গ্রেফতার হওয়া প্রোমোটার অয়ন শীলের জীবনও ছিল বৈভবে ভরা। পেশা শুরু একটি কম্পিউটার দোকান থেকে হলেও শান্তনু স্পর্শে তা বৈভব পায়। রাত–পার্টির হুল্লোড় থেকে বিলাসবহুল জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিলেন নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে ধৃত প্রোমোটার অয়ন শীল। সল্টলেকের ফ্ল্যাটে দুর্নীতি চক্রের চাঁইদের নিয়ে রাতভর পার্টি চলত বলে দাবি এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি)। ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই সব পার্টিতে হাজির থাকতেন একাধিক রহস্যময়ী গ্ল্যামারকন্যা।
অয়নের সঙ্গে কী টলিউড নায়িকার যোগ? ইডি সূত্রে খবর, সম্প্রতি টলিপাড়ার এক নামকরা নায়িকার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বেড়েছিল অয়ন শীলের। দু’জনে লিভ–ইন করতে শুরু করেছিলেন। সেই সূত্রেই নায়িকাকে দামি গাড়ি–সহ নানা বহুমূল্য উপহার নিয়মিত দিতেন অয়ন। সল্টলেকে অয়নের ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালিয়ে এমন তথ্যই হাতে এসেছে তদন্তকারীদের। এই পরিস্থিতিতে নিয়োগ দুর্নীতি থেকে আসা টাকা পাচারের ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা এখন খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এমনকী অয়নের সঙ্গে টলিউডের ওই নায়িকার ২৫ লক্ষ টাকা লেনদেনের নথি অফিসারদের হাতে এসেছে।
আর কী তথ্য মিলেছে? ইডির প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, চুঁচুড়ায় নিজস্ব বাড়ি থাকলেও সল্টলেকে ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছিলেন অয়ন শীল। তাঁর স্ত্রী ও ছেলে নয়াদিল্লিতে থাকেন। সুতরাং ভাড়া বাড়িতে একাই থাকতেন অয়ন। এখানে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে আসতেন বহু নেতা–মন্ত্রী এবং প্রভাবশালী লোকজন। চাকরি বিক্রির এজেন্টরাও আসতেন। টেট এবং নবম–দশম শ্রেণির চাকরিপ্রার্থীদের নামের তালিকা–সহ ওএমআর শিটের কপি, বিপুল পরিমাণ টাকা এখানে জমা পড়ত। কিন্তু কে এই টলিউড নায়িকা সেই নাম প্রকাশ্যে আনেনি ইডি। তবে তলব করলেই নাম সামনে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে। যা নিয়ে এখন জোর চর্চা শুরু হচ্ছে।
কেমন ছিল অয়নের জীবনযাপন? তদন্তে নেমে ইডি জানতে পেরেছে, লক্ষ লক্ষ টাকা নগদ হাতে আসতেই অয়নের চালচলন বদলে যায়। জমি–ফ্ল্যাট এবং নিত্যনতুন গাড়ি কেনা অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছিলেন শীল মহাশয়। দুর্নীতি চক্রের চাঁইদের নিয়ে বেশি রাত পর্যন্ত বৈঠক করতেন এই প্রোমোটার। বৈঠক শেষে চলত চব্য–চষ্য খানাপিনা ও মোচ্ছব। সেখান থেকেই কয়েকজন উচ্চাকাঙ্খী যুবতীকে বিভিন্ন ছবিতে সুযোগ করে দেন অয়ন শীল। তখন থেকেই টলিপাড়ার ওই জনপ্রিয় নায়িকার সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়। ওই নায়িকাকে নিয়ে অয়ন শীল দেশ–বিদেশের নানা জায়গা ভ্রমণে গিয়েছিলেন। অয়নের ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট ঘেঁটে ওই নায়িকার সঙ্গে অয়নের নিয়মিত আর্থিক লেনদেন পেয়েছেন ইডি অফিসাররা। প্রাথমিকভাবে ২৫ লক্ষ টাকার লেনদেনের তথ্য তাদের হাতে এসেছে।