সন্ধান মেলেনি নিখোঁজ স্বপনের, স্বজনদের আহাজারি

রাজধানীর সিদ্দিকবাজারের ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনায় মেহেদী হাসান স্বপন নামে এক যুবক এখনও নিখোঁজ আছে বলে দাবি করেছেন তার পরিবারের সদস্যরা। তিনি ‘বাংলাদেশ স্যানিটারি’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত। ভবনটিতে তার অফিস। বিস্ফোরণের পরেই নিখোঁজ মেহেদীর বন্ধু ও আত্মীয়-স্বজন ঘটনাস্থলে হাজির হন। কিন্তু বুধবার (৮ মার্চ) সন্ধ্যা পর্যন্ত তার সন্ধান পাওয়া যায়নি।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, মেহেদী হাসান স্বপনের গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ীর বজরা। বিস্ফোরণের খবর শুনে গতকালই পরিবারের সঙ্গে স্বপনের স্ত্রী ও দুই সন্তান ঢাকায় চলে আসেন। আজ চট্টগ্রাম থেকে ঘটনাস্থলে এসেছেন স্বপনের শ্বশুর আব্দুল মান্নান। তিনি ঘটনাস্থলে এসে আহাজারি করছিলেন জামাতার জন্য। এক পর্যায়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন এই বৃদ্ধ। তিনি বলেন, ‘আমার মেয়ে পাগলের মতো হয়ে গেছে।’

এসময় তার সঙ্গে ছিলেন নিখোঁজ স্বপনের দুলাভাই আবু তাহের। তিনি জানান, স্বপনের আনুমানিক বয়স ৩৬ বা ৩৭। গত এক যুগেরও বেশি সময় বাংলাদেশ স্যানিটারি নামক প্রতিষ্ঠানটিতে তিনি ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত। স্বপনের পরিবারে স্ত্রী মুনমুন ছাড়াও এক পুত্র ও এক কন্যা সন্তান আছে। তার ছেলের নাম মুনতাসির (১০), আর মেয়ে নুরজাহান নূর (৬)।

আবু তাহেরের সঙ্গে আলাপ করতে করতেই আবারও ডুকরে কেঁদে ওঠেন স্বপনের শ্বশুর আব্দুল মান্নান। আহাজারি করতে করতেই বলেন, ‘তার লাশটা যেন পঁচে যাওয়ার আগে আমাদের বুঝিয়ে দেয়, আপনারা সবাই উদ্ধারকর্মীদের একটু অনুরোধ করেন। তারাতো কাজ করতেছে না, আমরা স্বপনের লাশ কেমনে পাবো? আমাদের বাবাটারে আমাদের কাছে বুঝাইয়া দেন, একটাবার তার মুখটা দেখতাম।’

নিখোঁজ ব্যক্তিদের বিষয়ে অভিযান পরিচালনার বিষয়ে ফায়ার সা‌র্ভিসের ঢাকা জো‌নের উপ-প‌রিচালক দিনম‌নি শর্মা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমা‌দের কা‌ছে এখানকার দোকা‌নি‌দের স্বজনরা দা‌বি তু‌লে‌ছেন, তা‌দের একজন ভেত‌রে র‌য়ে গে‌ছেন। গতকাল আমরা যেভা‌বে উদ্ধার কাজ ক‌রে‌ছিলাম, সেভা‌বেই আজও উদ্ধার কাজ ক‌রে‌ছি। ত‌বে ভবনটা ঝু‌কিপূর্ণ অবস্থায় থাকায় সতর্কতার সঙ্গে উদ্ধার কাজ চা‌লি‌য়ে যা‌চ্ছি। যা‌তে আমা‌দের কর্মী‌দের কোন বিপ‌দে পড়তে না হয়। নি‌খোঁজ কেউ ভেত‌রে আট‌কে আছে, এমন দাবি যতক্ষণ থাকবে, ততক্ষণ অভিযান চলমান থাক‌বে।’

মঙ্গলবার (৭ মার্চ) বিকাল পৌনে ৫টার দিকে গুলিস্তানে বিআরটিসি বাস কাউন্টার সংলগ্ন সিদ্দিকবাজারে ক্যাফে কুইন হিসেবে পরিচিত সাততলা ভবনে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ভবনের দুই পাশে আরও কয়েকটি বহুতল ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ভয়াবহ এই দুর্ঘটনায় মঙ্গলবারই ১৭ জনের লাশ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস। বুধবার বিকালে আরো দুটি মরদেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস। বিস্ফোরণে এখন পর্যন্ত ১৯ জনের মুত্যু হয়েছে। আর ঢামেক চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও একজনের মৃত্যু হয়।

এর আগে এদিন সকালে ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিন জনের নিখোঁজ থাকার কথা জানানো হয়। বুধবার সকাল থেকে দ্বিতীয় দিনের মতো উদ্ধার অভিযান শুরু করে ফায়ার সার্ভিস। অভিযানে বিকাল প্রায় ৫টার দিকে দুজনের লাশ উদ্ধার হয়। স্বজনদের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে ভবনটিতে মেহেদী হাসান স্বপনের মৃতদেহ রয়েছে।