মাংসের বাজার থেকে সরে যাচ্ছে মধ্যবিত্তরা

ছেলেমেয়ে রুটি পিঠার সঙ্গে গরুর মাংস খেতে চেয়েছে। অনলাইনে রুটি পিঠার অর্ডার দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি পিঠার দাম পড়েছে আট টাকা করে। ৬৩ পিস পিঠা বাসায় পৌঁছানোসহ দাম পড়েছে ৫৬০ টাকা। এখন মাংস কেনার পালা। শুক্রবার (১০ মার্চ) সকালে বাংলা বাজারে গিয়ে প্রথমে ব্রয়লার মুরগির দাম জিজ্ঞাসা করায় কিছুটা হোঁচট খেয়েছেন বরিশাল নগরীর এক বাসিন্দা। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম চাওয়া হচ্ছে ২৭০ টাকা করে।

কী কারণে দাম এতো বাড়লো জিজ্ঞাসা করায় দোকানিরা কোনও উত্তর দেননি। শুধু বলেছেন, পাইকারি বাজারে দাম বেশি হওয়ায় তাদের সে হিসাবে বিক্রি করতে হচ্ছে। এখানে তাদের করার কিছুই নেই। এরপর তিনি ছুটে যান গরুর মাংসের দোকানে। সেখানে প্রতি কেজি মাংসের একদাম ৭৫০ টাকা। এক টাকাও কম নিতে পারবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন বিক্রেতা।

কথাগুলো বলছিলেন নগরীর দক্ষিণ আলেকান্দা সিকদারপাড়ার এক বাসিন্দা। তবে শেষ পর্যন্ত দুই কেজি ওজনের একটি ব্রয়লার মুরগি নিয়েছেন ৫৫০ টাকায়। ১০ টাকা বেশি রাখা হয় দুই কেজি থেকে কিছুটা বেশি হওয়ায়। ১০ টাকাও ছাড় দেননি বিক্রেতা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ব্যক্তি বলেন, ‘মাংসের বাজার থেকে অনেক আগেই নিম্নবিত্ত পরিবারগুলো সরে এসেছে। এখন মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোকেও সরতে হবে। কারণ এতো দাম দিয়ে কোনভাবেই মাংস কেনা সম্ভব নয়।’

মুরগি বিক্রেতা ইমরান হোসেন বলেন, ‘প্রতিদিন ব্রয়লার থেকে শুরু করে লেয়ার মুরগির দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় ক্রেতা কমে অর্ধেকে দাঁড়িয়েছে। এখন আস্ত মুরগির চেয়ে মুরগির ফেলে দেওয়া অংশের প্রতি মানুষের ঝোঁক বেশি। যা কেজি হিসাবে বিক্রি করা হয়। আর মুরগি কিনলেও এক কেজি থেকে দেড় কেজি। দুই কেজি ওজনের মুরগি বিক্রি হচ্ছে খুবই কম।’

ইমরান জানালেন, আগে ক্রেতারা এসে আড়াই কেজি থেকে তিন কেজি ওজনের ব্রয়লার মুরগি চাইতেন। এখন দাম বৃদ্ধি পাওয়ার পর দেড় কেজি ওজনের মুরগি কিছুটা চললেও বেশি ওজনের ব্রয়লার মুরগি কেউ কিনছেন না। 

তিনি বলেন, ‘দাম বৃদ্ধির আগে দোকানে সবাই বিক্রিতে ব্যস্ত থাকতো। এখন বেশিরভাগ কর্মচারীর হাতে কাজ নেই। নগরীর বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে যে পরিমাণ অর্ডার পাওয়া যেতো তাও মিলছে না। আগের চেয়ে কমিয়ে ব্রয়লার ও লেয়ার মুরগি আনছি। কারণ ব্রয়লারের দাম বাড়লেও ক্রেতাদের কাছ থেকে সেভাবে দাম রাখতে পারছি না। এ কারণে পরিমাণ কমিয়ে দাম সমন্বয় করছি। তাও আবার ক্রেতাদের কাছে জবাবদিহি করতে হচ্ছে। হোটেল-রেস্টুরেন্টের কাছে মুরগি বিক্রিও কমেছে। কারণ তাদেরও বিক্রি কমেছে। তাই আগের মতো অর্ডার পাই না। এমনকি প্রতিটি হোটেলের কাছে থাকা বকেয়াও তুলতে পারছি না।’

ইমরানের দোকানে মুরগির বিভিন্ন অংশ বিক্রির দায়িত্বে থাকা হারিছুর রহমান বলেন, ‘যে সময় ব্রয়লারের দাম কম ছিল তখন মুরগির পাখা, কলিজা, চামড়া, পা নেওয়ার ক্রেতা পাওয়া যেতো না। এখন আস্ত মুরগির চেয়ে এসব অংশের বিক্রি ভালো। মুরগির এসব কাটা অংশ আগে বিক্রি হতো ১৮০ টাকা থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে। এখন তা বিক্রি হচ্ছে ২৭০ টাকা কেজি দরে।’

ইমরান জানান, যে লেয়ার মুরগি আগে বিক্রি হতো ১৮০ টাকা থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে তা এখন বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকায়। দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা কেজি দরে। প্রতি পিস কবুতর বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা করে। তা আবার বড় হলে দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এদিকে বাংলা বাজারে আব্দুস সালামের দোকানে গিয়ে দেখে গেছে, গরুর মাংসের কেজি ৭৫০ টাকা করে। যেখানে প্রতিদিন কমপক্ষে বড় একটি গরু জবাই করা হতো। সেখানে একটি গরু জবাই করে দুই থেকে তিনটি দোকানে ভাগ করে এরপর বিক্রি করা হচ্ছে।

বিক্রেতারা জানালেন, ৫০০ টাকা কেজি পর্যন্ত ক্রেতা সন্তুষ্ট ছিলেন। কিন্তু ৭০০ টাকা কেজি করার পর ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। আর বাসি মাংস বিক্রিও করা যায় না। এ কারণে একটি গরু জবাই করে দুই-তিন দোকানে ভাগ করে এরপর বিক্রি করতে হচ্ছে। এ কারণে ব্যবসা কমে এসেছে। অনেক দোকান মালিক কর্মচারীদের বেতন পর্যন্ত দিতে পারছেন না।