জাহাজ কাটার অক্সিজেন উৎপাদন করতো সীমা প্ল্যান্ট

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের কদমরসুল এলাকার সীমা অক্সিজেন অক্সিকো প্ল্যান্টে শিল্পে ব্যবহৃত অক্সিজেন উৎপাদিত হতো। এসব অক্সিজেন ব্যবহার হতো জাহাজ কাটার কাজে। এ তথ্য জানিয়েছেন সীতাকুণ্ড শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাদিরা নূর ও সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টের সুপারভাইজার ছানা উল্ল্যাহ।

শনিবার (৪ মার্চ) বিকাল ৪টা ৪০ মিনিটে সীতাকুণ্ডের কদমরসুল এলাকার সীমা অক্সিজেন অক্সিকো প্ল্যান্টে এ বিস্ফোরণ ঘটে। এখন পর্যন্ত ছয় জন নিহত হয়েছেন। দগ্ধ ও আহত ২২ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। দুর্ঘটনার পর উদ্ধারকাজে অংশ নেয় সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, র‌্যাব ও পুলিশ। 

এ ঘটনায় সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। পাশাপাশি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ফায়ার সার্ভিস।

প্ল্যান্টটিতে প্রতিদিন ২০০-২৫০ বোতল অক্সিজেন রিফিল করা হতো বলে জানালেন সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টের সুপারভাইজার ছানা উল্ল্যাহ। তিনি বলেন, ‘প্রতি সিলিন্ডারে ৯.৪ ঘনমিটার অক্সিজেন থাকে। প্ল্যান্টটিতে আড়াই থেকে তিন হাজার সিলিন্ডার অক্সিজেন মজুত ছিল। চীন থেকে কেমিক্যাল এনে প্রক্রিয়াজাত করে সিলিন্ডারে অক্সিজেন ভরা হতো। আমাদের উৎপাদিত অক্সিজেন জাহাজ কাটার কাজে ব্যবহৃত হয়।’

সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্ট অক্সিজেন প্রসেসিং করে বোতলজাত করতো উল্লেখ করে আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক আবদুল মালেক বলেন, ‘অক্সিজেনগুলো জাহাজ কাটার কাজে ব্যবহৃত করতো তারা। কীভাবে বিস্ফোরণ ঘটেছে, তা এখনও জানা যায়নি। তদন্ত কমিটি গঠন করেছি আমরা। তদন্ত শেষে বিস্ফোরণের কারণ জানা যাবে।’

কীভাবে বিস্ফোরণ ঘটেছে জানতে চাইলে শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাদিরা নূর বলেন, ‘সীমা অক্সিজেন অক্সিকো কারখানায় অক্সিজেন বোতলজাত করা হয়। এই অক্সিজেনের সাহায্যে জাহাজ কাটা হয়। মূল কারখানায় দুর্ঘটনা ঘটেছে। কীভাবে দুর্ঘটনা ঘটেছে, তা তদন্তের পর জানা যাবে।’

সরেজমিনে দেখা গেছে, দুর্ঘটনাকবলিত কারখানায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে হাজার হাজার অক্সিজেন সিলিন্ডার। বিস্ফোরণের মাত্রা এতই তীব্র ছিল যে, দুর্ঘটনাস্থল থেকে উড়ে যাওয়া প্ল্যান্টের লোহার টুকরার আঘাতে আশপাশের বেশ কয়েকটি যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে কারখানা এলাকা। আশপাশের ভবনের কাচ ভেঙে গেছে।

প্ল্যান্টের ধ্বংসস্তূপ থেকে চার জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহাদৎ হোসেন। তিনি বলেন, ‘এখান থেকে চার জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। হাসপাতালে নেওয়ার পথে আরও দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এ পর্যন্ত ছয় জনের মৃত্যু হয়েছে।’

সীতাকুণ্ড উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আশরাফুল আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দুর্ঘটনার কারণ জানতে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে এ কমিটি করা হয়। কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।’