থানায় আটকে ব্যবসায়ীকে মারধর, ওসিসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা

নাটোরে জোর করে টাকা আদায়ের দাবিতে থানায় আটকে মারধরের অভিযোগে বাগাতিপাড়া মডেল থানার ওসি, দুই এসআইসহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন এক ব্যবসায়ী। মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) দুপুরে ব্যবসায়ী নিজাম উদ্দিন বাগাতিপাড়া আমলি আদালতে এই মামলা করেন। 

মামলার আসামিরা হচ্ছেন-বাগাতিপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম, ওই থানার এসআই রবিউল ইসলাম ও শাকিল আহমেদ, খুলনায় কর্মরত এএসআই আবদুল করিমের স্ত্রী ওই এলাকার অঞ্জনা বেগম ও তার বাসার তত্ত্বাবধায়ক আবুল বাসার।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, আসামি অঞ্জনা বাৎসরিক ভাড়ায় পাঁচ বছরের জন্য বাদী নিজাম উদ্দিনের কাছে দুটি পাওয়ার টিলার ইজারা দেন ২০২১ সালের ১১ ডিসেম্বর। ওই পাওয়ার টিলারে তিনি পাবনা এলাকায় কাঠ-খড়ি পাঠাতেন। কিন্তু পাওয়ার টিলারের রুট পারমিট এবং লাইসেন্স  না থাকায়  বারবার হয়রানির শিকার হচ্ছিলেন। এক বছর পর তিনি পাওয়ার টিলার দুটি অঞ্জনাকে ফেরত দেন এবং ১৫ হাজার টাকা বাকি রেখে সব ভাড়া পরিশোধ করেন। গত ২২ ফেব্রুয়ারি অঞ্জনার পক্ষে বাগাতিপাড়া থানার ওসিসহ অন্যান্য কর্মকর্তা নিজামকে থানায় ডেকে নিয়ে আটকে রাখেন। একপর্যায়ে মারধর করে তাকে দিয়ে তিনটি নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হবে মর্মে সই করিয়ে নেন। এরপর টাকা না দিতে পারায় তারা ২৫ ও ২৭ মার্চ নিজামকে আবার আটক করে প্রাণনাশের হুমকি দেন। তখন ব্যবসা করতে না দেওয়ারও হুমকি দেওয়া হয়। 

আদালত অভিযোগটি গ্রহণ করে পুলিশ সুপার এবং পিবিআইকে তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেন। আগামী ১৮ মে মামলার পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। 

মামলার আসামি আবুল বাসার জানান, অঞ্জনা তাকে ধর্ম ভাই বানিয়েছেন। কাঠ ব্যবসায়ী নিজামের অনুরোধে অঞ্জনাকে রাজি করিয়ে প্রায় পৌনে ৫ লাখ টাকায় দুটি পাওয়ার টিলার কিনে নিজামকে ভাড়ায় দেন তিনি। কথা ছিল মেরামত ও পরিচালনার সব খরচ নিজামের। পাঁচ বছর প্রতি মাসে তিনি ভাড়া বাবদ ১৪ হাজার টাকা দেবেন। কিন্তু এক বছর পর চালানোর অনুপযোগী গাড়ি দুইটি ফেরত দিতে চান নিজাম। এ সময় তারা ওই গাড়ি মেরামত করে দিতে বলেন। অথবা গাড়ি কেনার টাকা দিয়ে ওই গাড়ি দুটি নিজামকে রাখতে বলেন। এরই ধারাবাহিকতায় স্থানীয় ইউপি মেম্বার ও পুলিশের মধ্যস্থতায় নিজাম নিজেই ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা দিতে স্বীকার করন। কিন্তু টাকা পরিশোধ না করায় বিভিন্নভাবে তাকে টাকা পরিশোধে চাপ দেওয়া হয়। 

তিনি দাবি করেন, নিজাম ওসিসহ তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেছেন।

এ বিষয়ে বাগাতিপাড়া থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘পাওয়ার টিলারের ভাড়ার ব্যাপারে আমার কাছে অভিযোগ দেওয়ার পর আমি মীমাংসার চেষ্টা করেছি মাত্র। মামলায় আমার বিরুদ্ধে করা অভিযোগ সঠিক নয়।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ইউপি মেম্বার আব্দুল্লাহ জানান, ওই ঘটনায় অঞ্জনার বাড়ি ও থানায় একাধিক বৈঠক হয়েছে। সব সময় নিজাম ওই ১৫ হাজারসহ মোট ১ লাখ টাকা দিয়ে ট্রলি ফেরত দিতে চাইলে অঞ্জনা রাজি হননি। সর্বশেষ তিনি নিজামকে মোট ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা পরিশোধের কথা বললেও নিজাম রাজি হননি। ওই ঘটনার দুই-একদিন পর নিজাম তার কাছে একটি লিখিত স্ট্যাম্প নিয়ে এসে স্বাক্ষীর স্বাক্ষর করতে বললে তিনি জানতে পারেন ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকায় মীমাংসা হচ্ছে। 

তিনি আরও বলেন, সই করার পরের দিন তিনি উপস্থিত থেকে পাওয়ার টিলার দুটি ফেরত দিয়েছেন অঞ্জনাকে। কয়েকদিন পর থানায় গিয়ে নিজামকে দেখতে পান। নিজাম ২০ হাজার টাকা জমা দেওয়ার জন্য গেছেন। কিন্তু চুক্তির তুলনায় ওই টাকা খুবই কম বলে ওসি নিতে চাননি। 

এক প্রশ্নের জবাবে ওই মেম্বার জানান, একদিন নিজামকে পুলিশ নিয়ে যাচ্ছে এমন তিনি দেখেছেন। এর বাইরে কিছু জানেন না।