মাকে স্কুটারে চাপিয়ে তীর্থযাত্রায় ছেলে, পেরোলেন ৬৬,০০০ কিমি পথ, এ এক অন্য ভ্রমণ

কে সন্দীপ কুমার

এ যুগের শ্রবণকুমার। এ এক অন্য ভ্রমণ। সঙ্গী বলতে ২০ বছরের পুরানো বাজাজ চেতক স্কুটার। তাতে মাকে চাপিয়ে তীর্থ ভ্রমণে ছেলে। শুধু ভারতবর্ষে নয়, ভারতের গন্ডী পেরিয়ে নেপাল, ভুটান, মায়ানমারে পাড়ি দিয়েছেন তাঁরা। মায়ের ইচ্ছাপূরণের জন্য হাজার হাজার মাইল ছুটে চলেছেন পুত্র। এক মন্দির থেকে অপর মন্দিরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তাঁরা। মাকে নিয়ে পুত্র ডি কৃষ্ণ কুমারের এই ভ্রমণবৃত্তান্ত নিঃসন্দেহে রূপকথার মত শোনায়।

বৃহস্পতিবার তাঁরা চিত্রকূট থেকে প্রয়াগরাজে পৌঁছন। এরপর শুক্রবার সন্ধ্যায় তাঁরা বারাণসীর উদ্দেশ্যে রওনা দেন। তবে সঙ্গমে স্নান করেছেন তাঁরা। গঙ্গা আরতিও দর্শন করেন তাঁরা। কয়েকটি মন্দির দর্শন করে তাঁরা রামকৃষ্ণ আশ্রমে রাতটা কাটান। ৪৪ বছর বয়সী ডি কৃষ্ণকুমার। আদতে তিনি মাইসুরুর বাসিন্দা। মা চূড়ারত্না। বয়স ৭৪ বছর। কৃষ্ণ কুমার আগে সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। তবে মাকে নিয়ে ভ্রমণের নেশায় তিনি চাকরি ছাড়েন। এরপর বেরিয়ে পড়া।

এতদিন পর্যন্ত তাঁরা ৬৬,৮৮৯ কিমি ভ্রমণ করে ফেলেছেন। সেই ২০১৮ সালে ১৬ জানুয়ারি থেকে তাঁরা যাত্রা শুরু করেন। এরপর আর থামেননি। সঙ্গী বলতে সেই পুরানো স্কুটার।

এদিকে কোভিডের কারণে তাঁদের যাত্রা কিছুটা থমকে গিয়েছিল। ভুটান সীমান্তে তাঁরা প্রায় ৫০ দিন কাটিয়ে দিয়েছিলেন। এরপর ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তাঁরা আবার বাড়়ি ফিরে আসেন। তিনি জানিয়েছেন, ২০২২ সালের ১৫ অগস্ট ফের যাত্রা শুরু করি।

অনেকেই তাঁকে রামায়ণের সেই শ্রবণকুমারের সঙ্গে তুলনা করেন। যিনি তাঁর দৃষ্টিহীন বাবা মাকে ঝুড়িতে চাপিয়ে তীর্থ দর্শনে বেরিয়েছিলেন।

কৃষ্ণ কুমার জানিয়েছেন, প্রায় ৬০ বছর মা চার দেওয়ালের মধ্য়ে কাটিয়ে দিয়েছেন। আমি মায়ের ইচ্ছা পূরণ করতে চেয়েছি। মাতৃ সেবা সঙ্কল্প যাত্রা। বাবা ২০১৫ সালে মারা গিয়েছিলেন। এই স্কুটারটা বাবা ২০ বছর আগে আমার জন্য কিনেছিলেন। সেই স্কুটারে চেপেই এই যাত্রা।

মোটা মাইনের চাকরি ছেড়ে মাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন তীর্থদর্শনে। এর মধ্যেই তাঁরা কর্নাটক, কেরল, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ ভ্রমণ করে ফেলেছিলেন। ইউপির পরে তাঁরা বিহার যেতে চান। কিন্তু রাতে কোথায় তাঁরা থাকেন?

কৃষ্ণ কুমার জানিয়েছেন তীর্থ দর্শনে বেরিয়েছি। হোটেলে থাকি না। মাকে নিয়ে মঠে, মন্দিরে, সাধু সন্তদের সঙ্গে কাটিয়ে দিই।