প্রান্তিক মানুষের জন্য নেদারল্যান্ডসে অভিনব পরিষেবা

স্বল্প আয়ের বা সমাজের প্রান্তিক মানুষ প্রায়ই অবহেলিত হন৷ নেদারল্যান্ডসে এক অভিনব প্রকল্পের মাধ্যমে এমন মানুষের সহায়তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে৷ কর্তৃপক্ষ ও আবাসন কোম্পানির উপর আস্থা হারিয়ে তারা এই পরিষেবার সুযোগ নিচ্ছেন৷

আমস্টারডাম শহরে সকাল নয়টার সময়ে কাজের শুরুতেই কার্গো বাইক নিয়ে একদল মানুষ হাজির৷ ফিক্সব্রিগেড অ্যাসোসিয়েশনের ফ্রান্সিস লাঙেডাইক নিজেদের কাজ সম্পর্কে বলেন, ‘বৃষ্টি, বরফ বা ঝড় – যাই হোক না কেন, আমাদের সরঞ্জাম গুছিয়ে সাইকেলে উঠতেই হয়৷ যে কোনও আবহাওয়ায় আমরা গ্রাহকদের কাছে যাই৷ তারা তো আমাদের উপর নির্ভর করে৷’

ফ্রান্সিস ফিক্সব্রিগেডের তত্ত্বাবধায়ক ও সহ প্রতিষ্ঠাতা৷ ভলান্টারি কাজ হিসেবেই সেই উদ্যোগ শুরু হয়েছিল৷ ইতিমধ্যে তাঁরা সেই কাজকে মূল পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন৷ ছাত্রছাত্রীদের এক ফ্ল্যাটে ডাক পেয়ে চারদিকে চোখ বুলিয়ে গোলমাল ধরা পড়লো৷ ফ্রান্সিস বিশেষ ডিভাইসের সাহায্যে পর্যবেক্ষণ করে বলেন, ‘নিচে, দরজার কাঠামোর ধারে নীল একটা অংশ চোখে পড়ছে৷ অর্থাৎ সেখান দিয়ে বাতাস ঢোকে৷ হাত রাখলেই বাতাসের স্রোত টের পাওয়া যায়৷ উপরে ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আর নিচে মাত্র পাঁচ ডিগ্রি৷’’

খারাপভাবে ইনসুলেটেড জানালা প্রায়ই দেখা যায়৷ নেদারল্যান্ডসের প্রতি তিনটি ফ্ল্যাটের মধ্যে দুটিতে ইনসুলেশন ব্যবস্থা অত্যন্ত খারাপ৷ এই ফ্ল্যাটে দরজার সিল কোনওরকমে দরজার কাঠামোর সঙ্গে লাগানো রয়েছে৷ ফ্রান্সিস লাঙেডাইক বলেন, ‘এই জানালা কংক্রিটের মাঝে ফাঁক ছাড়া আর কিছুই নয়৷ ভালো করে সিমেন্ট দিয়ে বসানোর বদলে জানালা কোনও রকমে লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ আমাদের সবকিছু নতুন করে করতে হবে৷’

লিসা নুসি ও মারিস্কা গুনসিং-এর ফ্ল্যাটে আরও অনেক কাজ রয়েছে৷ সদর দরজার সিল খারাপ হয়ে গেছে৷ প্রায় কোথাও আধুনিক বিদ্যুৎ-সাশ্রয়ী এলইডি বাতি নেই৷ লিসা বলেন, ‘এখানে যে অনেক কিছুই আদর্শ নয়, আমি তা আগেই জানতাম৷ তবে কীভাবে সে সব বদলানো সম্ভব, সেটা জানতাম না৷ ফ্ল্যাট কোম্পানির কাছে জানতে চেয়েছিলাম৷ তবে তারা মোটেই সাহায্য করে না৷’

বাস্তব পরিস্থিতি সম্পর্কে মারিস্কা বলেন, ‘ত্রুটির প্রতি নজর আকর্ষণ করতে আমরা সত্যি চার বার টেলিফোন করেছিলাম৷ একজনকে পাঠিয়েছিল বটে, কিন্তু ইনসুলেশনের সমস্যার সমাধান করতে তারা কিছুই করেনি৷’ এবার মুশকিল আসান হিসেবে ফিক্সব্রিগেড এগিয়ে এসেছে৷ তবে শুধু স্বল্প আয়ের মানুষ এই পরিষেবা নিতে পারেন৷ বিনামূল্যেই সেই সুবিধা পাওয়া যায়৷

সংঘের কর্মীদের জন্য অর্থ আসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অনুদান থেকে৷ ইতিমধ্যে অন্যান্য শহরেও সেই প্রকল্পের অনুকরণ করা হচ্ছে৷ মোটামুটি একই ধরনের গ্রাহকদের এমন পরিষেবা দেওয়া হয়৷ ফ্রান্সিস লাঙেডাইক বলেন, ‘আমাদের গ্রাহকরা হয় সামাজিক ভাতা পান অথবা অন্য কোনওভাবে সরকারের সহায়তার উপর নির্ভর করেন৷ অনেকের শারীরিক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, অন্যরা প্রায় এক বর্ণ ডাচ বলতে পারেন না৷ খারাপ ভাষাজ্ঞান নিয়ে ফ্ল্যাট কোম্পানির সঙ্গে ত্রুটির কথা বলতে গেলে দ্রুত এড়িয়ে যাওয়া হয়৷ এমনটা আমরা প্রায়ই শুনি৷’

বর্তমানে নেদারল্যান্ডসে আনুমানিক প্রায় সাড়ে সাত লাখ মানুষ জ্বালানির ব্যয় সামলাতে নাজেহাল হচ্ছেন৷ তাদের মধ্যে অনেকেই ফ্রান্সিস ও তার সহকর্মীদের শরণাপন্ন হচ্ছেন৷ বর্তমানে শুধু আমস্টারডাম শহরেই ছ’টি টিম সমান্তরালভাবে কাজ করছে৷ ফ্রান্সিস জানান, ‘আমাদের যন্ত্রপাতি, সরঞ্জাম ও উপাদানের অভাব রয়েছে৷ মাসে একবারের বদলে এখন সপ্তাহে একবার উপাদানের অর্ডার দিতে হচ্ছে৷ ফলে দেখা যাচ্ছে, যে আমাদের টার্গেট গ্রুপের মানুষের দৈন্য কতটা বেশি৷’

কর্তৃপক্ষের প্রতি এমন মানুষের আস্থা প্রায়ই খুব কম৷ ফ্রান্সিসের মতে, ফিক্সব্রিগেডের মতো পাড়ার নিজস্ব এমন প্রকল্প তাদের কাছে অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য৷ তবে এমন সাফল্যের অন্যতম পরিণাম হল, বেশ কয়েক মাস পর্যন্ত ফিক্সব্রিগেডের নাগাল পাওয়ার জো নেই৷