প্রিগোজিনের হুমকিতে কি গোলাবারুদ পাবে ওয়াগনার?

রাশিয়ার ভাড়াটে বাহিনী ওয়াগনার গ্রুপের প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিন হুমকি দিয়েছেন, গোলাবারুদের ঘাটতির কারণে আগামী ১০ মে ইউক্রেনের বাখমুত থেকে নিজের যোদ্ধাদের প্রত্যাহার করে নেবেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও রুশ সেনাবাহিনীর কারণে বাখমুতে তার বাহিনীর হাজার হাজার যোদ্ধা নিহত হয়েছে। ভিডিওতে চিৎকার করে গোলাবারুদ কোথায় জানতে চেয়েছেন তিনি।

ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় বাখমুত শহর দখলের জন্য প্রায় ৯ মাস ধরে হামলা চালিয়ে আসছে রাশিয়া। এই হামলায় নেতৃত্ব দিচ্ছে ওয়াগনার বাহিনী। শহরটির কৌশলগত গুরুত্ব খুব বেশি না হলেও চলমান যুদ্ধের সবচেয়ে রক্তাক্ত সংঘাতে পরিণত হয়েছে এই লড়াই। উভয়পক্ষের বিপুল সেনা নিহত হয়েছে। চলমান যুদ্ধে নৃশংসতার জন্য বিশ্বজুড়ে কুখ্যাতি অর্জন করেছে এই ভাড়াটে বাহিনী। শক্তি বৃদ্ধির জন্য রাশিয়ার কারাগার থেকে তারা হাজার হাজার বন্দিকে যোদ্ধা হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে।

এর আগেও সামরিক কৌশল নিয়ে রাশিয়ার শীর্ষ সামরিক নেতাদের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়েছিলেন পুতিন ঘনিষ্ঠ প্রিগোজিন। তার বাহিনীকে গোলাবারুদ সরবরাহ না করার জন্য তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনেছেন। এবার বাখমুত থেকে যোদ্ধাদের প্রত্যাহারের হুমকি দিলেন তিনি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে অস্বাভাবিক মাত্রার অভ্যন্তরীণ বিরোধ প্রকাশ পাচ্ছে প্রিগোজিনের শেষ হুমকিতে। এমন সংবেদশীল সময়ে বাখমুত থেকে যোদ্ধাদের প্রত্যাহারের হুমকি দিলেন তিনি যখন ইউক্রেনের সম্ভাব্য পাল্টা আক্রমণের আগে ক্রেমলিন চেষ্টা করছে স্থিতিশীলতা ও ঐক্যের বার্তা ছড়িয়ে দিতে।

বৃহস্পতিবার ক্রেমলিন বলেছে, গ্রিগোজিনের বার্তা সম্পর্কে তারা অবগত। কিন্তু এর বেশি মন্তব্য করতে রাজি হননি কর্মকর্তারা।

প্রিগোজিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজের অভিজ্ঞতা থাকা রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক সাবেক কর্মকর্তা বলেছেন, প্রিগোজিনের কাছ থেকে হুমকি পেয়ে অভ্যস্ত আমরা। কিন্তু এবারের মাত্রা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই সাবেক কর্মকর্তা বলছেন, ওয়াগনার গ্রুপের জন্য আরও গোলাবারুদ পেতে বাখমুত থেকে যোদ্ধাদের প্রত্যাহারের হুমকি হলো ‘ব্ল্যাকমেইল কর্মসূচি’র অংশ।

তিনি বলেন, ওয়াগনার যা চান তা আদায় করতে পছন্দ করেন। তার এবারের বাজি সফল হবে কিনা এটি স্পষ্ট নয়।

ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণে সবচেয়ে নৃশংস কমান্ডারের কুখ্যাতি অর্জন করেছেন প্রিগোজিন। ওয়াগনার গ্রুপের যোদ্ধারা পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধের কথা স্বীকার করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের তথ্য অনুসার, ডিসেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত ইউক্রেনে লড়াইয়ে ২০ হাজার রুশ সেনা নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে অর্ধেক হলো ওয়াগনার গ্রুপের ভাড়াটে যোদ্ধা।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ফরেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ফেলো রব লী বলেছেন, বাখমুতে দীর্ঘদিন ধরে কামানের সুবিধা ছিল এবং পর্যাপ্ত সহযোগিতা পেয়ে আসছে। কিন্তু রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় হয়ত ইউক্রেনের সম্ভাব্য পাল্টা আক্রমণের আগে গোলাবারুদ রেশনে ব্যবহার করছে। রাশিয়ার মন্ত্রণালয়কে পুরো রণক্ষেত্রের প্রতিরক্ষার কথা ভাবতে হচ্ছে। কিন্তু প্রিগোজিন শুধু বাখমুত দখল নিয়ে আগ্রহী।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান