Recruitment Scam: ওএমআর শিট নষ্ট‌‌ হলে জালিয়াতির অভিযোগ জানানো যায়? প্রশ্ন সুপ্রিম কোর্টের

পরীক্ষার্থীদের ওএমআর শিট মূল্যায়ন করতে হবে। তার জন্য পছন্দের ব্যক্তিকে দিয়ে এজেন্সি খুলিয়েছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও মানিক ভট্টাচার্য। তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল, চাকরি বিক্রির এজেন্টদের পাঠানো তালিকার প্রার্থীদের নম্বরে সহজে বিকৃতি ঘটানো। তদন্তে নেমে এই তথ্য হাতে এসেছে বলে দাবি এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি)। কিন্তু ২০১৪ সালের প্রাথমিকের টেট এবং ২০১৬ সালের এসএসসি’‌তে শিক্ষক থেকে শিক্ষাকর্মী নিয়োগের পরীক্ষার ওএমআর শিট আগেই নষ্ট করে ফেলা হয়েছে বলেও অভিযোগ তোলা হয়েছিল। সেক্ষেত্রে কেমন করে ওএমআর শিট জালিয়াতির অভিযোগ জানানো যায়?‌ বুধবার এই প্রশ্ন তুলল সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি অনিরুদ্ধ বসু ও বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়ার ডিভিশন বেঞ্চ।

এদিকে প্রাথমিকে ২৭৩ জন শিক্ষকের চাকরি বাতিল নিয়ে শুনানি চলছিল। ওএমআর শিট জালিয়াতি নিয়ে শুনানি চলাকালীন বেঞ্চের প্রশ্ন, হাজার হাজার পরীক্ষার্থীর মধ্যে শুধু এই ক’‌জনের ক্ষেত্রে ১ নম্বর বাড়ানো হলো কেমন করে? আগামী বুধবার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। ওই ২৭৩ জন কোন প্রক্রিয়ায় নিয়োগপত্র পেলেন?‌ সেটা জানতে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদকে হলফনামা দিতে বলেছে আদালত। তদন্তকারীরা তথ্য পেয়েছেন, পরীক্ষার ওএমআর শিট ছাপাবার দায়িত্বও দেওয়া হয়েছিল পার্থবাবুর ঘনিষ্ঠ এক ব্যক্তিকে। ছাপিয়ে সেগুলি চলে আসত এসএসসি অফিসে। প্রত্যেকটির বারকোড নম্বর এসপি সিনহার কাছ থেকে সংগ্রহ করে নিতেন পার্থ। এজেন্টদের জমা দেওয়া তালিকার চাকরিপ্রার্থীদের কাছে কোন ওএমআর শিট যাবে, তার বারকোড নম্বর লিখে রাখা হতো। সেটা চলে যেত পার্থবাবুর কাছে। জেলাভিত্তিক এই নম্বর লিখে পৌঁছে দেওয়া হতো পরীক্ষাকেন্দ্রে। তারপর ইনভিজিলেটরদের মাধ্যমে সেই মতো ওএমআর শিট তুলে দেওয়া হতো।

অন্যদিকে এসএসসি এবং প্রাথমিকে যাঁদের চাকরি কলকাতা হাইকোর্ট বাতিল করেছে, সেই নির্দেশ এখনই কার্যকর করা যাবে না বলে জানিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। এবার সেই নির্দেশের সময়সীমা বাড়িয়ে দিল সুপ্রিম কোর্ট। এমনকী শিক্ষক–শিক্ষাকর্মী নিয়োগের মামলায় আদালত–বান্ধব হিসেবে আইনজীবী গৌরব আগরওয়ালকে দায়িত্ব দিয়েছেন বিচারপতির বেঞ্চ। যে রিপোর্টকে কলকাতা হাইকোর্ট বারবার তুলে ধরেছে, তা খতিয়ে দেখবেন আদালত–বান্ধব। ইডির দাবি, ওএমআর শিট ছাপাবার বরাত পাওয়া সংস্থাকে পার্থবাবুর নির্দেশ মতো কিছু নামের তালিকা ও বারকোড নম্বর পাঠিয়ে দিতেন এসএসসি অফিসের কর্মীরা। সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে বলা থাকত, বারকোড নম্বর একই রেখে নতুন ওএমআর শিট বানাতে হবে। সেগুলি চলে যেত মূল্যায়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত এজেন্সির কাছে। আর কর্মীরা তাঁদের হাতে থাকা উত্তরপত্র দেখে শিটগুলি পূরণ করতেন। তখন যান্ত্রিক মাধ্যমে মূল্যায়ন হতো। এভাবে প্রাপ্ত নম্বরের হার্ড ও সফটকপি চলে যেত পার্থবাবুর কাছে। আগে জমা পড়া ওএমআর শিটগুলি পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নির্দেশ মতো নষ্ট করে দেওয়া হতো।

ঠিক কী উঠে এল সওয়াল–জবাবে?‌ চাকরি হারানো ২৭৩ জনের পক্ষ থেকে আইনজীবী পিএস পাটোয়ালিয়া অভিযোগ করেন, ‘‌আমাদের মক্কেলদের নিয়োগ বাতিল করা হয়েছিল ১ নম্বর করে না পাওয়ার জেরে। পরে ৬টি ভুল প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করলে ৬ নম্বর করে তাঁদের দেওয়া হয় কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে। এতে তাঁরা যোগ্য বলে বিবেচিত হন।’‌ পাল্টা প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের আইনজীবী কুণাল চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‌প্রশ্ন ভুল ছিল না। মডেল উত্তরে সমস্যা ছিল।’‌ বিচারপতিও বাতিল চাকরিপ্রার্থীদের নম্বর প্রাপ্তির বিষয়ে জানতে চান।