জাপানের সঙ্গে সহযোগিতার নতুন খাত প্রতিরক্ষা

বাংলাদেশের পরিক্ষিত বন্ধু জাপান। স্বাধীনতার পর থেকে ঢাকার উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে বড় ভূমিকা রেখে আসছে টোকিও। বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্কেও দারুণ ভারসাম্য বজায় রেখে চলছে দেশটি।

ঢাকা-টোকিও সম্পর্কের ৫০ বছর পর সহযোগিতার ক্ষেত্র সম্প্রসারিত হয়ে যুক্ত হয়েছে নতুন মাত্রা। নতুন ক্ষেত্র হিসেবে এখন প্রতিরক্ষা খাতে সহযোগিতার অংশীদার হওয়ার জন্য আলোচনা করছে দুই দেশ।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং জাপানের জ্যেষ্ঠ ডেপুটি মিনিস্টার সিগেও ইয়ামাদার মধ্যে বৈঠকে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

এ বিষয়ে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এটি সম্পূর্ণ নতুন ক্ষেত্র। এর আগে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়ে দুই দেশ কোনো ধরনের আলোচনা করেনি।’

জাপানের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়ে আলোচনাকে ভালো উদ্যোগ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দেশটি চার জাতি কোয়াডের সদস্য এবং ইন্দো-প্যাসিফিক ধারনা সবার আগে জাপান প্রকাশ করেছিল। তাদের নিজস্ব বিগ-বি উদ্যোগ রয়েছে এবং বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশগুলোর সঙ্গে এ বিষয়ে তাদের সহযোগিতা রয়েছে। ইন্দো-প্যাসিফিকে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যুক্ত হতে বাংলাদেশ সবসময় বলে এসেছে। আসলে ওই অঞ্চলের বড় একটি দেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা খাতে নতুন সহযোগিতার বিষয়টিকে একটি বড় মোড় হিসেবে দেখা যেতে পারে।

শহীদুল হক বলেন, ‘আমরা আগে সবসময় বলেছি যে ইন্দো-প্যাসিফিকে সামরিক বা প্রতিরক্ষা বিষয়ে বাংলাদেশ আগ্রহী না। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে পরিবর্তন আসতেও পারে।’

জাপান সম্প্রতি ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্ট্র্যাটেজি প্রকাশ করেছে। এর প্রভাব এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশগুতেও পড়বে বলে তিনি জানান।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে জাপানের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অত্যন্ত সংকুচিত ছিলো। গত ডিসেম্বরে দেশটি তাদের উচ্চাকাঙ্খিত ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্ট্র্যাটেজি প্রকাশ করে। তাদের প্রতিরক্ষা বাজেটের পরিমাণ দ্বিগুন ঘোষণা করে।

জাপানে কূটনীতি, প্রতিরক্ষা, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা, প্রযুক্তি, সুমদ্র, আকাশ, গোয়েন্দা, উন্নয়ন সহযোগিতা ও জ্বালানির ক্ষেত্রে কৌশলগত নির্দেশনা দেবে এই ডকুমেন্ট।

এনএসএস অনুযায়ী, অবাধ ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিকের জন্য সমমনা দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর করবে জাপান। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে মহড়া, বিভিন্ন ধরনের প্রতিরক্ষা চুক্তি ও সহযোগিতার মাধ্যমে সম্পর্ক উষ্ণ করা হবে।

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘প্রতিরক্ষা বিষয়ে জাপান কখনোই সরব ছিল না। তারা ধীরে ধীরে নিজেদের তৈরি করেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারনে সারা বিশ্বের নিরাপত্তার দর্শন পরিবর্তন হয়েছে ও হচ্ছে। সামনের দিনগুলোতে প্রায় সব দেশেরই প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি জানান।

তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের নিরাপত্তা ক্ষেত্র পরিবর্তন হচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের সঙ্গে এ ধরনের সহযোগিতা হতেই পারে। এখানে একটি জিনিষ লক্ষ্যনীয়। তা হলো,   বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা পণ্যের ক্ষেত্রে চীনের ওপর বেশি নির্ভরশীল।’

জাপান থেকে পণ্য ক্রয় করা সম্ভব কি না সেটি ভবিষ্যতে জানা যাবে বলে তৌহিদ হোসেন ।