ওদের চাকরি ফিরিয়ে দিন, অপসারিত শিক্ষকদের পাশে দাঁড়িয়ে বললেন মমতা

ফের চাকরি চোরেদের পাশে দাঁড়ালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার আদালতের অনুষ্ঠানে দাঁড়িয়ে চাকরি চোরেদের ‘আমাদের পরিবারের সদস্য’ বলে দাবি করলেন তিনি। সঙ্গে দুর্নীতির কান্ডারিদের দায় ঝেড়ে ফেলে বললেন, টেক স্ট্রিক্ট অ্যাকশন। এদিন আলিপুর আদালতে ঋষি অরবিন্দর মূর্তি উন্মোচন অনুষ্ঠানে একথা বলেন তিনি।

এদিন মমতা বলেন, ‘কখনও জেনে শুনে অন্যায় কারও করিনি। ইভেন আমরা ক্ষমতায় আসার পর একটা সিপিএম ক্যাডারের চাকরি খাইনি। তাহলে তোমরা কেন খাচ্ছো? দেবার ক্ষমতা নেই কাড়বার ক্ষমতা আছে? আমি অশোক গঙ্গোপাধ্যায়ের একটা রায় দেখেছিলাম। সিপিএমের আমলে। চাকরি নিয়ে একটা কেস হয়েছিল। উনি বলেছিলেন রায়ে যে সংশোধন করে নেও যদি ভুল থাকে। চাকরি খাওয়ার কথা বলেনি। আর এখন রোজ কথায় কথায়, তিন হাজার চাকরি বাদ… চার হাজার চাকরি বাদ…’।

মমতার যুক্তি, ‘কেউ যদি নীচুতলায় অন্যায়ও করে থাকে আমাদের এখানে গণতান্ত্রিক দল। সবাই তো আমার তৃণমূলের ক্যাডার নয়। সবাই আমার গরমেন্টের ক্যাডার নয়। গরমেন্টের ক্যাডার হলেও তারা কোনও না কোনও পার্টির সমর্থক। তারা নীচে বসে যদি কেউ অন্যায় করে, আমার লোকও অন্যায় করে, আমি ন্যায়ের পথে থাকব। আমি অন্যায়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। এটা আমার চিরকালের স্বভাব।

কিন্তু আমি একটু ভেবে দেখতে বলব। কালকেও ২ জন সুইসাইড করেছে। যদি কেউ ভুল করে থাকে, তার দায়িত্ব তারা নেবে কেন? আজকে একটা ছেলে মেয়ে বিয়ে করে সংসার করছে, আজকে একটা ছেলে মেয়ে চাকরি করে বলে বাবা – মাকে দেখতে পারছে। হঠাৎ করে চাকরিটা চলে গেলে সে খাবে কী? সে ভাবছে আমি থাকতে আমার ছেলে মেয়েরা পাবে কোত্থেকে’।

দুর্নীতির মাথাদের দায় ঝেড়ে ফেলে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি তো বলছি, যারা অন্যায় করেছে অ্যাকশন নিন। টেক স্ট্রং অ্যাকশন। আমার কোনও দয়া নেই তাদের জন্য। কিন্তু ছেলে মেয়েগুলো যেন ভিক্টিমাইজ না হয় তাদের চাকরিটা আইন অনুযায়ীই ফিরিয়ে দিন। আইন অনুযায়ী যদি কোনও ভুল করে থাকে তাকে সুযোগ দেওয়া হোক। দরকার হলে সে আবার পরীক্ষা দিক। দরকার হলে তার জন্য আলাদা বন্দোবস্ত কোর্ট যেটা বলে দেবে আমরা সেটাই করে দেব। সিদ্ধান্ত আপনারা দিন’।

বিচারব্যবস্থার প্রতি মমতার আবেদন, ‘আমি চিফ জাস্টিসকে পেলাম না, সুব্রতদাকে (বিচারপতি সুব্রত তালুকদার) পেলাম। কারণ আমি যখন থেকে কাগজে ছবি দেখেছি কালকে জলপাইগুড়িতে সুইসাইড করেছে। সকাল থেকে আমার মনটা কাঁদছে। সে কোন দলের সমর্থক, কোন পার্টির সমর্থক আমি জানি না। কিন্তু পরিবারটা কাঁদছে। ওরাও আমাদের পরিবারের সদস্য। তাই আমি বলব কথায় কথায় লোকের চাকরি খাবেন না। দেওয়ার ক্ষমতা নেই কিল মারার গোঁসাই হয়েছে কিছু পলিটিক্যাল লোক’।

এমনকী সরকারের বিরুদ্ধে জনস্বার্থ মামলাকারীদেরও আক্রমণ করেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, ‘কত কেস পড়ে আছে, তাকাবে না। রোজ PIL, মানে পলিটিক্যাল ইন্টারেস্টেড লিটিগেশন। আমরা আগে জানতাম পাবলিক ইন্টারেস্টেড লিটিগেশন। আজকে এই জিনিস চলছে। অনেকে নিজের স্বার্থে করছে। সবাই নয়’।

বলে রাখি, বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায়ের এই রায়ের উল্লেখ আগেও একাধিকবার করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এব্যাপারে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এমন কোনও রায়ের কথা মনে পড়ছে না।