব্দুস সবুর বলেন, ‘তিনটি ছাগল পালন করছেন তিনি। চারণভূমি থাকলে ছাগলগুলো নিজেরাই কাঁচা ঘাস চড়ে খেত। সব জমিতে ফসল থাকায় ছাগলদের নিজে চড়ে খাওয়ার সুযোগ নেই। এ জন্য কাঁচা ঘাসের বিপরীতে গমের মৌসুমে গমের কাঁচা গাছ কিনে খাওয়াচ্ছি।’
 
গমের কাঁচা গাছ বিক্রি করা চাষিরা বলছেন, হালচাষ, বীজ রোপণ থেকে এ পর্যন্ত প্রতি বিঘা জমিতে খরচ হয়েছে প্রায় ১০ হাজার টাকা। প্রতি বিঘায় ৮ থেকে ১০ মণ গম পাওয়া যাবে। সেই গম বিক্রি করে ১৩–১৫ হাজার টাকা হাতে আসতে পারে। বাজারে গবাদি পশুর খাবারের সংকটের সময় কাঁচা গমের গাছ পশুখাদ্য হিসেবে বিক্রি করে প্রতি বিঘা জমি থেকে পাওয়া যাচ্ছে ১৩–১৪ হাজার টাকা। তাই গমের কাঁচা গাছ বিক্রি করছেন তারা।

সাবাজপুর গ্রামের গমচাষি আরিফ জানান, গম কাটা-মাড়াই করতে প্রতি বিঘা জমিতে খরচ রয়েছে ৪-৫ হাজার টাকা। গমের কাঁচা গাছ বিক্রি করলে মজুরির টাকাটা বাঁচছে কৃষকের। অন্যদিকে ওই জমিতে দ্রুত বোরো ধান অথবা আউশ ধান চাষ করা যাচ্ছে।

এভাবে গাছ কেটে বিক্রির ফলে গম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করছেন স্থানীয় কৃষিবিভাগ। উপজেলাটিতে চলতি মৌসুমে গমের আবাদ কম হয়েছে। গত বছর উপজেলায় গম চাষ হয়েছিল ১১ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। চলতি মৌসুমে গমের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১০ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে।

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন সোহেল জানান, ‘গম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হবে। তবে কৃষক ও গবাদি পশু পালনকারীরা উপকৃত হচ্ছেন। চারণভূমি সংকট এবং গবাদি পশুর খাদ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে গমের কাঁচা গাছ কেটে বিক্রির প্রবণতা বাড়ছে। তবে গম কেটে ফেলা জমিগুলোতে কৃষকরা আরেকটি ফসল উৎপাদন করছেন।’