বৈধ লাইসেন্স ছাড়াই খাদিকুল গ্রামে তৈরি হয় বাজি, কে এই কৃষ্ণপদ বাগ?‌ মৃত আট

এগরার খাদিকুল গ্রামে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। আজ, মঙ্গলবার বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই ছিল যে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়েছে তিনজনের। পরে আরও পাঁচজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। মোট সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। এগরার খাদিকুল গ্রামে একাধিক বাড়িতে অবৈধভাবে তৈরি হয় বাজি। প্রত্যেকটি বাড়িতে বেআইনিভাবে মজুত থাকে বাজির মশলা। কোন বৈধ লাইসেন্স নেই তাদের। পরিবারগুলি বাজি তৈরি করেই টাকা উপার্জন করে। বেশিরভাগ বাড়িতে এভাবেই বছরের পর বছর বাজি তৈরির কাজ চলছে। আজ বিস্ফোরণ হতে বিষয়টি সামনে আসে। এগরা এক নম্বর ব্লকের সাহারা গ্রাম পঞ্চায়েতের খাদিকুল গ্রামে বাজি কারখানাতে আজ, মঙ্গলবার ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। কৃষ্ণপদ বাগ ওরফে ভানু বাগের বাড়িতে বিস্ফোরণ হতেই অবৈধ কারবার সামনে আসে।

কে এই কৃষ্ণপদ বাগ?‌ বিজেপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এই কৃষ্ণপদ বাগ ওরফে ভানু বাগ তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী। পুলিশ এই ব্যক্তিকে আগেও গ্রেফতার করেছিল। কিন্তু সে জামিন পেয়ে যায়। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, এটি বেআইনি বাজি কারখানা। যার মালিক কৃষ্ণপদ বাগ। তাকে ২০২২ সালের ১৯ নভেম্বর গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। পরে আদালত থেকে জামিন পায় সে। এই বিস্ফোরণের ঘটনার পর থেকেই পলাতক কৃষ্ণপদ। তৃণমূলের লোক হলে গতবার কালীপুজোর সময় রাজ্য পুলিশ কেন গ্রেফতার করল?‌ এই প্রশ্ন তুলেই বিজেপির অভিযোগ খণ্ডন করেন মুখ্যমন্ত্রী। এই ব্যক্তি আসলে সকলের থেকেই সুবিধা নিয়ে থাকে। আর অবৈধভাবে বাজি তৈরি করে। সেগুলি অন্যান্য জায়গায় সাপ্লাই দিয়ে মুনাফা করে। যারা মারা গিয়েছে তারা শ্রমিক। এই বিস্ফোরণের পরই গা–ঢাকা দেয় কৃষ্ণপদ ওরফে ভানু।

এদিকে বাজি কারাখানার ভিতর ছিন্নভিন্ন হয়ে দেহ পড়ে রয়েছে। বিস্ফোরণে আস্ত বাড়ির চাল উড়ে গিয়েছে। বাড়িতে থাকা ব্যক্তিদের দেহ বাইরে ছিটকে এসে রাস্তার পড়েছে। ভয়াবহ বিস্ফোরণের ফলে গোটা এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। খবর পেয়ে পুলিশ ও দমকলকর্মীরা ঘটনাস্থলে যায়। এই ঘটনায় এনআইএ তদন্তের দাবি করেছে বিজেপি। বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার টুইট করেছেন। এমনকী তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি লিখেছেন। এনআইএ তদন্ত নিয়ে কোনও আপত্তি নেই বলে জানিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‌কিছুদিন আগে পঞ্চায়েতটা কিনে নিয়েছে বিজেপি। সুতরাং আমাদের পঞ্চায়েতও নেই। ওদের বলুন রাজনীতি না করতে। এটা বিজেপি, তৃণমূল বা সিপিএমের ব্যাপার নয়। ওটা ওড়িশার বর্ডার। ওই পঞ্চায়েত বিজেপির। ওদের দেখা উচিত ছিল। দু’মাস আগে নির্দলকে সভাপতি রেখে বিজেপি পঞ্চায়েত করেছে। মালিক পালিয়েছে ওড়িশায়। আমরা টেনে আনব।’‌ স্থানীয় সূত্রে খবর, বেআইনিভাবে এখানে বাজি কারখানা চলছিল। গোটা গ্রামেই বেআইনি বাজি তৈরি হয় এবং তার মশলা মজুত থাকে। কোন বৈধ লাইসেন্স নেই। বিস্ফোরণের ফলে গোটা এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। আগেও পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুরে এই ধরনের বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছিল। তবে এই বাড়িতে বাজি না বোমা বানানো হচ্ছিল সেটা পুলিশ খতিয়ে দেখছে।