Patuli Incident: ‘‌মাতাল হলেও সে তো আমার স্বামী’‌, পাটুলি থানায় অভিযোগ প্রত্যাহার করলেন স্ত্রী

স্বামী রয়েছে মদের নেশা। যেদিন একটু কম হয়, সেদিন আদিখ্যেতা করে স্ত্রীর উদ্দেশে গান বের হয়—‘‌কেন তোমার বয়স হয় না ১৬ আমার ১৯’‌। যেদিন দিন নেশার মাত্রা থাকে চড়া সেদিন বাড়িতে লঙ্কা–কাণ্ড বেঁধে যায়। তারপর পিঠে কালশিটের দাগ নিয়ে গৃহবধূ ছোটেন থানায়। স্বামীর অত্যাচারের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানান। কান্নায় ভিজিয়ে ফেলেন শাড়ি। পুলিশ গার্হস্থ্য হিংসা শুনে ডেকে আনে স্বামীকে। থানায় বসিয়ে দেয় কড়া ধমক। তখন ভিজে বেড়াল হয়ে ক্ষমা চেয়ে ল্যাজ গুটিয়ে স্বামী বাড়ি ফেরে। আর হবে না বলে কথাও দেয়। তারপর আবার যে কে সেই।

বিষয়টি ঠিক কী ঘটেছে?‌ স্থানীয় সূত্রে খবর, থানা থেকে ফিরে এলে দু’দিন সে থাকে শান্ত। তখন আদিখ্যেতা করতে দেখা যায় স্ত্রীর সঙ্গে। কিন্তু সময় যেতে না যেতেই আবার বেড়ে যায় মদের মাত্রা। আবার সেই রণচণ্ডী মূর্তি। মারধর করে পিঠে–গালে কালশিটের দাগ ফেলে দেওয়া এবং তা নিয়ে আবার থানায় হাজির স্ত্রী। রোজ মার খেয়ে স্ত্রীর প্রায় আধমরা অবস্থা। আর এই একই নালিশ শুনে বিরক্ত পুলিশও। এবার উচিত শিক্ষা দেবেন বলে ঠিকই করে ফেললেন ওই আক্রান্ত গৃহবধূ। তাই এবার আর মৌখিক নয়, সরাসরি স্বামীর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ ঠুকে দিলেন মহিলা।

তারপর ঠিক কী ঘটল?‌ লিখিত অভিযোগ দায়ের হতেই নেশাগ্রস্তের বিরুদ্ধে দায়ের হল মামলা। আর কঠিন শাস্তির ভয়ে দুই হাঁটু কাঁপতে শুরু করল অত্যাচারী স্বামীর। স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লেন স্ত্রী। এমনকী রোজকার এই অশান্তি থেকে নিষ্কৃতি পেল পুলিশও। কিন্তু বিষয়টা ক্ষণিকের মতো পাল্টেও গেল। রাতারাতি চিত্রনাট্য যেন বদলে গেল। ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গিয়ে প্রায় এপ্রিল ফুল করে দিল সবাইকে। সম্প্রতি ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ কলকাতার পাটুলি থানায়। পুলিশ সূত্রে খবর, ২০১৭ সালে এই দু’জনের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই মদ খাওয়া নিয়ে স্বামী–স্ত্রীর অশান্তিতে বাড়িতে কাক–চিল বসতে পারে না। তাতে তিতিবিরক্ত প্রতিবেশিরাও।

কেমন ঘুরে গেল ঘটনাপ্রবাহ?‌ আক্রান্ত গৃহবধূর অভিযোগ জানিয়ে যাওয়ার পর পুলিশ অফিসার সারারাত বসে কেস লিখলেন। সকালে মামলা দায়ের হল। আদালতে নিয়ে যাওয়া হল অভিযুক্তকে। এজলাসে মামলা উঠল। তখন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কড়া শাস্তির প্রত্যাশা করছেন সবাই। হঠাৎ আদালতে প্রবেশ করলেন স্ত্রী। সবাই থ। কারণ আদালতে দাঁড়িয়ে স্ত্রী বললেন, ‘আমি স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা তুলে নিতে চাই। মাতাল হলেও সে তো আমার স্বামী’। এই বয়ানের ফলে মামলা উঠে গেল। আর সাধুর মতো মুখ করে স্ত্রীর পাশাপাশি হেঁটে বেরিয়ে গেলেন স্বামী। রাত জেগে যে পুলিশ অফিসার ওই অভিযোগের বয়ান লিখেছিলেন, তিনি বেসিনে গিয়ে চোখে জলের ঝাপটা দিলেন।