আবারও দখল হয়েছে ফুটপাত, শুকিয়ে গেছে টবের গাছগুলো

এক ব্যস্ত নগরী কুমিল্লা। চারদিকে উড়ছে বালি। বাজছে রিকশার বেল। সঙ্গে অটোরিকশার হর্ন। ফুটপাতগুলো দখলে। মোড়ে মোড়ে বাহনের জটলা। এই নগরীর নিত্যদিনের দৃশ্য এটি। তবে এই শহরকে পরিচ্ছন্ন, দখলমুক্ত আর সবুজ নগরী গড়ার প্রচেষ্টা চালিয়েছেন কেউ কেউ। তাদের একজন কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের সাবেক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবু সাঈদ।

জেলা প্রশাসনের হয়ে ২০২১ সালের জানুয়ারিতে কুমিল্লার প্রাণকেন্দ্র কান্দিরপাড় ও আশপাশের এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে দখলমুক্ত করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবু সাঈদ। পরে ভলান্টিয়ার্স ফর বাংলাদেশ (ভিবিডি) নামক একটি সংগঠনের সহযোগিতায় টাউনহলের নিরাপত্তা বেষ্টনিতে প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে বানানো টবে ঝুলিয়ে দেন সবুজ গাছ। সতেজতার এক নতুন প্রাণ দেন কান্দিরপাড়কে। ধন্যবাদ, সাধুবাদ আর ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে ওঠেন তিনি। তবে তার বিদায়ের পর কী হয়েছিল তার এই অভিযানের, তা দেখতে পরিদর্শন করা হয় কুমিল্লা শহরের কান্দিরপাড় ও আশপাশের এলাকা।

কান্দিরপাড় এলাকায় দেখা যায়, প্লাস্টিকের খালি টবগুলো ঝুলছে। কোনোটি সোজা আছে, কোনোটির দড়ি ছিঁড়ে উল্টে পড়েছে। একটি টবের মধ্যেও জীবন্ত গাছ নেই। সব গাছ শুকিয়ে গেছে। গজিয়েছে ঘাস। আবার সেই ঘাসও শুকিয়েছে বহুদিন। অনাথ শিশুর মতো পরিচয়হীনভাবে পড়ে আছে বোতলগুলো। ফুটপাত দখলের কারণে হাঁটতেও বেগ পাচ্ছে সাধারণ মানুষ। আর টাউন হলের ভেতরে যেই স্থানগুলো নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দখলমুক্ত করে গাছ লাগিয়েছেন, সেই গাছগুলোও যেন আর্তচিৎকার করছে বাঁচার জন্য।

বিভিন্ন সূত্র জানায়, কুমিল্লা টাউন হলের সামনের সড়কের ফুটপাত দখল করে ব্যবসা করেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও হকাররা। বিভিন্ন সময়ে সেখানে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হলেও রাজনৈতিক নেতাদের মদতে আবারও দখল হয় ফুটপাত। এতে পথচারীদের পথ চলতে বেগ পেতে হয়।

টবগুলোর কোনোটি সোজা আছে, কোনোটির দড়ি ছিঁড়ে উল্টে পড়েছে ভলান্টিয়ার্স ফর বাংলাদেশের (ভিবিডি) কুমিল্লা শাখার কমিটির সদস্য কাজী সাদিয়া আফসানা নিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কান্দিরপাড় একটি সংকুচিত জায়গা। এখানে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ভিড় করেন। এতে জায়গাটি আরও সংকুচিত হয়ে যায়। সংকুচিত জায়গাটি আবার দখলও হয়! আমরা রাণীরকুঠিরের পাশে বোতলে গাছ লাগিয়েছিলাম। তা চোখে পড়ে ম্যাজিস্ট্রেট আবু সাঈদের। পরে তিনি আমাদের বলেন, টাউন হলে যেন এভাবে গাছ লাগাই। তিনি আমাদের মাটি ও গাছের ব্যবস্থা করে দেন। আমরা প্রায় এক সপ্তাহের চেষ্টায় এই কাজ শেষ করলেও তা পরের এক সপ্তাহও থাকেনি। আবার দখল হয় ফুটপাত। আমাদের কষ্ট মাটি হয়ে যায় কয়েকদিনের মধ্যেই। কেউ সেগুলোর পরিচর্যা করেনি। এটি দুঃখজনক!’

মরে গেছে ঘাস এ বিষয়ে কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) পঙ্কজ বড়ুয়া বলেন, ‘আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেবো।’

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র আরফানুল হক রিফাত বলেন, ‘সিটি করপোরেশন সব সময় দখলের বিরুদ্ধে। কুমিল্লাকে আরও সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন নগরীতে রূপান্তরিত করতে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। শিগগিরই আমরা কুমিল্লা-৬ আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, কুমিল্লার সাংবাদিকবৃন্দসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে বসে আলোচনা করে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করবো।’