NCERT Syllabus: এবার সিলেবাস থেকে বাদ পড়ল মুঘল যুগ, ‘‌ভয়ঙ্কর সিদ্ধান্ত’‌ গর্জে উঠলেন ব্রাত্য

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখে গিয়েছেন, ‘শক হূণ দল পাঠান মোঘল এক দেহে হল লীন।’ সেই দেহের নাম ভারতবর্ষ। যেখানের কৃষ্টি–সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে বহুত্বের মধ্যে ঐক্য বা ইউনিটি ইন ডাইভারসিটিতে। সেখানে নরেন্দ্র মোদীর জমানায় দেশের একের পর এক রেলস্টেশন এবং শহরের নাম বদলে দিতে দেখা গিয়েছে। এবার দেশের ইতিহাসকে মুছে দেওয়ার কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে। কেন্দ্রীয় স্কুলের সিলেবাস থেকেই বাদ দিয়ে দেওয়া হল বাবর–আকবর–শাহজাহানের মুঘল যুগের ইতিহাস। আর এই নিয়ে এখন আলোড়ন পড়েছে দেশের সর্বত্র। গর্জে উঠেছেন বাংলার শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু।

এদিকে কেন্দ্রচালিত বিদ্যালয়, আর্মি স্কুল, সেন্ট্রাল স্কুল–সহ সিবিএসই অনুমোদিত স্কুলগুলির দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্যক্রমে আর এই অধ্যায় থাকবে না। ইতিহাস বই থেকেই সম্পূর্ণ বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ন্যাশনাল কাউন্সিল অব এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং (এনসিইআরটি)। ২০২৩–২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকেই চালু হচ্ছে এই নয়া সিলেবাস। উত্তরপ্রদেশ বোর্ডেও তা কার্যকর হবে। এবার তারা ইতিহাস বইয়ের পাতা থেকে বাদ যাচ্ছে মুঘলপর্বই। এই ঘটনাকেই বাংলার শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু ‘ভয়ঙ্কর সিদ্ধান্ত’ বলে এই ঘটনাকে চিহ্নিত করেছেন।

অন্যদিকে ২০২৩–২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকেই চালু হচ্ছে নয়া সিলেবাস। যেখানে জায়গা পাবেন না বাবর, হুমায়ুন, আকবর, জাহাঙ্গীর, শাহজাহান, ঔরঙ্গজেব। হারিয়ে যাচ্ছে তাজমহল, ফতেপুর সিক্রি, লালকেল্লার ইতিহাস। একইসঙ্গে সরে যাবে মনসবদারী প্রথা, দীন–ই–ইলাহী, নওরোজের ইতিহাস। আর হারিয়ে যাবেন বীরবল, তানসেন, মানসিংহরা। দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস বই থেকে ছেঁটে ফেলা হচ্ছে ‘কিংস অ্যান্ড ক্রনিকলস: দ্য মোগল কোর্টস’ শীর্ষক অধ্যায়। সমাজবিজ্ঞান এবং হিন্দি সাহিত্যের বই থেকে পর্যন্ত বাদ পড়তে চলেছে বেশ কিছু অধ্যায়। সমাজবিজ্ঞান বইতে থাকছে না বিশ্ব রাজনীতিতে মার্কিন প্রভাব সংক্রান্ত (আমেরিকান হেজিমনি ইন ওয়ার্ল্ড পলিটিক্স) অধ্যায়। রাশিয়া ও আমেরিকার বিখ্যাত ঐতিহাসিক ঠান্ডা যুদ্ধের বিবরণও (দ্য কোল্ড ওয়ার এরা) বাদ যাচ্ছে। ‘স্বাধীনতার পর ভারতের রাজনীতি’ সংক্রান্ত পরিচ্ছদ আর থাকবে না। সিলেবাসে ‘সেন্ট্রাল ইসলামিক ল্যান্ডস’ অথবা ‘শিল্পবিপ্লব’ সংক্রান্ত অধ্যায়ও আর রাখা হবে না বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

আর কী জানা যাচ্ছে?‌ রাজস্থানে বিজেপি ক্ষমতায় থাকার সময় স্কুল সিলেবাসে হলদিঘাটের যুদ্ধে রাণা প্রতাপই আসলে বিজয়ী হয়েছিলেন বলে লেখা হয়। এখন সমালোচকরা বলছেন, তারই পুনরাবৃত্তি হচ্ছে জাতীয়স্তরে। এই ঘটনায় সরব হয়েছেন বাংলার শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। তিনি বলেন, ‘ভয়ঙ্কর সিদ্ধান্ত। এবার তুর্কি, আফগানদের নিয়েও প্রশ্ন উঠবে। বাংলার ইলিয়াস শাহীদের নিয়েও কী করবে জানি না। ৪০০ বছরের ইতিহাস বাদ দিতে চাইছে। তার বিকল্প হিসেবে কী দেবে? সর্বস্তরে প্রতিবাদ হওয়া দরকার এই ঘটনার। ভারতের ইতিহাস ভুলিয়ে দিতে চাইছে কেন্দ্র। মুঘল শাসনকে বাদ দিয়ে কি ভারতের ইতিহাস বোঝা সম্ভব? ওরা একটা সময় বলতে শুরু করবে ভারতের ইতিহাস শুরু হয়েছে ২০১৪ সালে, মোদী ক্ষমতায় আসার পর।’