আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ঝুলে আছে দণ্ডপ্রাপ্তদের ৪০ আপিল

বিশেষ আইনে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দণ্ডপ্রাপ্তদের ৪০টি মামলা ঝুলে আছে আপিল বিভাগে। এখানে চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হলেই রিভিউ এবং পরে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনার সুযোগ থাকছে। তবে সেখানেও ফলপ্রসূ না হলে কার্যকর হতে শুরু করবে রায়ের দণ্ড। মূলত আপিল বিভাগে অন্যান্য মামলার চাপ থাকায় এসব আপিল নিষ্পত্তিতে আরও সময় প্রয়োজন বলে ইঙ্গিত করেছে রাষ্ট্রপক্ষ।

ট্রাইব্যুনাল থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রায়ের পর এ পর্যন্ত মোট ৯টি মামলা আপিল বিভাগে নিষ্পত্তি হয়েছে। যার মধ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে ছয় আসামির। তাদের আপিল ও রিভিউ নিষ্পত্তি করে ফাঁসির দণ্ডাদেশ কার্যকর হয়েছে।

মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর হওয়া আসামিরা হলো, আবদুল কাদের মোল্লা, মুহাম্মদ কামরুজ্জামান, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, মতিউর রহমান নিজামী ও মীর কাসেম আলী।

পাশাপাশি জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের করা আপিলের ওপর ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর রায় দেন আপিল বিভাগ। ওই রায়ে আজহারের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। এ রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন (রিভিউ) করেন তিনি। পুনর্বিবেচনার আবেদন আপিল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায়। অন্যদিকে জাতীয় পার্টির সাবেক নেতা ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে আপিল বিভাগের দেওয়া রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন করা হয়। তবে পুনর্বিবেচনা আবেদন নিষ্পত্তির আগে ২০২২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি হাসপাতালের প্রিজন সেলে মারা যান তিনি।

আপিল বিচারাধীন অবস্থায় মারা গেছেন দণ্ডিত আট আসামি। তারা হলেন, ৯০ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযম, আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি নেতা আবদুল আলীম, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা আব্দুস সোবহান, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মোসলেম প্রধান, আকমল আলী তালুকদার, মাহবুবুর রহমান ও সাখাওয়াত হোসেন এবং আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত বিল্লাল হোসেন। মারা যাওয়ায় তাদের আপিল অ্যাবেটেড (সমাপ্তি) ঘোষণা করেছেন সর্বোচ্চ আদালত।

ট্রাইব্যুনালের তথ্যমতে, এই আসামিদের বাইরেও ট্রাইব্যুনালের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে ৪০টি আপিল হয়েছে, যা শুনানির জন্য অপেক্ষায় রয়েছে।

আপিল বিভাগে বিচারাধীন মামলাগুলোর মধ্যে রয়েছে- ১. আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মোবারক হোসেন, ২. জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আব্দুল জব্বার (রাজ্জাক), ৩. চাঁপাইনবাবগঞ্জের রাজাকার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মাহিদুর রহমান, ৪. সিরাজুল হক ওরফে সিরাজ মাস্টার, ৫. বাগেরহাটের খান মো. আকরাম হোসেন, ৬. পটুয়াখালীর ফোরকান মল্লিক, ৭. নেত্রকোনার ওবায়দুল হক (তাহের), ৮. আতাউর রহমান ননী, ৯. হবিগঞ্জের মজিবুর রহমান (আঙ্গুর মিয়া), ১০. মহিবুর রহমান ওরফে বড় মিয়া।

১১. সামসুদ্দিন আহমেদ (কিশোরগঞ্জ), ১২. অ্যাডভোকেট শামসুল হক, ১৩. এস.এম. ইউসুফ আলী (জামালপুর), ১৪. মো. সাখাওয়াত হোসেন, ১৫. বিল্লাল হোসেন, ১৬. মো. আব্দুল লতিফ, ১৭. ইউনুছ আহমেদ, ১৮. মো. আমির আহম্মেদ ওরফে আমির আলী, ১৯. মো. জয়নুল আবেদীন, ২০. মো. আব্দুল কুদ্দুস (জাহিদ স্যার)।

২১. হামিদুর রহমান আজাদ, ২২. এ গনি ওরফে এ গনি হাওলাদার, ২৩. মো. রিয়াজ উদ্দিন ফকির, ২৪. মো. ইসাহাক সিকদার, ২৫. মো. আব্দুল কুদ্দুস, ২৬. মো. রনজু মিয়া, ২৭. মো. খলিলুর রহমান মীর ওরফে খলিলুর রহমান, ২৮. মো. আব্দুল আজিজ ওরফে হাবুল, ২৯. মো. আব্দুল মান্নান ওরফে মনাই, ৩০. মো. রেজাউল করিম মন্টু।

৩১. মো. নজরুল ইসলাম, ৩২. মো. জাহিদ মিয়া ওরফে জাহিদ মিয়া এবং সালেক মিয়া, ৩৩. মো. আমজাদ হোসেন হাওলাদার, ৩৪. মো. জাহেদ মিয়া ওরফে জাহিদ মিয়া, ৩৫. মো. মোখলেসুর রহমান মুকুল, ৩৬. মো. সুলতান মাহমুদ ফকির, ৩৭. নকিব হেসেন আদিল সরকার, ৩৮. মো. ফখরুজ্জামান, ৩৯. খন্দকার গোলাম রাব্বানী, এবং ৪০. ডাক্তার খন্দাকার গোলাম সাব্বির। 

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর মো. মোখলেসুর রহমান বাদল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, যুদ্ধের বহু বছর পর বিশেষ একটি আইনের মাধ্যমে অপরাধীদের বিচার শেষে রায় দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এরপর নিয়ম অনুসারে সেসব রায়ের বিরুদ্ধে আসামিরা সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল দায়ের করেছেন। আপিলগুলো শুনানির জন্য অপেক্ষমাণ রয়েছে। আশা করছি সেসব আপিল দ্রুত নিষ্পত্তির মাধ্যমে দণ্ডপ্রাপ্তদের সাজা কার্যকরের জন্য অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় উদ্যোগ গ্রহণ করবে।

এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, দণ্ডপ্রাপ্তদের আপিলগুলোর মধ্যে মোবারক হোসেনসহ দুই জনের আপিল আবেদন শুনানির জন্য আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় ওপরের দিকে রয়েছে। আদালত খুললেই ওই দুটি আপিলসহ আগামী মে মাসের মধ্যে দুই-তিনটি আপিলের শুনানি শেষ করা হবে।