৫১টি ক্রেডিট কার্ড নিয়ে কী করছেন মুর্শিদাবাদের সুমন্ত! ফ্রি গিফ্টের ফন্দিফিকির

বিদেশ ভ্রমণ এখনও বেশিরভাগ ভারতীয়ের কাছে স্বপ্নের মতো। টাকা থাকলেও চড়া টিকিটের দাম, অতিরিক্ত খরচের কথা ভেবে অনেকে পিছিয়ে আসেন। এমন পরিস্থিতিতে ক্রেডিট কার্ডকে বুদ্ধি করে কাজে লাগিয়েই নিজের স্বপ্ন পূরণ করছেন অনেকে। স্ট্র্যাটেজিক পয়েন্ট কাজে লাগিয়ে অনেকেই ফ্লাইটের টিকিট বা হোটেলের পিছনে এক পয়সা খরচ না করেই বিশ্ব-ভ্রমণ করে আসছেন। নিত্য নৈমিত্তিক খরচ ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে মিটিয়েই বড় বড় পয়েন্ট জোগাড় করছেন তাঁরা। এমনই একজন হলেন কাশিফ আনসারি। মাত্র ২৯ বছর বয়স। আর এই বয়সেই ২ মাসের বিশ্ব ভ্রমণের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়তে চলেছেন তিনি। আরও পড়ুন: LRS: বিদেশে সাত লাখ টাকা অবধি ডেবিট,ক্রেডিট কার্ডে খরচে কোনও টাকা কাটা হবে না-কেন্দ্র

এমনই আরও একজন অঙ্কুশ দীক্ষিত(৩৩)। সময়ের সঙ্গে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতে করতে তিনি বড় অঙ্কের পয়েন্ট-রিওয়ার্ডস জমিয়ে ফেলেছেন। আর কার মাধ্যমে প্রায় সম্পূর্ণ বিনামূল্যেই সপরিবার দিল্লি থেকে ডাবলিন (আয়ারল্যান্ড)-এর মধ্যে ১৫টি বিজনেস ক্লাস ফ্লাইটের টিকিট পেয়ে গিয়েছেন। গুরগাঁও-এর এই দুঁদে ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তা জানালেন, ‘ফ্লাইটের টিকিটের জন্য আমার এমনিতে প্রায় ২৫ লাখ টাকা খরচ যেত। পুরোটাই ফ্রি-তে হয়ে গিয়েছে।’

তবে কাশিফ বা অঙ্কুশরা কিন্তু মোটেও ব্যতিক্রমী নন। নতুন প্রজন্মের এক বড় অংশই বুদ্ধি করে ক্রেডিট কার্ডকে কাজে লাগাচ্ছেন। রিওয়ার্ড পয়েন্ট সংগ্রহ করার জন্য বেশ কয়েকটি ক্রেডিট কার্ড একসঙ্গে নিয়ে রেখে দিচ্ছেন। আর সেটি কাজে লাগিয়েই বেড়ানোর খরচ অনেক কমিয়ে আনছেন। ফ্লাইট ও হোটেলে থাকার যে বড় খরচ, সেটাই বিনামূল্যে পেয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। কিন্তু এত পয়েন্ট পেতে গেলে তো খরচও অনেক করার কথা! সেটা কীভাবে হবে?

এহেন ক্রেডিট কার্ড বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আলাদা করে বড় কিছু খরচ করতে হয় না। নিয়মিত যে খরচ করেন, সেগুলিই ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে করেন। যেমন ধরুন স্মার্টফোন। এখন অল্পবয়সীরা অনেকেই একটু দামি ফোন ব্যবহার করেন। নিয়মিত সেটি বদলান। সেই ফোন কেনার সময়েই ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করছেন। ল্যাপটপ, অন্য নানা শখের গ্যাজেট কেনার সময়েও সেই একই বুদ্ধি কাজে লাগাচ্ছেন। তাছাড়া ই-কমার্স সাইটের যাবতীয় কেনাকাটা, শপিং, সিনেমা এবং রেস্তোরাঁয় খাওয়াদাওয়া ইত্যাদি সবেতেই ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করছেন। আর তার মাধ্যমেই ধীরে ধীরে বড়সড় রিওয়ার্ড পয়েন্ট জমে যাচ্ছে তাঁদের নামে।

