দেশ পরিচিতি: ইউক্রেন

১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের মাধ্যমে জন্ম হয় স্বাধীন রাষ্ট্র ইউক্রেনের। স্বাধীনতার পর থেকেই দেশটি পশ্চিম ইউরোপের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরির আগ্রহকে রাশিয়া নিজ স্বার্থের জন্য হুমকি হিসেবে দেখে আসছে। ফলে ইউরোপের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই দেশটিকে বরাবরই নিজ বলয়ের দিকে টানার চেষ্টা করেছে মস্কো। প্রশস্ত ও উর্বর কৃষি সমভূমি ছাড়াও দেশটির পূর্ব দিকে সম্ভাবনাময় বিশাল শিল্পাঞ্চল রয়েছে।

ইউক্রেনের পূর্ব দিকে রাশিয়া ও পশ্চিম দিকে সার্বিয়া, পোল্যান্ডসহ পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলো রয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে জাতিগত দিক থেকে মিল থাকায়, দেশটির পশ্চিমাংশের সঙ্গে ইউরোপীয় মিত্র দেশগুলোর ঘনিষ্ঠতা কিছুটা বেশি। দেশটির জাতীয়তাবাদী অনুভূতি বেশ তীব্র।

দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় শিল্পোন্নত শহরসহ সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ রুশ ভাষায় কথা বলে। ২০১৪ সালে বিক্ষোভের মাধ্যমে রুশপন্থী প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচকে অপসারণের পর থেকে দেশটিতে পশ্চিমাপন্থী সরকারের শাসন শুরু হয়। 

তবে দেশটির ক্রিমিয়া উপদ্বীপ দখলের সুযোগ ছাড়েনি রাশিয়া। ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখলের পরে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় শহরগুলো দখলের চেষ্টায় ছিল রুশ সরকার। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে দেশটিতে পুরোদমে আগ্রাসন চালানো শুরু করে রাশিয়া।

গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

নাম: ইউক্রেনীয় প্রজাতন্ত্র

রাজধানী: কিয়েভ

আয়তন: ৬ লাখ ৩ হাজার ৫০০ বর্গ কিলোমিটার

জনসংখ্যা: ৪ কোটি ৩৫ লাখ

গড় আয়ু: পুরুষের ৬৮ বছর, নারীর ৭৭ বছর

নেতৃত্ব

বর্তমানে ইউক্রেনের নেতৃত্বে আছেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে টেলিভিশনে একটি কৌতুক অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্টের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তিনি। সেখান থেকেই তিনি জনপ্রিয়তা লাভ করেন। এরপর ২০১৯ সালে তার সার্ভেন্ট অব দ্য পিপল পার্টি নির্বাচনে জয়ী হওয়ার মাধ্যমে দেশটির কার্যনির্বাহী ও আইনসভার নিয়ন্ত্রণ লাভ করেন তিনি।

প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর প্রথম ভাষণে পূর্বাঞ্চলীয় এলাকা থেকে রুশ দখলদারিত্ব অবসানের প্রতি গুরুত্বারোপ করেন জেলেনস্কি। ২০২২ সালে দেশটিতে রুশবিরোধী প্রতিরোধে নেতৃত্ব দিয়ে বিশ্বব্যাপী আলোচনায় আসেন তিনি।

রাশিয়ার আক্রমণের পরে দেশটিতে সামরিক আইন জারি করেন জেলেনস্কি। সংকট কালে দেশটির নেতৃত্বে অবিচল থাকায় বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হচ্ছেন তিনি। ইউক্রেনীয় প্রতিরোধের প্রতীক হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় তাকে।

রাশিয়ার দখলকৃত ক্রিমিয়ায় বন্ধ ইউক্রেনীয় টেলিভিশনের সম্প্রচার। ছবি: ইপিএ

সংবাদমাধ্যম

পূর্বাঞ্চলীয় এলাকায় সশস্ত্র যুদ্ধ ও রুশবাহিনী ক্রিমিয়া দখলের পর থেকে দেশটির রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যমগুলো বিষয়টিকে এজেন্ডা হিসেবে গ্রহণ করেছে। রুশভিত্তিক সংবাদমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে দেশটি। কিছু রুশভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ওয়েবসাইটও নিষিদ্ধ করেছে দেশটির সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

দেশটির ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ কিছু ঘটনা

১৯১৮: রুশ বিপ্লবের পরে ইউক্রেন স্বাধীনতা ঘোষণা করে।

১৯২১: রাশিয়ান রেড আর্মি ইউক্রেনের দুই-তৃতীয়াংশ দখল করে নিলে দেশটিতে সোভিয়েত শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৯৩২: রুশ প্রেসিডেন্ট জোসেফ স্ট্যালিনের সমষ্টিকরণ প্রচারণায় দেশটির অন্তত ৭০ লাখ কৃষক মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষের কবলে পড়ে।

১৯৪১-৪৪: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে নাৎসি বাহিনীর দখলদারিত্বে দেশটি ধ্বংসযজ্ঞের শিকার হয়।

১৯৪৫: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্রপক্ষের বিজয়ে পশ্চিম ইউক্রেনীয় ভূখণ্ড চূড়ান্তভাবে সোভিয়েত অধিগ্রহণে চলে যায়।

১৯৮৬: চেরনোবিল পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি চুল্লি বিস্ফোরিত হয়, যা পুরো ইউরোপজুড়ে তেজস্ক্রিয়তা ছড়ায়।

১৯৯১: সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের মাধ্যমে স্বাধীন ইউক্রেন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়।

কিয়েভের সেন্ট সোফিয়া ক্যাথেড্রাল। ছবি: রয়টার্স

২০০৪: কমলা বিপ্লবের ফলে দেশটির পশ্চিমাপন্থী সরকারে বদল আসে।

২০১৪: ইউক্রেনীয় বিপ্লবের ফলে ইউক্রেনে ক্রেমলিনপন্থী সরকারের পতন হয়। রাশিয়া ইউক্রেনের ক্রিমিয়া উপদ্বীপ দখল করে এবং পূর্বাঞ্চলীয় ভূখণ্ড দখলের চেষ্টা চালায়।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি: ইউক্রেনে সর্বাত্মক আক্রমণ শুরু করে রাশিয়া। ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী রুশ বাহিনীকে প্রতিরোধের চেষ্টা করে। প্রথমেই ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় বিশাল অংশ দখল করে নেয় রাশিয়া।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি-এপ্রিল: ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ দখলের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয় রুশ সেনারা।

২০২২ সালের আগস্ট-নভেম্বর: দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় এলাকায় পাল্টা আক্রমণ করে রুশ দখলকৃত খেরসন শহর পুনরুদ্ধার করে ইউক্রেন।

সূত্র: বিবিসি