কাঠগোলাপ আর কৃষ্ণচূড়ার রঙে রঙিন বাহাদুর শাহ পার্ক

ইতিহাস ঐতিহ্যের ধারক-বাহক রাজধানীর পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্ক। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ঐতিহ্য হারানোর শঙ্কা নিয়ে বিভিন্ন হুমকির মুখে পড়েও আজও সগৌরবে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে আছে পুরান ঢাকার মাঝে। সবকিছুকে ছাপিয়ে এখন কাঠগোলাপ আর কৃষ্ণচূড়ার রঙে রঙিন বাহাদুর শাহ পার্ক। ভোরের নরম আলো, উত্তপ্ত দুপুর কিংবা সন্ধ্যা নামার আগেও এই দুই দৃষ্টিনন্দন ফুলের সৌন্দর্যে বিমোহিত হচ্ছে পুরান ঢাকার স্থানীয় বাসিন্দা, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীসহ দূরদূরান্ত থেকে আসা লোকজন।

ঐতিহ্যবাহী এই পার্কে গাছে গাছে কৃষ্ণচূড়া ফুল দেখে মনে হয়, গ্রীষ্মের খরতাপের সঙ্গে ডালে ডালে যেন আগুন লেগেছে। গ্রীষ্মকাল আসতেই নিজেকে মেলে ধরেছে এই ফুল। কৃষ্ণচূড়ার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে তাই তো জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন, ‘কৃষ্ণচূড়ার রাঙা মঞ্জুরি কর্ণে/আমি ভুবন ভোলাতে আসি গন্ধে ও বর্ণে’। অন্যদিকে সাদা আর চোখ জুড়ানো লাল কাঠগোলাপ দেখে প্রেমে পড়ে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। কৃষ্ণচূড়া আর কাঠগোলাপ ছাড়াও পুরান ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় এখন সোনালু ফুল দেখতে পাওয়া যায়। প্রকৃতিতে এসব বাহারি ফুল মেলে ধরেছে তার আপন রঙ। শোভা ছড়াচ্ছে পুরান ঢাকাজুড়ে।

পুরান ঢাকা ঘুরে দেখা যায়, মানুষ কৃষ্ণচূড়া ফুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে ফোনে তা ক্যামেরা বন্দি করছেন। কিছুক্ষণ পরপরই মোটরসাইকেল বা গাড়ি থামিয়ে মানুষকে ছবি তুলতে দেখা যায়। কিশোর-কিশোরীরা কৃষ্ণচূড়া ফুলের সঙ্গে নিজেকে মুহূর্ত বন্দি করছেন। কাঠগোলাপ আর কৃষ্ণচূড়ার রঙে রঙিন বাহাদুর শাহ পার্ক

বাহাদুর শাহ পার্কের সামনে কৃষ্ণচূড়া ফুলের ছবি তুলেছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী তমা। জানান, কৃষ্ণচূড়া আর কাঠগোলাপ এত সুন্দর যে ছবি না তুলে থাকতে পারি না। কৃষ্ণচূড়া ফুল দেখলে মনে অন্যরকম উচ্ছ্বাস কাজ করে। আমি প্রতিদিন ক্যাম্পাসে যাওয়ার সময় ছবি তুলি, আবার ক্যাম্পাস থেকে ফেরার পথেও তুলি। গ্রীষ্মকালে গরমের তীব্রতা উপেক্ষা করে সুন্দর সুন্দর ফুল দেখতে পাওয়ায় বেশ আনন্দদায়ক।

অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে প্রকৃতি তার আপন রঙ হারিয়ে ফেলেছে বলে মন্তব্য করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪তম ব্যাচের আরেক শিক্ষার্থী সুব্রত। তিনি বলেন, গাছ কেটে বহুতল ভবন নির্মাণের ফলে এখন এসব প্রাকৃতিক দৃশ্য বিলীন হয়ে গেছে। পুরান ঢাকায় তেমন গাছপালা দেখা যায় না বললেই চলে। এই বাহাদুর শাহ পার্ক এক কথায় পুরান ঢাকার হৃৎপিণ্ড। দিনশেষে একটু স্বস্তির নিশ্বাস নিতে সবাই এখানে ভিড় জমায়। আর এখন এই ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করছে। আমাদের উচিত পুরান ঢাকার প্রতিটি অলিগলিতে গাছ লাগানো। বিশেষ করে এমন সুন্দর সব ফুল গাছ। তাহলে আমরা এমন মনোরম দৃশ্য আরও বেশি দেখতে পাবো। কাঠগোলাপ আর কৃষ্ণচূড়ার রঙে রঙিন বাহাদুর শাহ পার্ক

ভোরের সূর্যোদয়ের পরেই রাস্তায় দাঁড়িয়ে আনমনে কৃষ্ণচূড়া আর কাঠগোলাপের সৌন্দর্য উপভোগ করছিলেন বৃন্দাবন নামে এক পথিক। সাহিত্যের ভাষায় তিনি অবিরত বলতে থাকেন, নগরীর রুক্ষ প্রকৃতি যেন গ্রীষ্মের কৃষ্ণচূড়া, সোনালু আর কাঠগোলাপের সৌন্দর্যে প্রাণ ফিরে পেয়েছে। এই তো কিছু দিন আগেই বিদায় নিয়েছে বসন্ত। আগমন ঘটেছে গ্রীষ্মের। বসন্তে প্রকৃতির এক রূপ ছিল, এখন গ্রীষ্মে আরেক রূপ। প্রচণ্ড রোদে যখন জনজীবন অতিষ্ঠ ঠিক তখন ইট-পাথরের এই নগরীর মানুষের কষ্ট, ক্লান্তি ভুলিয়ে দিয়ে চোখের ও মনের শান্তি দিতেই যেন ফুটেছে কৃষ্ণচূড়া। আর তার নিজস্ব রঙ দিয়েই সতেজ করে দেয় আমার মতো নগরীর ক্লান্ত পথিকের মন।