উপকূল অতিক্রম শুরু করেছে ‘মোখা’, বড় অংশই যাবে মিয়ানমারে

অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা উপকূল অতিক্রম করতে শুরু করেছে। এর গতিবেগ এখন ঘণ্টায় ২১৫ কিলোমিটার। গতিবেগ অনুযায়ী এর বেশিরভাগ অংশ এবং ঝড়ের কেন্দ্র যাবে উত্তর মিয়ানমারের দিকে। আর বাকিটা পড়বে কক্সবাজার উপকূলে।

প্রসঙ্গত, এর আগে ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’ এর বেশিরভাগ ছিল ভারতের দিকে, বাংলাদেশের দিকে ছিল অল্প। একমাত্র ‘সিডর’ এর সময় পুরো ঝড় বাংলাদেশের ওপর দিয়ে গিয়েছিল।

আবহাওয়া অধিদফরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান বলেন, প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার ব্যাস ৫০০ কিলোমিটারের বেশি। এর অগ্রভাগের প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের অনেক এলাকায়। তবে সিডরের সঙ্গে মোখার তীব্রতার তুলনা করা যাবে না। 

তিনি বলেন, মোখা দেশের শেষ সীমানা দিয়ে অতিক্রম করতে শুরু করেছে। এর অর্ধেক আছে মিয়ানমারের দিকে, অর্ধেক আমাদের দিকে। পরিচালক বলেন, সিডরের পুরোটাই বাংলাদেশের ওপর দিয়ে গেছে। সেটার ক্ষয়ক্ষতি পুরোটাই গেছে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে। মোখার আওতায় বাংলাদেশের এলাকা কম পড়বে।

বাংলাদেশের কক্সবাজার, টেকনাফ ও সেন্টমার্টিন মোখার কারণে সবচেয়ে ঝুঁকিতে আছে। কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরের জন্য ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, ঘূর্ণিঝড়ের ফলে সৃষ্ট বাতাসের গতিবেগ যদি ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার হয়, তাকে ঘূর্ণিঝড় বা ট্রপিক্যাল সাইক্লোন বলা হয়। গতিবেগ ৮৯ থেকে ১১৭ কিলোমিটার হলে তাকে বলা হয় তীব্র ঘূর্ণিঝড় বা ‘সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম’। আর বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১১৮ থেকে ২১৯ কিলোমিটার হলে তখন সেটিকে হ্যারিকেন গতিসম্পন্ন ঘূর্ণিঝড় বা ‘ভেরি সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম’ বলা হয়। গতিবেগ ২২০ কিলোমিটার বা তার বেশি হলে তাকে ‘সুপার সাইক্লোন’ বলা হয়।

আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, মোখার গতি এখন ঘণ্টায় ২১৫ কিলোমিটার।  যা প্রায় সুপার সাইক্লোনের কাছাকাছি। তবে উপকূলে উঠে আসার পর এর গতি কিছুটা কমে ১৮০ থেকে ১৯০ কিলোমিটার হতে পারে। ফলে এটিকে সুপার সাইক্লোন বলা যাবে না।

আবহাওয়াবিদ শাহীনুল ইসলাম বলেন, ঝড়ের গতি শনিবার সন্ধ্যায় কিছুটা কমে গেলেও রাতে এর গতি বেড়ে যায়। আমরা বলেছিলাম সকাল ৯টায় উপকূল অতিক্রম করতে শুরু করবে। তবে একটু আগেই উপকূল অতিক্রম করতে শুরু করেছে। আজ রবিবার বিকাল বা সন্ধ্যা নাগাদ উপকূল অতিক্রম শেষ করবে। ঝড়ের বেশি অংশ এবং কেন্দ্র যাবে মিয়ানমারের ওপর দিয়ে। বাকিটা যাবে কক্সবাজার উপকূল দিয়ে। ইতোমধ্যে উপকূল জুড়ে ঝড় বৃষ্টি শুরু হয়েছে। আজ দেশের বেশিরভাগ অঞ্চলে এর প্রভাবে বৃষ্টি হতে পারে বলে তিনি জানান।

কী হবে সেন্টমার্টিনের

আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান বলেন, সেন্টমার্টিনে যেহেতু বড় কোনও অবকাঠামো নেই, সেহেতু ঝড়টি কোথাও বাধা পাবে না। সরাসরি দ্বীপে এসে আঘাত করবে। ঝড়ের কেন্দ্র যখন সেন্টমার্টিন অতিক্রম করবে তখন দ্বীপের এই পাড় থেকে পানি ওই পাড়ে চলে যাবে। ঝড়ের তীব্রতার কারণে কিছু সময়ের জন্য তলিয়ে যেতে পারে দ্বীপটি। তবে পানি তো স্থির অবস্থায় থাকবে না। সে হিসেবে সে পানি সরেও যেতে পারে। পরিস্থিতি পুরোটাই নির্ভর করছে ঝড়ের গতির ওপর।

দেশের অন্য এলাকায় বৃষ্টি হবে কিনা

আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, ঝড়টি উপকূল অতিক্রম করে গেলে দেশের বিভিন্ন এলাকায় মেঘ ছড়িয়ে পড়বে। ইতোমধ্যে ঢাকার আকাশও মেঘলা। আবহাওয়াবিদ শাহিনুল ইসলাম বলেন, ঝড়ের প্রভাবে ঢাকা ও সিলেটে বৃষ্টি হতে পারে আজ।

তবে আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক বলেন, আগামীকাল সোমবার নাগাদ মেঘ প্রায় সারাদেশে ছড়িয়ে যাবে। এ সময় ঢাকায় ও সিলেটে বৃষ্টির পরিমাণ বাড়তে পারে।