সুযোগ পেলেই উত্তরবঙ্গে যেতে ভালোবাসতেন সমরেশ মজুমদার

অরুণাভ রাহারায়: সমরেশ মজুমদারের সঙ্গে প্রথম দেখা হয়েছিল ২০০৯ সালে, শিলিগুড়িতে। উত্তরবঙ্গ নাট্য জগতের অনুষ্ঠানে অতিথি হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। তখন প্রতি বছর বসুন্ধরায় চমৎকার অনুষ্ঠানের আয়োজন করতেন বিপদভঞ্জন সরকার। আমি নাইনে পড়ি, বাবার সঙ্গে গিয়েছিলাম। আমাদের বাড়িতে তাঁর ছোট্ট একটা বই ছিল– ঠিকানা ভারতবর্ষ। সেই দেখার স্মৃতি বেশি নেই। মনে আছে পাঞ্জবি, পাজামা পরে এসেছিলেন। তাঁকে দেখে অনেকেই বই তুলে দিচ্ছিলেন। আমাদের ইয়াশিকা ক্যামেরায় একটা ছবিও তুলেছিলাম।

আমরা জানি, সুযোগ পেলেই উত্তরবঙ্গে যেতে ভালোবাসতেন সমরেশ মজুমদার। তবে তাঁর সঙ্গে আমার হৃদ্যতা হয়েছিল কলকাতায়, কবি বেণু দত্ত রায়ের মধুর-সৌজন্যে। তিনি ছিলেন সমরেশ মজুমদারের মাস্টারমশাই। এ কথা নানা লেখায় মাঝেমধ্যেই উল্লেখ করতেন সমরেশদা। আমি যখন কলেজে ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি, সেই সময়টায় উত্তরাধিকার, কালবেলা, কালপুরুষ ট্রিলজির চতুর্থ পর্ব মৌষলকাল প্রকাশিত হচ্ছে একটি সাংবাদ পত্রের রবিবারের পাতায়। প্রতিটা পর্ব পড়ার অপেক্ষায় থাকতাম। আর কলেজ স্ট্রিটে বসে চোখ বুজে দেখতে পেতাম জলপাইগুড়ি!

মৌষলকাল পড়তে পড়তে এতই মুগ্ধ হয়েছিলাম, একবার তো বন্ধু অময় দেব রায় ও আমি সটান পৌঁছেও গিয়েছিলাম ফরিয়া পুকুরের কাছে লেখকের বাড়িতে। যদিও তিনি বাড়িতে ছিলেন না তখন! এর কিছুদিন বাদে এক শীতের সকালে বেণু দত্ত রায় নিয়ে গেলেন কলেজ স্ট্রিটের মিত্র ও ঘোষ প্রকাশনার দফতরে, ভানুবাবুর বিখ্যাত বৈঠকখানায়। সেই ২০১২ সালে! আমরা যাওয়ার ১৫ মিনিটের মধ্যেই মাস্টারমশায়ের সঙ্গে দেখা করতে এলেন সমরেশ মজুমদার। সেখানে তাঁর সঙ্গে শুধু আলাপই নয়, আড্ডাও হল প্রায় তিন-চার ঘণ্টা। তাঁর নানা উপন্যাসের চরিত্র, প্রকৃতির বর্ণনা, রাজনৈতিক চিন্তা– আরও কত কিছু নিয়ে প্রশ্ন করেছিলাম বলে বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন।

সেই দেখা শ্রেষ্ঠ দেখা। পরে যতবারই দেখা হয়েছে ফিরে এসেছে সেদিনের স্মৃতি। ঠিক পরের বছর কাজের সূত্রে একটি ভ্রমণ বিষয়ক পত্রিকার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ি। প্রতি সংখ্যা সমরেশ মজুমদারকে পাঠাতাম আর বলতাম যে আপনার একটা ধারাবাহিক লেখা প্রকাশ করতে চাই। কিছুদিন অপেক্ষা করিয়ে, আমার নাছোড় চেষ্টায়, শেষমেশ রাজিও হয়েছিলেন।

এক সকালবেলায় তাঁর বাড়িতে সাক্ষাৎকার নিতে যাওয়ার স্মৃতিও মনে পড়ছে। বাড়িতে ঢুকেই ডানদিকে বইঘেরা বসার ঘর। দু-মিনিট বসতেই ওপর থেকে নেমে এসে মুখোমুখি বসলেন সাহিত্যিক সমরেশ মজুমদার। কিছু প্রশ্ন সাজিয়ে নিয়ে গিয়েছিলাম। সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে আড্ডা গড়াল বহুক্ষণ। আজ তাঁর প্রয়াণ সংবাদ শুনে সেই দিনটার কথাই বেশি মনে পড়ছে।