এসি বিস্ফোরণ: যেসব তথ্য জানা প্রয়োজন

আগের তুলনায় নগরবাসীর এয়ার কন্ডিশনার বা এসির ব্যবহার বেড়েছে চোখে পড়ার মতো। ফলে এসি দুর্ঘটনার সংখ্যাও ক্রমেই বাড়ছে। কেন বারবার ঘটছে এসি বিস্ফোরণের মতো ঘটনা?   

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. আরাফাত রহমান জানালেন, এসি বিস্ফোরিত হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাব। তিনি বলেন, ‘এসির কম্প্রেসার একটি ছোটখাট বোমা। সচেতন না থাকলে ন্যানো সেকেন্ডের স্পার্কে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে পুরো বিল্ডিংও। কারণ কম্প্রেসারের আশেপাশে থাকতে পারে ইলেকট্রিক লাইন বা গ্যাসের লাইন। এই ধরনের মারাত্মক দুর্ঘটনা থেকে বাঁচতে চাইলে যন্ত্রটির সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের কোনও বিকল্প নেই।’

এসি দুর্ঘটনার বেশ কিছু কারণ জানালেন ড. আরাফাত রহমান-

১। অনেক দিনের পুরনো এসি সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ না করে নিয়মিত ব্যবহার করতে থাকলে।

২। এসিকে অনেক বেশি লোড দিলে। দেখা গেল যে ঘরে ৫ টনের এসি প্রয়োজন, সেখানে লাগানো হয়েছে ২ টনের এসি। ২ টনের এসি কখনোই ৫ টনের জায়গা ঠান্ডা করতে পারবে না। এক্ষেত্রে আমরা বেশিরভাগ সময় রিমোটের সাহায্যে এসির তাপমাত্রা কমিয়ে দিই তাড়াতাড়ি ঘর ঠান্ডা করার জন্য। এতে কম্প্রেসারের ওপর অনেক বেশি প্রেসার পড়ে। এই চাপ নিতে নিতে কম্প্রেসার গরম হয়ে আগুন ধরে যেতে পারে।

৩। তাপমাত্রা ওঠানামার কারণেও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এসি। দেখা যায় দিনের আবহাওয়া অনেক গরম, কিন্তু রাতে আবার ঠান্ডা। রাত ও দিনের মধ্যে তাপমাত্রার পার্থক্য ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই তারতম্যের কারণে অনেক সময় এসির হিটিং বা কুলিং সিস্টেম ঠিকঠাক কাজ করতে পারে না।

৪। নিম্নমানের গ্যাস ব্যবহারের কারণে এসি দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এসি রুম ঠিক মতো ঠান্ডা করতে না পারলে আমরা হয়তো পাড়ার কোনও দোকানে গিয়ে বলছি গ্যাস ভরে দেন। তারা কোন গ্যাস দিচ্ছে সেটা পরখ করছি না। আবার প্রতিযোগিতার বাজারে নিম্নমানের যন্ত্রাংশ ও গ্যাস দিয়ে এসি প্রস্তুত করে বিক্রি করা হচ্ছে। এ ধরনের এসিতে সহজেই কারিগরি ত্রুটি দেখা যায়। এসি থেকে গ্যাস লিক হয়ে রুমে বা এসির ভেতর জমে থাকলে ঘটতে পারে দুর্ঘটনা।

৫। এসির আউটডোর ইউনিটে কম্প্রেসার ও কনডেনসার থাকে। কনডেনসারের উপরে ধুলা জমে। সেটা পরিষ্কার না করেই এসি চালালে কনডেনসার ঠান্ডা করতে পারবে না রুম। ধুলার কারণে তাপ ঠিক মতো বের হতে না পেরে অতিরিক্ত গরম হয়ে যায় কম্প্রেসার এবং বিস্ফোরিত হয়।

৬। এসির ভেতরের বা বাইরের বৈদ্যুতিক তার নড়বড়ে হয়ে থাকলে শর্টসার্কিটের তৈরি হয়ে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে।

এসি বিস্ফোরণ এড়াতে করণীয়

১। রুমের আকার অনুযায়ী সঠিক মাত্রার এসি নির্বাচন করতে হবে।

২। দীর্ঘসময় এসি চালানো উচিত নয়। চালাতে হলে মাঝে কিছুক্ষণের বিরতি দিতে হবে।

৩। শীতকালে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকার পর মেরামত বা সার্ভিসিং করে তারপর চালু করতে হবে এসি।

৪। ভালো ব্র্যান্ডের এসি কিনতে হবে নির্দিষ্ট শো রুম থেকে।

৫। এসি বেশি ব্যবহৃত হলে ৬ মাসে একবার এবং কম ব্যবহৃত হলে বছরে একবার বিশেষজ্ঞ হাতে সার্ভিসিং করাতে হবে।

৬। এসির আউটডোর ইউনিট এমন স্থানে রাখতে হবে যেন সেটা গাছ দিয়ে ঢাকা না থাকে। খোলামেলা ও বাতাস চলাচল করে এমন স্থানে রাখবেন এসির বাইরের অংশ।

ছবি: সংগৃহীত