মনোবিভ্রমের পাশে অক্টোবর

পথ

যে পথে চলেছি, ভেতরটা ভরিয়ে তোলে খুশিতে
আবার যে শুধুই বরফ আর নিঃসঙ্গতা
আমার মন তা মানতে চায়নি।
সূর্য সেখানে কখনও অস্ত যায় না।
আত্মজায় চিরজন্ম সৌন্দর্য ও আনন্দের
অনন্ত একটি দীপ্তি, অনন্ত আলোকময়
যে সকল ভূখণ্ড কেউ দেখেনি
আমি হয়তো হেঁটে যাব সেই পথে
যেখানে কোনো চিহ্ন পড়েনি পায়ের সাগরে সাগরে
আমি ঘুরতে পারব না!
আমি কি নাবিকের জীবন বেছে নিই?

একটা দুঃখবোধ ছিল আমার ভেতর
আত্মারা স্বর্গের তেপান্তরে উঠে গেল
সারাজীবন সেইসব স্বর্গে বুদ হয়ে রইলাম
ভেতর থেকে উঠে আসা আলো
দুচোখে মাখামাখি করে অন্ধকার
তুষার আমাকে ঘেরাও করে ফেলেছে
জলে ভাসমান একটুকরো বরফখণ্ড
ছুটেছিলাম জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার পিছু
সেগুলো সব হাস্যকর হয়ে উঠলো।

সুবর্তিয়ানা

সারা শহরে অন্ধকার
হঠাৎ একটি বিমান উড্ডয়ন হল
মনোবিভ্রমের পাশে অক্টোবর
বৈদ্যুতিক গিটারে টানছে স্বরলিপি
পিয়ানোকে ঘিরে নেমে আসছে স্বরগুলো
এই সীমানাহীন ক্ষেত্রকে ভরে
দেয়া হয়েছে খাপের ভেতরে।
সেই আগুনপাখিটি ফিরে যাচ্ছে নীড়ে
সেই চিনাবাদামের খেতের আল ধরে
যেখানে কাদামাটি রাস্তায় পারাপার হচ্ছে তড়িৎ।
আর যে জন আজীবন লালন করেছে সংকেত
তার কল্কিতে যে বারুদ রাখা তার নিচে
জেগে আছে ঘুমহীন ছোট ছাদ
ঘুমিয়ে পড়া অথবা জন্ম না নেয়া
মানুষের ভাষায় চলেছে সুবর্তিয়ানা।

লিমেরিক

আমার সমুদ্র রাতের মতো মাতাল
অশ্রুবিন্দুগুলো মেঘের নিকটে ভাসে
শেষ অপেক্ষার সাথে সুপ্ত স্বপ্নজাল
দুঃখগুলো ছড়িয়েই দিলাম শ্বাসে

লুফতে ব্যর্থ আস্ফালন করে সে জাদু
কথকথায় মধ্যস্বরে গায় যাপন
প্রেমের আঁধারে অনাগত আলো শুধু
সত্য শুনতে কান পেতেছে শিহরন

দৃষ্টির জানালায় দেখে স্বপ্নের ঘ্রাণ
অনন্ত সমুদ্র আকাশ যায় পেরিয়ে
বিষাদ পায়ে মাড়িয়ে পায় কী নির্বাণ
হৃদয় দেখা যায় আয়নায় দাঁড়িয়ে

বসন্তের পাতারা শীতের স্বপ্নমাত্র
নিভৃতে প্রত্যাশার জন্যই যা প্রত্যাশা
যার চোখ দেখল ফুলের অমরত্ব
বিপ্লবীর দ্বিধা সত্যের দার্শনিকতা

ঝরা পালক জানে ইচ্ছের পরিহাস
নৈঃশব্দে দারুণ কোলাহল আজ ফোটে
বিপরীতে সান্ত্বনা জাগিয়েছে আশ্বাস
জানা বিচারে জ্ঞান আপেক্ষিক বটে

হৃদয়ের মাঝে কতসব মুখচ্ছবি
সেই তো সত্য-অসত্য জেনে ফেলে সব
সৌন্দর্য যাকেই ভেবেছ আমার দাবি
সেই তুমি জানো এই নিজ অবয়ব

ঘুমের মাঝে থাকা দীর্ঘ স্বপ্ন আমার
তোমার ঘুমের মাঝে চিরায়ত স্থিত
ঐশ্বর্যের জীবনে চূড়ান্ত আবিষ্কার
আয়নায় পরস্পর চির অপরিচিত

আমৃত্যু কাছের কেউই নয় জীবন
মৃতদেহের মতো নয় এতটা সরল
তোমাকে বুঝিয়ে দেখার শেষ দর্শন
নিজেকে জানার আমৃত্যু তীব্র কৌশল

নীরব হৃদয়ের চেয়েও পরিশ্রম
প্রেমের শরীরে প্রেমে একান্ত কবর
খুনি নয় সেই নিহত বন্ধুর যম
সীমাবদ্ধ সেই স্বপ্নের একাকী ভোর

হৃদয়ের প্রাসাদে ফোটে স্বপ্নের করুণা
জীবনের মূল্য বিছিয়ে পথে ঘুমায়
সমস্ত সঞ্চয় হাতিয়েছে যে যন্ত্রণা
বহন করতে দিও তাকে সে ক্ষমায়

কতটা সংকীর্ণ সেই সমস্ত দেখা
রাজভোজে যদি জাগে হায় অভিমান
একটি শরীরের জন্য একাকী একা
শুনেছি শত মূর্ছনায় ক্ষুধার গান

শক্তিশালী বন্ধুর প্রয়োজন নেই ঘৃণা
চোখে তাকিয়ে দেখা অমলিন হাসি
চেনা আঘাত যেতে ভীষণ ভোলা
অনুভূতিরা তবুও জাগছে রাশিরাশি

জীবন কোনো খণ্ড খণ্ড মিছিল
সবাই যখন সবারই শবযাত্রী
কফিনে ঢেকে রেখে আলোর ঝিলমিল
লিমেরিকে দেখে হৃদয়ের ব্যক্ত আর্তি