আম তো গেছেই, ছালা বাঁচানোর মরিয়া চেষ্টায় লুইজিনহোকে ইস্তফার নির্দেশ মমতার?

চারিদিকে দুর্নীতি নিয়ে চাপের মধ্যেই সোমবার তৃণমূল কংগ্রেসের জাতীয় দলের স্বীকৃতি কেড়ে নিয়েছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। আর তার পর কয়েক ঘণ্টায় তৃণমূলের অন্দরে বদলে গিয়েছে অনেক কিছু। মঙ্গলবার দুপুরে রাজ্যসভার পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন রাজ্যসভায় তৃণমূলের অন্যতম সাংসদ গোয়ার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লুইজিনহো ফারেইরো। রাজনৈতি বিশেষজ্ঞদের মতে, জাতীয় দলের স্বীকৃতি হারানোর পর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন ছেড়ে সম্ভবত দুর্গ বাঁচানোর জন্য ১০০ শতাংশ দিতে চলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সূচনা হয়েছে মঙ্গলবার সকাল থেকেই।

তৃণমূলের অন্দরের খবর, রাজ্যের বাইরে তৃণমূলকে ছড়ানোর দায়িত্ব নিয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। গোয়া, ত্রিপুরা, মেঘালয়, মণিপুর, অরুণাচল প্রদেশের মতো ছোট রাজ্যগুলিকে টার্গেট করেছিলেন তিনি। ওদিকে প্রধানমন্ত্রী পদের দৌড়ে এগিয়ে থাকতে গেলে পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও একাধিক রাজ্যে দলকে ছড়িয়ে দেওয়া দরকার ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। আর সেই দায়িত্ব অভিষেককে দিয়েছিলেন তিনি।

২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে বিপুল জনসমর্থনে জয়ী হওয়ার পর ছোট রাজ্যগুলিতে দলকে ছড়িয়ে দিতে বিশেষ তৎপর হয় তৃণমূল নেতৃত্ব। সেজন্য দিল্লির রাজনীতিতে পরিচিত একাধিক মুখকে সামনে রেখে বিশেষ দল গড়ে তৃণমূল। তার মধ্যে লুইজিনহোর মতো রয়েছেন অসমের নেত্রী সুস্মিতা দেবও। গত কয়েক মাসে একে একে তৃণমূলের নজরে থাকা রাজ্যগুলিতে বিধানসভা নির্বাচন হয়। সেই সব নির্বাচনের প্রচারে কোটি কোটি টাকা খরচ করে তৃণমূল। তাতে দেখা যায়, মেঘালয় ছাড়া বাকি সমস্ত জায়গায় করুণ পরিণতি হয় ঘাসফুল ব্রিগেডের। ত্রিপুরার মতো রাজ্যে নোটার থেকেও কম ভোটে পেয়েছে তৃণমূল। গোয়ায় তাদের ভরাডুবি হয়েছে। অরুণাচল প্রদেশে রাজ্য দলের স্বীকৃতি হারিয়েছে তারা।

রাজ্যে নিয়োগ দুর্নীতিতে দলের একের পর এক নেতার গ্রেফতারিতে কার্যত দিশাহারা তৃণমূল। তার মধ্যে রাম নবমীকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক অশান্তি রাজ্য প্রশাসনের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর সরকারের ভূমিকা নিয়েও। মাঝে মুসলিম অধ্যুষিত সাগরদিঘিতে তৃণমূলের বড় ব্যবধানে হারে নতুন চিন্তার ভাঁজ চওড়া হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কপালে।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, তৃণমূলের জাতীয় দলের স্বীকৃতি চলে যাওয়ার পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বুঝতে পেরেছেন তাঁর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন ক্রমশ ক্ষীণতর নক্ষত্রের মতো গাঢ় অন্ধকারে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। উলটে, রাজ্যে ক্রমশ মাটি শক্ত করছে বিজেপিসহ বিরোধীরা। এমনকী তৃণমূলের অন্যতম ভরসা মুসলিম ভোটব্যাঙ্কও হাতছাড়া হওয়ার পথে। এই পরিস্থিতিতে নিজের দুর্গ দখলে সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপাতে চাইছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যার জেরেই লুইজিনহোর পদত্যাগ বলে মনে করা হচ্ছে।

২০২১ সালে নিজের দীর্ঘদিনের সঙ্গী অর্পিতা ঘোষকে সরিয়ে তার জায়গায় লুইজিনহোকে রাজ্যসভায় পাঠিয়েছিলেন মমতা। নেত্রীর নির্দেশে আত্মত্যাগ করার পর কার্যত অন্তর্ধানে চলে গিয়েছেন অর্পিতা। ওদিকে তৃণমূল সূত্রে খবর, দলের শৃঙ্খলা মানছিলেন না লুইজিনহো। দলীয় কর্মসূচিতে হাজির থাকছিলেন না তিনি। এমনকী তাঁকে গোয়ার দায়িত্ব দেওয়া ভুল হয়েছিল বলে প্রকারান্তরে স্বীকার করে নিয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার অবশেষে তাঁকে ইস্তফা দিতে নির্দেশ দেয় দল। লুইজিনহোর শূন্য পদে যে কোনও বাঙালিই রাজ্যসভায় যেতে চলেছেন, এব্যাপারে মোটের ওপর নিশ্চিত রাজনৈতিক মহল।