রেলের ছাপাখানায় এবার ঝুলল বন্ধের নোটিশ, হাওড়ায় কর্মীদের তুমুল বিক্ষোভ

আবার রেলের ছাপাখানা বন্ধ করার নির্দেশিকা জারি করল কেন্দ্রীয় সরকার। এই খবর প্রকাশ্যে আসতেই তেতে উঠল কর্মচারীরা। হাওড়ায় তাঁরা রীতিমতো বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করল। কারণ কেন্দ্রীয় সরকার ২০১৭ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে মোট চারবার পূর্ব রেলের প্রিন্টিং প্রেস বা ছাপাখানা বন্ধের নির্দেশিকা জারি করেছে। এবারও একই নোটিশ জারি করার প্রেক্ষিতে ক্ষেপে উঠেছে কর্মচারীরা। এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সোমবার বিক্ষোভ দেখাল ইস্টার্ন রেলওয়ে মেন্স কংগ্রেসের (ইআরএমসি) প্রিন্টিং প্রেস ইউনিট। একটা সচল প্রেস কোনওভাবেই বন্ধ করা যাবে না বলে বিক্ষোভ দেখানো হয়। চালু প্রেস বন্ধ না করার দাবিতেই বিক্ষোভ।

এই প্রেসটি রেলের দীর্ঘদিনের। এটি হাওড়ার মুখরাম কানোরিয়া রোডে অবস্থিত। রেলের সংরক্ষিত ও অসংরক্ষিত টিকিট দীর্ঘদিন যাবৎ এখানে ছাপা হয় বলে খবর। সেখানে হঠাৎ তা বন্ধ করার নোটিশে কর্মহীন হওয়ার আশঙ্কা করছেন অনেকে। আর তা থেকে বিক্ষোভের সূত্রপাত। আজ, মঙ্গলবার এই নিয়ে কর্মচারীরা এবং সংগঠন বৈঠকে বসে। সেখানে তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন, কোনওভাবেই এই প্রেসকে বন্ধ করতে দেওয়া যাবে না। বরং আন্দোলন আরও তীব্র করতে হবে। এখানে মানি অর্ডার–সহ অন্যান্য ছাপার কাজও হয় প্রেসটিতে। পূর্ব রেল তো বটেই, সংলগ্ন রেল জোনগুলিরও প্রয়োজনীয় কাজ এই ইউনিট করে থাকে। তারপরেও ৩ মে এখানে ‘ক্লোজার’ নোটিশ দেওয়া হয়েছে। যা নিয়ে এখন তপ্ত হয়ে রয়েছে বাতাবরণ।

এদিকে কংগ্রেস প্রভাবিত শ্রমিক সংগঠনের প্রতিবাদ কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। এখন প্রশ্ন উঠছে, কেন এই চালু প্রেস বন্ধ করতে চাইছে?‌ এই বিষয়ে সংগঠনের সম্পাদক বিশ্বরূপ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‌প্রেসটি বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে মোদী সরকার। এখানকার কাজগুলি বাইরে পাঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। অথচ ২০০০ সালের পরে এখানে বিদেশি মেশিন এসেছে। প্রেসটিতে তৈরি হয়েছে আধুনিকীকরণ। এখানে কাজও হচ্ছে পুরোমাত্রায়। আগেও তিনবার একই নির্দেশিকা জারি হয়। আমাদের প্রতিবাদের ফলেই তা স্থগিত হয়েছিল।’‌

আর কী জানা যাচ্ছে?‌ অন্যদিকে এখানে চারশো কর্মী চাকরি করেন। এখন তাঁরা সিঁদুরে মেঘ দেখতে শুরু করেছেন। ছাপাখানা যদি বন্ধ হয়ে যায় তাহলে কর্মহীন হয়ে পড়তে হবে। তাহলে সংসার চলবে কী করে?‌ কর্মীদের একটা অংশ বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কারণ তাঁরা মনে করেন, একমাত্র তিনিই পারেন প্রতিবাদের ঝড় তুলতে। তাতে আটকে যেতে পারে বেসরকারির হাতে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা। যদিও কেন্দ্রীয় সরকার তাঁদের অন্যান্য বিভাগে বদলি করার পরিকল্পনা নিয়েছে বলে সূত্রের খবর। আর কর্মচারীরা বলছেন, ‘‌কর্মজীবনের শেষ পর্যায়ে পৌঁছে এই নির্দেশ আমরা মেনে নেব না।’‌