উদ্বোধনের পর উধাও স্বাস্থ্য সচিবের এলাকার বৈকালিক দুই চিকিৎসক

উদ্বোধনের পর বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে উধাও হয়ে যান বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের দুই চিকিৎসক। বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) বিকালে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে রোগী দেখার দায়িত্ব ছিল নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞ কনসালট্যান্ট ডা. মিজানুর রহমান এবং গাইনি কনসালট্যান্ট মশিউর রহমানের। কিন্তু উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর তারা রোগী না দেখে চলে গেছেন।

বিকাল ৩টার দিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ভার্চুয়ালি স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। পাইলট প্রকল্প হি‌সে‌বে আগৈলঝাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে বেছে নেওয়া হয়েছিল। কারণ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার এই উপজেলার সন্তান। এজন্য এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছিল।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রইচ সেরনিয়াবাত, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বখতিয়ার আল মামুন। তারা ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সেবার বিষয়ে কথা বলেছেন। 

এতে আরও উপস্থিত ছিলেন বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হুমায়ুন শাহীন খান, সিভিল সার্জন ডা. মারিয়া হাসান, আগৈলঝাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম ছরোয়ার, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ওই দুই চিকিৎসক এবং নার্স।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর বিকাল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত রোগী দেখার কথা ছিল ডা. মিজানুর রহমান এবং মশিউর রহমানের। কিন্তু ওই সময় তাদের কক্ষ তালাবদ্ধ দেখা যায়।

আরও পড়ুন: কু‌ড়িগ্রামে চি‌কিৎসক সংকট নি‌য়ে শুরু হ‌লো বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অন্যান্য দিনের মতো ডা. মিজানুর রহমান প্রাইভেট প্র্যাকটিস করতে গৌরনদী উপজেলার আলফা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চলে যান। পাশাপাশি ডা. মশিউর রহমান নিজ বাসা বরিশাল নগরীতে চলে যান।

এদিকে, বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের সেবা নিয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে বিকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান স্থানীয় সংবাদকর্মীরা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর বিকাল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত ওই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অবস্থান করেন তারা। কিন্তু দুই চিকিৎসকের একজনও ছিলেন না। তাদের কক্ষের দরজায় ঝুলছিল তালা।

এ সময় জরুরি বিভাগের চিকিৎসক অতনু রিনা চৌধুরী লোপা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উপস্থিত ছিলেন। এ বিষয়ে কোনও কথা বলতে রাজি হননি তিনি।

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বখতিয়ার আল মামুন বলেন, ‘উদ্বোধনী দিনে বৈকালিক চিকিৎসাসেবার দায়িত্বে ছিলেন ডা. মিজানুর রহমান ও মশিউর রহমান।’

দুই ঘণ্টা ধরে তাদের কক্ষে তালা ঝুলছে, তারা কোথায়—এমন প্রশ্নের জবাবে বখতিয়ার আল মামুন বলেন, ‘আরও পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করেন। তারা আসবেন।’ 

তার কথামতো আরও আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করলেও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেননি দুই চিকিৎসক। একপর্যায়ে এমন সংবাদ না করার অনুরোধ করেন বখতিয়ার আল মামুন। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তখনও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাননি দুই চিকিৎসক। ফলে রোগীরা ফিরে যান।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলা সিভিল সার্জন ডা. মারিয়া হাসান বলেন, ‘এমনটি হওয়ার কথা ছিল না। খোঁজখবর নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেবো।’ তবে কী ধরনের নির্দেশনা দেবেন জানতে চাইলে কোনও জবাব দেননি সিভিল সার্জন।

আরও পড়ুন: মানিকগঞ্জে বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা, প্রথমদিন চিকিৎসা নিলেন ৭ রোগী

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবার আওতায় অফিস সময়ের পর নির্ধারিত ফি’র বিনিময়ে বিকাল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কর্মস্থলে রোগী দেখবেন চিকিৎসকরা। এতে রোগীরা পাবেন কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসাসেবা। চিকিৎসার পাশাপাশি এই সময়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নির্ধারিত হারে ফি পরিশোধ করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করারও সুযোগ পাবেন রোগীরা।

এক্ষেত্রে নার্স ও টেকনিশিয়ানরা সপ্তাহে দুই দিন কাজ করবেন। বৈকালিক এই সেবায় চিকিৎসার পাশাপাশি ছোটখাটো সার্জারি, ডায়াগনস্টিক, ক্লিনিক্যাল, প্যারাক্লিনিক্যাল টেস্টসহ বিভিন্ন পরীক্ষার জন্য মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে খরচের একটি অংশ পাবে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।