‘থিয়েটার কখনও মরবে না’

যারা মঞ্চে অভিনয় করে, তারা এখনও এ অভিনয়কে পেশা হিসেবে নিতে পারেনি। জীবন-জীবিকার তাগিদে তাকে অন্য পেশার সঙ্গে যুক্ত থেকে মঞ্চে অভিনয়জগৎটা ঠিক রাখতে হচ্ছে। ঢাকার বাইরে যারা মঞ্চ অভিনয়ের সঙ্গে জড়িত, তারা টিভি-রেডিওতে সুযোগ পান কম। দীর্ঘদিন ধরে এখানে অডিশন হয় না।

বাংলা ট্রিবিউনকে এসব কথা বলেছেন চট্টগ্রামের বিশিষ্ট মঞ্চ অভিনেত্রী সাবিরা সুলতানা বিনা।

তিনি বলেন, একসময় মঞ্চ শিল্পীদের জোয়ার ছিল। তাদের কদর ছিল। নব্বই দশকের পর তাতে যেন ভাটা পড়েছে। তবে এ সময় এসে নাটকের দল বেড়েছে ঠিকই। আমি যখন ’৮৩ সালের দিকে মঞ্চ নাটকে অভিনয় করতাম, তখন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও দর্শক হিসেবে ছিলেন। আমরা এখন সেসব দর্শক হারিয়ে ফেলেছি।

চট্টগ্রামে মঞ্চ শিল্পীদের অনেক সীমাবদ্ধতাও রয়েছে উল্লেখ করে সাবিরা সুলতানা বলেন, নাটক মঞ্চায়নের জন্য মঞ্চ রয়েছে জেলা শিল্পকলা একাডেমি এবং চট্টগ্রাম থিয়েটার ইনস্টিটিউটে। তবে জেলা শিল্পকলা একাডেমির মঞ্চটি অনেক পুরনো। সময়ের সঙ্গে এ মঞ্চের নতুনত্বের ছোঁয়া লাগেনি।

একুশে পদকপ্রাপ্ত নাট্যজন ও চট্টগ্রাম থিয়েটার ইনস্টিটিউটের পরিচালক আহমেদ ইকবাল হায়দার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, থিয়েটার করে জীবন-জীবিকার ব্যয় মেটানো যায় না ঠিকই। এরপরও থিয়েটার কখনও মরবে না। স্বাধীনতা-পরবর্তী এ দেশে নাট্যচর্চা অনেক এগিয়েছে। বিশ্ব নাট্যে বাংলাদেশ অবস্থান গড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় নাট্যকলা বিভাগ খোলা হয়েছে। প্রতিবছর অনেক ছাত্র সেখান থেকে বের হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, আমার হাত ধরে চট্টগ্রামসহ সারা দেশে ৫ থেকে ৬ হাজার নাট্যকর্মীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। শর্ট কোর্স ও দীর্ঘমেয়াদি কোর্সের মাধ্যমে এ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। নতুন প্রজন্মের অনেকেই থিয়েটারের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। তবে নতুন প্রজন্মের বেশির ভাগই থিয়েটারে টিকছে কম। তাদের অনেকেরই লেখাপড়ার চাপ রয়েছে। আগে সারা বছর মিলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় একবার পরীক্ষা হতো। এখন সারা বছরই পরীক্ষা থাকে। যে কারণে নতুন প্রজন্ম লেখাপড়ার চাপে থিয়েটার চর্চায় সময় কম দিতে পারে।

মঞ্চ নাটকে চট্টগ্রামের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, চট্টগ্রামে গ্রুপ থিয়েটার চর্চার ৫০ বছর হয়েছে। অর্থাৎ ১৯৭৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ‘থিয়েটার-৭৩’ নাট্যদলের দুটি নাটক মঞ্চায়নের মধ্য দিয়ে চট্টগ্রামে শুরু হয়েছিল থিয়েটার চর্চার আনুষ্ঠানিকতা। সে পথ ধরে চট্টগ্রামে এখন ২৫ থেকে ৩০টি নাট্যদল কাজ করছে। নাটকও হচ্ছে বেশি।

চট্টগ্রাম জেলা কালচারাল অফিসার মো. মোসলেম উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, জেলা শিল্পকলার অধীনে ছয়টি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। যার মধ্যে রয়েছে নাচ, গান, আবৃত্তি, নাট্যকলা, অভিনয় ও চারুকলা। এসব প্রশিক্ষণের মধ্যে কোনোটি তিন বছর আবার কোনোটি দুই বছরের। চট্টগ্রামে দিন দিন নাট্যচর্চাসহ সাংস্কৃতি অঙ্গনের পরিধি বেড়েছে। শিল্পকলায় প্রতিদিন অনুষ্ঠানাধি থাকে। চট্টগ্রামে ৩০টির মতো নাট্যদল, ৩০-৪০টির মতো আবৃত্তি সংগঠন রয়েছে।