‘আমি তো আমার সমস্ত রোজের খরচের জন্যই ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করি। বাড়ি ভাড়া, মুদি, কেনাকাটা থেকে শুরু করে বাইরে খাওয়া, সবেতেই। এমনকি ছোট ছোট খরচের জন্যও সেই ক্রেডিট কার্ড। ট্যাক্সি ভাড়া, সবজি কেনাকাটার জন্য আমি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করি,’ জানালেন কাশিফ আনসারি। তিনি ওপি জিন্দাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। অর্থাত্, স্বচ্ছল হলেও, তিনি যে ভীষণ ধনী ব্যক্তি, এমনটা ভাবারও কোনও কারণ নেই। এমনিতে হয় তো এভাবে ২ মাস ধরে বিদেশ ভ্রমণ কখনই করতে পারতেন না। কিন্তু এই ক্রেডিট কার্ডকে বুদ্ধি করে কাজে লাগিয়েই তিনি স্বপ্ন বাস্তবায়িত করছেন। তিনি জানালেন, ‘এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা যে ক্রেডিট কার্ডে পুরষ্কার জিততে হলে মোটা টাকা ব্যয় করতে হবে। আপনার দৈনন্দিন খরচেই কাজ হয়ে যাবে।’

আর ব্যবসা থাকলে তো কথাই নেই। কারণ সেক্ষেত্রে আপনার ব্যক্তিগত খরচের পাশাপাশি, ব্যবসার মূলধন খরচও এই ক্রেডিট কার্ড দিয়েই করতে পারবেন। আর তার জেরে আরও বেশি বেশি পয়েন্ট পাবেন।

মুর্শিদাবাদের ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তা সুমন্ত মণ্ডলের কথাই ধরা যাক। তাঁর ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে মাসিক খরচ গড়ে ২ লাখ টাকার আশেপাশে। ‘আমার ব্যক্তিগত খরচ তেমন নয়। কিন্তু ব্যবসার জন্য খরচ হয়। আর সেটার জন্য বিজনেস ক্রেডিট কার্ড কাজে লাগাই। যেমন ধরুন ভেন্ডর পেমেন্ট, বিজ্ঞাপনের খরচ, সফ্টওয়্যার সাবস্ক্রিপশন এবং হোস্টিং খরচ, এগুলি সব ক্রেডিট কার্ডে মেটাই,’ ব্যাখা করলেন তিনি। মোট ৫১টি ক্রেডিট কার্ড আছে তাঁর কাছে। 

তবে মনে রাখতে হবে, এগুলি কিন্তু বেশ কিছু শর্তাবলীর উপর নির্ভরশীল। যেমন ধরুন অঙ্কুশ দীক্ষিত ২৫ লাখ টাকার ১৫টি বিজনেস ক্লাস ফ্লাইট টিকিট বিনামূল্যে পেয়েছেন। এতে প্রায় ১০ লাখের বেশি এয়ার-মাইল পাবেন তিনি। এটি প্রায় ১৬ লাখ রিওয়ার্ড পয়েন্টের সমান। এর জন্য তাঁকে কার্ড দিয়ে প্রায় ৮০ লাখ টাকা খরচ করতে হয়েছে। তবে এই বিশাল পয়েন্ট জমেছে। ‘গত এক বছরে, আমার দু’টি বড় খরচ হয়েছে। প্রথমত, আমার বিয়ে। দ্বিতীয়ত বাড়ি সংস্কার। নয় তো সাধারণত ক্রেডিট কার্ডে আমার বার্ষিক ৩০-৪০ লক্ষ টাকা খরচ হয়,’ জানালেন তিনি। তবে প্লেনের টিকিট ফ্রি-তে পেলেও, নিজের পকেট থেকে ৩.৫ লক্ষ টাকা কর দিতে হয়েছে তাঁকে।

ক্রেডিট কার্ডে পেমেন্টের ধরণের উপরেও রিওয়ার্ড পয়েন্ট নির্ভর করে। উদাহরণস্বরূপ, কিছু ক্যাশব্যাক কার্ডে ইউটিলিটি এবং মুদির মতো সাধারণ খরচ ধরা হয় না। ফলে তাতে পয়েন্ট না-ও মিলতে পারে।

ফলে আগামিদিনে শুধুমাত্র জিনিস কেনার সুবিধার কথা ভেবে ক্রেডিট কার্ড নেবেন না। আগে আপনার হাতের নাগালে সমস্ত ক্রেডিট কার্ডের অফার, আপনি কীভাবে খরচ করবেন, তাতে সম্ভাব্য কত রিওয়ার্ড পেতে পারেন, তার একটি আন্দাজ করুন। আর তারপরেই পছন্দের ২-৩টি ক্রেডিট কার্ড বেছে নিন। সেই সঙ্গে ক্রেডিট পেমেন্টে কোনটিতে সবচেয়ে বেশি সুবিধা, ও বার্ষিক ক্রেডিট কার্ড ফি কত, তা-ও দেখে নিতে ভুলবেন না। আরও পড়ুন: বিদেশে ক্রেডিট কার্ড লেনদেনে TCS কাটা নিয়ে ভুয়ো দাবি তৃণমূল নেতার, শুধরে দিল PIB

এই খবরটি আপনি পড়তে পারেন HT App থেকেও। এবার HT App বাংলায়। HT App ডাউনলোড করার লিঙ্ক https://htipad.onelink.me/277p/p7me4aup