রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকসহ গ্রেফতার ২

ভাগ্য বদলের আশায় সৌদি আরবে গিয়েছিলেন ৩০ বছর বয়সী হাসি আক্তার (ছদ্মনাম)। তবে ভাগ্য বদলায়নি তার, বরং সেখানকার গৃহকর্তার যৌন, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তিনি। টেলিফোনে স্ত্রীর কাছে এ তথ্য জানার পর স্ত্রীকে দেশে ফিরিয়ে আনতে রিক্রুটিং এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগ করেন হাসির স্বামী সোলায়মান মিয়া। এজেন্সি স্টার লাইন এসোসিয়েট হাসিকে ফিরিয়ে আনতে ৪ লাখ টাকা দাবি করে। কোনও উপায় খুঁজে না পেয়ে বিমানবন্দর আর্মড পুলিশের কাছে অভিযোগ দেন সোলায়মান মিয়া। তার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এজেন্সিটির মালিক দুই জনকে গ্রেফতার করেছে বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ।

জানা গেছে, বিমানবন্দর আর্মড পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এস এম মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে একটি সোমবার বিকালে রাজধানীর পল্টনে রিক্রুটিং এজেন্সি স্টার লাইন এসোসিয়েটের অফিসে অভিযান চালায়। হাসি আক্তারের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে স্টার লাইন এসোসিয়েটের মালিক ফিরোজ মো. মানসুরুল হক (৬০) এবং মো. রাজনকে (৩০) পল্টন এলাকা থেকে আটক করা হয়। তাদের আটক করে পল্টন থানায় হস্তান্তর করা হয়। হাসি আক্তারের স্বামী সোলায়মান মিয়া বাদী হয়ে মানবপাচার প্রতিরোধ আইনে পল্টন মামলা করেন। মামলা নম্বর- ১৮/ ০৮-০৫-২০২৩।

সোলায়মান মিয়া জানান, ‘সৌদিতে আমার স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েছে। দ্রুত তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে না পারলে সে আরও অসুস্থ হয়ে পড়বে। নির্যাতনের শিকার হয়ে সে মানসিকভাবেও ভেঙে পড়েছে। দেশে না আসতে পারলে আত্মহত্যা ছাড়া তার কোনও পথ থাকবে না বলেও সে আমাকে টেলিফোনে বলেছে।’

সোলায়মান মিয়া বলেন, ‘আমার স্ত্রীর কথা শুনে আমি রিক্রুটিং এজেন্সি স্টার লাইন এসোসিয়েটের অফিসে গিয়েছি। কিন্তু তারা আমার কথা শুনতে চায় না। পরবর্তী সময়ে তাদের অনেক অনুরোধ করলে তারা আমার স্ত্রীকে দেশে ফেরত আনার বাবদ ৪ লাখ টাকা দাবি করে। কিন্তু এতো টাকা আমি কোথায় পাবো? আমাদের এতো টাকা তো নেই। অভাবের সংসারে ভাগ্য ফেরাতেই তো বৈধভাবে আমার স্ত্রীকে বিদেশে পাঠাতে তাদের কাছে গিয়েছিলাম। কিন্তু তারা আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। আমি কোনও কূল-কিনারা না পেয়ে বিমানবন্দর আর্মড পুলিশের কাছে অভিযোগ দিয়েছি।’

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ‘হাসি আক্তার ও তার স্বামী সোলায়মান মিয়া জানুয়ারি মাসে রিক্রুটিং এজেন্সি স্টার লাইন এসোসিয়েট অফিসে এসে সৌদি যাওয়ার বিষয়ে কথা বলতে আসেন। মাসে ১ হাজার রিয়াল বেতন সৌদিতে চাকরি দেওয়ার কথা বলে এই এজেন্সি। পরবর্তী সময়ে এই এজেন্সি ২ ফেব্রুয়ারি হাসি আক্তারকে সৌদি আরবে পাঠায়। তবে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর কোনও প্রকার প্রশিক্ষণ ও ছাড়পত্র (স্মার্ট কার্ড) ছাড়াই এয়ারপোর্ট কন্ট্রাক করে হাসিকে সৌদি পাঠায় এই এজেন্সি। সেখানে যাওয়ার পর থেকেই হাসিকে সেখানকার গৃহকর্তা প্রতিনিয়ত যৌন, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করছেন। ঠিকমতো খাবার না দিয়ে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে অতিরিক্ত কাজ করায়।’

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাউদ্দিন মিয়া। তিনি বলেন, সৌদি আরবে গৃহকর্মী পাঠিয়ে নির্যাতনের অভিযোগে রিক্রুটিং এজেন্সি স্টার লাইন এসোসিয়েটের মালিকসহ দুই জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।