সেন্সর বোর্ডে নতুন কমিটি, পাওয়া গেলো বিলুপ্তির ইঙ্গিত

সেন্সরের জাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে বহু সিনেমা ডুবে গেছে অতল গহ্বরে। কিছু সিনেমা বছরের পর বছর ধরে শুধু ছাড়পত্রের অপেক্ষায় ঝুলে আছে। গল্প-নির্মাণের ওপর সেন্সর বোর্ডের কাঁচি শিল্পের স্বাধীনতায় সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা বলেই মনে করেন বেশিরভাগ নির্মাতা। তাই দীর্ঘ দিন ধরে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের দাবি, সেন্সর বোর্ড বিলুপ্ত করা হোক। এর পরিবর্তে চালু করা হোক সার্টিফিকেশন ব্যবস্থা, যা বিশ্বজুড়ে প্রচলিত।

এবার সেই শুভ ইঙ্গিতই পাওয়া গেলো। শিগগিরই দেশের সিনেমায় সার্টিফিকেশন ব্যবস্থা চালু হবে বলে বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন সেন্সর বোর্ডের নতুন কমিটির সদস্য ও প্রযোজক খোরশেদ আলম খসরু। তার মতে, বর্তমানে সার্টিফিকেশনের নীতিমালা তৈরির কাজ চলছে।

মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের নতুন কমিটির তালিকা প্রকাশ করেছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। ১৯৬৩ সালের সেন্সরশিপ আইনের ধারা ৩ এবং ১৯৭৭ সালের বাংলাদেশ সেন্সরশিপ অব ফিল্মস রুলসের বিধি ৪ মোতাবেক আগামী ১ বছরের জন্য দায়িত্ব পালন করবেন নতুন সদস্যরা। বরাবরের মতো বোর্ডের চেয়ারম্যান থাকছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব। 
সদস্য হিসেবে সিনেমা অঙ্গন থেকে আছেন অভিনেত্রী সুজাতা আজিম, নির্মাতা-প্রযোজক দেওয়ান নজরুল, প্রযোজক খোরশেদ আলম খসরু, অভিনেত্রী রোজিনা ও অরুণা বিশ্বাস এবং অভিনেত্রী-সাংবাদিক ফাল্গুনী হামিদ।

সেন্সর বোর্ডে এই নিয়ে চারবার সদস্য হলেন প্রযোজক খোরশেদ আলম খসরু। এর আগে ২০১৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত টানা তিনবার তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। পুনরায় এ দায়িত্ব পেয়ে সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানালেন। সেই সঙ্গে শুভাকাঙ্ক্ষীদের দিলেন ধন্যবাদ।

সেন্সর বোর্ড নিয়ে বিতর্ক-সমালোচনার অন্ত নেই। ছাড়পত্রের দীর্ঘসূত্রিতা কিংবা নিষিদ্ধের গ্যাঁড়াকলে বন্দী নির্মাতারা। এ বিষয়ে নতুন কোনও পদক্ষেপ নেবেন কিনা জানতে চাইলে খসরু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি বরাবরই দায়িত্বশীল ভূমিকা রেখেছি। সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি কোনও সিনেমা যেন আটকে না থাকে। শুধু বোর্ডের সদস্য হিসেবে নয়, ব্যক্তিগত পর্যায়েও আমি নির্মাতা-প্রযোজকদের সহযোগিতা করেছি। এবারও সচেষ্ট থাকবো, যেহেতু আমি প্রযোজকদের নেতৃত্ব দিচ্ছি, তাদের পক্ষে থাকার এবং কথা বলার চেষ্টা করবো।’

বিভিন্ন দেশে এখন আর সেন্সর বোর্ড ব্যবস্থা নেই। বরং সার্টিফিকেশন বোর্ড রয়েছে। যেখান থেকে ছবির গ্রেড অনুসারে সার্টিফিকেট দেওয়া হয়। বাংলাদেশেও এই ব্যবস্থা চালুর জন্য দাবি জানিয়ে আসছেন নির্মাতা-প্রযোজকরা। 

এ প্রসঙ্গে খসরুর বক্তব্য, ‘সেন্সর বোর্ডে মনোনীত হলেও আমাদের দীর্ঘ দিনের দাবি, সেন্সর বোর্ড চাই না। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত এতো বড় একটা রাষ্ট্র, সেখানেও সেন্সর বোর্ড নেই, সার্টিফিকেশন বোর্ড আছে। এটাই হলো সময়োপযোগী ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থায় কোনও ছবি নিষিদ্ধ হবে না, শত শত কাটিং দেওয়া হবে না। যিনি যেমন ছবি নির্মাণ করবেন, তার ছবির মান অনুযায়ী বোর্ড সেভাবে গ্রেডিং করবে। এটাই এখন বিশ্বজুড়ে প্রচলিত।’

কথার শেষে সেন্সর বোর্ড বিলুপ্তির খবরও দিলেন খসরু। তার ভাষ্য, ‘ইতোমধ্যে সার্টিফিকেশন বোর্ডের বিষয়টি পাশ হয়েছে। এখন নীতিমালা নিয়ে কাজ চলছে। শিগগিরই সেন্সর বোর্ড বিলুপ্ত হয়ে সার্টিফিকেশন বোর্ড হবে। সরকার এ ব্যাপারে ইতিবাচক ভূমিকা সবসময়ই রেখেছে।’

খোরশেদ আলম খসরু সেন্সর বোর্ডের নতুন কমিটিতে সদস্য হিসেবে আরও আছেন- চলচ্চিত্র গবেষক অনুপম হায়াৎ, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সচিব, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (চলচ্চিত্র), স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের প্রতিনিধি, চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি। 

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, আগামী ১৬ এপ্রিল থেকে এটি কার্যকর হবে। 

একই দিন (২৮ মার্চ) ফিল্ম সেন্সর আপিল কমিটিও পুনর্গঠন করা হয়েছে। এতে সভাপতির দায়িত্ব পালন করবেন মন্ত্রীপরিষদ সচিব। সদস্য হিসেবে আছেন অভিনেত্রী সুবর্ণ মুস্তাফা, নির্মাতা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু, অভিনেতা তারিক আনাম খান এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (অবসরপ্রাপ্ত) মোঃ নুরুল করিম। কমিটির আহ্বায়ক পদে রয়েছেন সেন্সর বোর্ডের চেয়ারম্যান। প্রজ্ঞাপনের তারিখ (২৮ মার্চ) থেকে এই কমিটি আগামী দুই বছর দায়িত্ব পালন করবে।