১৩ বছর ধরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয় না পূর্বাঞ্চল রেলের ল্যাবে

১৩ বছর ধরে যন্ত্রপাতির পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয় না পূর্বাঞ্চল রেলের ল্যাবে। বছরের পর বছর এই ল্যাব ব্যবহার না হওয়ায় অকেজো হয়ে যাচ্ছে যন্ত্রপাতি। অথচ রেলওয়ের জন্য সরবরাহকৃত যাবতীয় মালামালের গুণগত মান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এই ল্যাবে পরীক্ষা পদ্ধতি চালু করা হয়েছিল। ব্যবহারের আগে ল্যাবটিতে রেলের যন্ত্রপাতি পরীক্ষার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১০ সাল পর্যন্ত রেলওয়ের জন্য সরবরাহকৃত সব ধরনের মালামাল এই ল্যাবে পরীক্ষা করা হতো। এরপর থেকে পরীক্ষা তেমন হয় না। মাঝেমধ্যে ছোটখাটো যন্ত্রপাতি পরীক্ষা করা হয়। এ সুযোগে পরীক্ষা না করে ব্যবহার অনুপযোগী যন্ত্রপাতি সরবরাহ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো—এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, নিম্নমানের মালামাল সরবরাহ ঠেকাতে ১৯৫৮ সালে নিজস্ব ল্যাব স্থাপন করে রেলওয়ে। প্রতিষ্ঠার পর প্রথম দিকে ল্যাবে লুব অয়েল পরীক্ষা করা হলেও ১৯৬৬ সাল থেকে এর পরিধি বাড়ানো হয়। ওই বছর থেকে ল্যাবে ক্লথলেদার আর্টিফিশিয়াল, হোস পাইপ, রাবার আইটেম, এম এস শিট, এস এস শিট, এস এস রাউন্ড, হেক্সাগোনাল, স্টিল স্প্রিং সিলিকো ম্যাঙ্গানিজ, ফ্লোরিং কম্পোজিশন, রং ও বিভিন্ন কেমিক্যালসহ সব ধরনের মালামাল পরীক্ষার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পূর্বাঞ্চল রেলের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ল্যাবে পরীক্ষার মাধ্যমে যন্ত্রপাতি কেনা হলে নিম্নমানের মালামাল সরবরাহ কমতো। এখন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই মালামাল নেওয়া হচ্ছে। এতে রেলে নিম্নমানের মালামাল সরবরাহ বাড়ছে। এ সুযোগ নিচ্ছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো।

তবে ল্যাবে আধুনিক যন্ত্রপাতির ঘাটতি থাকায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা কম হচ্ছে বলে জানালেন রেলওয়ে ল্যাবের সহকারী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘ল্যাবে আধুনিক যন্ত্রপাতির ঘাটতি আছে। যেসব যন্ত্রপাতি আছে সেগুলো পুরনো। অনেক যন্ত্রপাতি ব্যবহার অযোগ্য।’

সরেজমিনে নগরীর পাহাড়তলী এলাকায় রেলওয়ের ল্যাবে দেখা গেছে, অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে যন্ত্রপাতি। এসব যন্ত্রপাতির বেশিরভাগই পাকিস্তান আমলে কেনা। এর মধ্যে অধিকাংশ অকেজো। কিছু কিছু যন্ত্রপাতি বছরের পর বছর ব্যবহার না করায় অকেজো হয়ে পড়ে আছে।

এ বিষয়ে ল্যাবের প্রধান কেমিস্ট সৈয়দ সজীব আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রেলওয়ের জন্য যেসব মালামাল কেনা হয়, সেগুলোর মান যাচাইয়ের জন্য ল্যাব চালু করা হয়েছে। এই ল্যাবে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ মালামাল গ্রহণের কথা রয়েছে রেলওয়ের। এখন পরীক্ষা-নিরীক্ষা তেমন হয় না। কেন হয় না, তা আমার জানা নেই। তবে পরীক্ষা করে নিলে যে মানের মালামাল পাওয়া যায়, পরীক্ষা না হলে সে মানের মালামাল পাওয়া যায় না।’

তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে ল্যাবে একজন সহকারী পরিচালক, একজন  কেমিস্ট, একজন ল্যাব কেমিস্ট ও ল্যাব খালাসি কর্মরত আছেন।’  

রেলওয়ের জন্য সরবরাহকৃত যাবতীয় মালামালের গুণগত মান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এই ল্যাবে পরীক্ষা পদ্ধতি চালু করা হয়েছিল

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ল্যাবের দুই জন কর্মকর্তা জানান, ২০১০ সালের আগ পর্যন্ত ল্যাবে কর্মরতদের দম ফেলার সময় ছিল না। তখন বছরে এক হাজার ২০০ থেকে দেড় হাজার যন্ত্রাংশ পরীক্ষা করা হতো। এখন কমে গেছে। এখন প্রতি মাসে পাঁচ-ছয়টি করে পরীক্ষা হয়। একসময় রেলওয়ের মালামাল কেনার আগে ল্যাবে পরীক্ষা করা হতো। যেসব মালামাল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতো না সেগুলো কেনা হতো না। গত কয়েক বছর পরীক্ষা হয় না।’

কেন পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয় না জানতে চাইলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান যন্ত্র প্রকৌশলী তাপস কুমার দাস বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি গত ৭ ফেব্রুয়ারি এখানে যোগ দিয়েছি। এখনও ল্যাব পরিদর্শন করিনি। ল্যাবে কী সমস্যা আছে, আগে তা জানতে হবে। জেনে পরে ব্যবস্থা নিতে হবে।’

পরীক্ষা ছাড়াই যন্ত্রপাতি কেনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যেসব যন্ত্রপাতি ল্যাবে পরীক্ষা করা সম্ভব হয় না, সেগুলো বাইরের ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়। যেমন বুয়েট, কুয়েট, চুয়েট থেকে পরীক্ষা করা হয়। মান ঠিক থাকলে কেনা হয়।’