প্রযুক্তি পণ্যের বাজারে মন্দা কাটছেই না, ঝুলে আছে ফাইভ-জি 

প্রযুক্তি পণ্যের বাজারে সময়টা খারাপ যাচ্ছে। ছয় মাস আগে যার নিম্নগতি শুরু হয়েছিলো, এখনও সেই গতি মাথা ‍তোলেনি। বরং আরও নিচের দিকেই নামছে যেন। সর্বশেষ ভরসা ছিল ঈদ। ব্যবসায়ীরা ভেবেছিলেন ঈদে বাজারটা উঠতে পারে। কিন্তু দেখা গেছে উল্টোচিত্র, বাজার ওঠেনি। 

দেশে ডলার সংকট, ঋণপত্র খুলতে না পারা, মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপ আমদানিতে ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) আরোপ ইত্যাদি কারণে মোবাইল ফোনের দাম বেড়ে গেছে, দাম বেড়েছে ল্যাপটপেরও। এ দুটি প্রযুক্তি পণ্য এখন অনেকটাই সাধারণের নাগালের বাইরে।

দেশের মোবাইলফোন উৎপাদকদের সংগঠন বিএমপিআইএ’র সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া শাহিদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, মোবাইল ফোনের বাজার খুব খারাপ। কবে ভালো হবে বা আর কতদিন এমন খারাপ অবস্থা চলবে জানি না।

টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির এক তথ্যে দেখা গেছে, গত মার্চ মাসে (৯ এপ্রিল তারিখ পর্যন্ত আপডেটেড) দেশে ২জি মোবাইল ফোন তৈরি হয়েছে ১১ লাখ ৭৭ হাজার। ফেব্রুয়ারি মাসে যা ছিল ১৬ লাখ ৬৯ হাজার। দেশে থ্রিজি মোবাইল ফোনের উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। একই মাসে ফোরজি ফোন তৈরি হয়েছে ৫ লাখ ৭০ হাজার। আর ফাইভজি ফোনের সংখ্যা ৩ হাজার।

একই মাসে দেশে মোবাইল ফোন আমদানির সংখ্যা দেখতে গিয়ে জানা যায়, এই সময়ে (গত মার্চে) দেশে কোনও ২জি ও থ্রিজি ফোন আমদানি করা হয়নি। গত ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে কোনও ফোরজি ফোন আমদানি করা না হলেও মার্চ মাসে ১১ হাজার ফোরজি ফোন এবং মাত্র ১৯৭টি ফাইভজি ফোন আমদানি করা হয়েছে।

বাজারে চাহিদা না থাকায় ফোন উৎপাদন ও আমদানিতে ভাটা পড়েছে বলে জানিয়েছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

বেশ দীর্ঘ সময় ধরে বাজারে একটা–দুটো ব্র্যান্ড ছাড়া কারোরই নতুন মডেলের সেট নেই। নতুন দুই একটি মডেলে বাজারে এসে সাড়া ফেলতে পারেনি। দাম বেশি বলে ক্রেতাদের আগ্রহ কম বলে জানা গেছে বাজার সূত্রে। কোনও কোনও ব্র্যান্ড মোবাইলের দাম কমিয়েও কাঙ্ক্ষিত ক্রেতার দেখা পায়নি। ফলে বাজারের সার্বিক চিত্র হতাশাজনক বলে মন্তব্য করেছেন ট্রানশান বাংলাদেশের (আইটেল, ইনফিনিক্স ও টেকনো মোবাইলের উৎপাদক) প্রধান নির্বাহী রেজওয়ানুল হক। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অন্যান্য ঈদ মৌসুমের তুলনায় এবার অন্তত ২০ শতাংশ বিক্রি কম হয়েছে। ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে বাংলাদেশে স্মার্টফোন আমদানি ২৩ শতাংশ কমেছে। মূল্যস্ফীতি, ডলার সংকট, বৈশ্বিক সরবরাহে ব্যাঘাত, আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি এবং নতুন আরোপিত মূল্য সংযোজন করের (ভ্যাট) কারণে এমনটি হয়েছে। বৈশ্বিক শিল্প বিশ্লেষণ প্রতিষ্ঠান কাউন্টারপয়েন্টের সর্বশেষ মার্কেট মনিটর সার্ভিসের গবেষণায় এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।

খারাপের বৃত্তেই আটকে আছে প্রযুক্তি পণ্যের বাজার

দেশের প্রযুক্তি পণ্যের বাজারও দীর্ঘদিন খারাপের বৃত্তেই আটকে আছে। প্রযুক্তি পণ্যের বিক্রিতে ধস নামতে নামতে তা ৫০ শতাংশে নেমে গিয়েছিলো। রোজার শেষ ১০ দিনে প্রযুক্তি পণ্যের আমদানিকারকদের বিভিন্ন ধরনের ছাড় ও উপহারের ঘোষণায় বাজার কিছুটা উঠেছে, ৫০ শতাংশের জায়গা থেকে ১০ শতাংশ উঠে দাঁড়িয়েছে ৪০ শতাংশে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দেশের সবচেয়ে তথ্যপ্রযুক্তি পণ্যের আমদানিকারক অন্যতম প্রতিষ্ঠান স্মার্ট টেকনোলজিস (বিডি) লিমিটেডের পরিচালক (চ্যানেল সেলস) মুজাহিদ আল বেরুনী সুজন বলেন, ঈদের বাজারটা ভালো যায়নি। তবে ঈদের আগের ১০দিনে কিছু পণ্য বিক্রি হয়েছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ট্যাব, পেইন্টিং ট্যাব, ল্যাপটপ, কালার প্রিন্টার ইত্যাদি। তিনি আরও বলেন, ঈদের ছুটিতে ঘরে বসে কাজ করার জন্য পেশাদার লোকজন এসব কিনেছে বলে আমরা জেনেছি। ঈদ শেষে বাজার আবার কোন রূপে ফিরবে বিষয়টা নিয়ে তিনি ধারণা করতে পারছেন না বলে জানান। 

ফাইভজি কবে?

ফাইভজি যন্ত্রাংশ আমদানি করতে না পারায় বাণিজ্যিকভাবে এই সেবা চালু কবে হবে তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। অপারেটরগুলো পরীক্ষামূলক অপারেশন চালিয়ে সফল হলেও বাণিজ্যিক অপারেশনে এখনই যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

দেশে ফাইভজি মোবাইলের উৎপাদন শুরু হয়েছে। কিছু কিছু ব্র্যান্ডের ফাইভজি মোবাইল ফোন আমদানিও হচ্ছে। কিন্তু কবে থেকে ফাইভজি ব্যবহার করা যাবে তা এখনও জানা যায়নি। বর্তমান সরকারের চলতি মেয়াদেই ফাইভজি চালুর পরিকল্পনা থাকলেও বাণিজ্যিক অপারেশনে যাওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে।

ফাইভজির বাণিজ্যিক ব্যবহারের বিষয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ব্যবহারকারীরা যতক্ষণ না ফাইভজি ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন ততক্ষণ আমরা অপারেটরগুলোকে চাপ দিতে পারছি না। আমরা এ ক্ষেত্রে এখন ধীরে চলছি। আমরা যেটার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি, তা হলো ফোরজির সম্প্রসারণ। আমরা জেনেছি, ফোরজিকে আমরা সহজেই ফাইভজিতে রূপান্তর করতে পারবো। এজন্য আমরা ফোরজি সম্প্রসারণে কাজ করছি।