ঢাকায় বড় অভিযানে নামছে তিতাস

এবার ঢাকার মধ্যে বিল আদায়ে কঠোর হচ্ছে তিতাস। বিলের সঙ্গে রাজধানীর অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য নিয়মিত অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। রবিবার (৮ মে) থেকেই এই তৎপরতা শুরু হচ্ছে।

তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানি সূত্র বলছে, আবাসিক গ্যাস সংযোগ বন্ধ রয়েছে। কিন্তু ঢাকার কিছু কিছু এলাকায় আবাসিক সংযোগ নানাভাবে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এর সঙ্গে তিতাসের এক শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীর পাশাপাশি ঠিকাদাররাও সম্পৃক্ত।

তিতাস সূত্র বলছে, কোনও একটি বাড়িতে দেখা গেলো ১০টি গ্যাস সংযোগ ছিল। সেই বাড়িতে এখন ১৫টি পরিবার বসবাস করছে। এখন প্রত্যেকের বাড়িতেই গ্যাস সংযোগ রয়েছে। বিশেষ করে নতুন ভবনগুলোতে এ ধরনের অবৈধ ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেশি।

অনেক সময় এ ধরনের ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হলেও তাদের দমানো যাচ্ছে না। অভিযানের পরপর আবার গ্যাস সংযোগ লেগে যায় বলে কর্মকর্তারা অভিযোগ করেন। এবার জন্য জরিমানার পরিমাণও বাড়ানো হচ্ছে যাতে মানুষ অবৈধ গ্যাস ব্যবহারে নিরুৎসাহিত হয়।

তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) মো. আল আমিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ ৮ ও ৯  মে সোম ও মঙ্গলবার  ঢাকা মহানগরীর  মতিঝিল এলাকায় সকাল ১০টা থেকে অভিযান পরিচালনা করবে। এই অভিযানে বিল খেলাপি ও অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্নের বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হবে।

সাম্প্রতিক সময়ে অবৈধ গ্যাস ব্যবহারের ক্ষেত্রে আরও জোরদার অভিযান পরিচালনার বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বকেয়ার বিষয়ে তিতাস জানায়, ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত পিডিবির কাছে তাদের বকেয়া আছে ৬০৫ কোটি ৩২ লাখ টাকা। একইভাবে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রেগুলোর কাছে তাদের পাওনা প্রায় ৩৯৫ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। 

এছাড়া বিসিআইসির কাছে পাওনা আছে ৬৯ কোটি ২৮ লাখ টাকা। ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত হিসেবে তিতাসের মোট বকেয়ার পরিমাণ পাঁচ হাজার দুই কোটি ৬ লাখ টাকা। 
এদিকে অবৈধ গ্যাস সংযোগ চিহ্নিত ও বিচ্ছিন্ন করার বিষয়ে তিতাস জানায়, ২০২৩ সালেএ ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত তাদের মোট চিহ্নিত অবৈধ সংযোগ পাওয়া গিয়েছে আট লাখ ১২ হাজার ৮৫৯টি। বর্তমানে চলমান অভিযানের মাধ্যমে অনেক সংযোগই উচ্ছেদ হয়েছে। তবে এখনও সেটির মোট হিসাব করা হয়নি। তাই এই বিপুল পরিমাণ অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে অভিযান আরও জোরদার করতে যাচ্ছে তিতাস।

জ্বালানি বিভাগ সম্প্রতি জানিয়েছে, ফেব্রুয়ারি মাসের অবৈধ গ্যাস সংযোগ ও অবৈধ পাইপলাইন অপসারণ কার্যক্রমের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, ছয়টি বিতরণ কোম্পানি ওই মাসে মোট ১৭৬০টি অভিযান পরিচালনা করেছে। বিচ্ছিন্নকৃত সংযোগের সংখ্যা পাঁচ হাজার ৪৫৮টি। বিচ্ছিন্নকৃত বার্নারের সংখ্যা ২১ হাজার ৭১৩টি। অপসারণকৃত পাইপলাইনের দৈর্ঘ্য ৩৯ দশমিক পাঁচ কিলোমিটার। অবৈধ সংযোগের বিপরীতে দায়েরকৃত মামলার সংখ্যা ছয়টি।

সভায় টিজিটিডিসিএল ও বিজিডিসিএল এর অবৈধ গ্যাস প্রদানের কাজে জড়িত কর্মচারীদের তথ্যও উপস্থাপন করা হয়। আগামী সভা থেকে মাসভিত্তিক সুনির্দিষ্ট তথ্য উপস্থাপনের জন্য সভাপতি নির্দেশনা দেন।

জ্বালানি বিভাগের এক সভায় জানানো হয় যে, অবৈধ গ্যাস সংযোগ বন্ধে জরিমানা পুনর্নির্ধারণ, জড়িত কর্মকর্তা/কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ ও অবৈধ সংযোগ গ্রহণকারীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে একটি সেকশন বিধিমালায় অন্তর্ভুক্ত করে একটি প্রস্তাব পেট্রোবাংলা থেকে পাঠানোর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে।