Coromandel Express Accident: করমণ্ডলে মোবাইলের আলোতে শুরু করেছিলেন উদ্ধারকাজ, জানুন সেই হিরোদের কথা, গ্রাউন্ড জিরোতে HT

দেবব্রত মোহান্তি

পূর্ণচন্দ্র মালিক। প্রান্তিক কৃষক। বারিকপুর বাজার থেকে সবে ফিরেছেন। এমন সময়ে বিকট শব্দ। চেন্নাইগামী করমণ্ডল এক্সপ্রেস তখন দুর্ঘটনায়। ঘণ্টায় ১৩০ কিমি বেগে ছুটে আসা ট্রেন বেলাইন হয়ে গিয়েছে। আর একটুও দেরি করেননি পূর্ণচন্দ্র।

ছুটতে শুরু করেন তিনি। হাতে মোবাইলের আলো। চারদিকে উলটে আছে কামরা। একের পর এক কামরার কাঁচ ভাঙতে শুরু করেন তিনি। বাঁচাতেই হবে ওদের। চিৎকার, কান্না, আর্তনাদ। সব কিছুকে ছাপিয়ে যাচ্ছে ভয়াবহ আতঙ্ক। কিন্তু থেমে থাকলে হবে না। পূর্ণচন্দ্র বলেন, কামরার মধ্য়ে ঢুকে পড়ি। কিন্তু দেখলাম অনেকের হাত পা কেটে গিয়েছে। রক্তে ভেসে যাচ্ছে। আমার জামা রক্তে ভিজে গেল। অন্তত ৩০টি দেহ তিনি বের করে আনেন।

সুদর্শন দাস নামে এক শ্রমিক বলেন, মই নিয়ে কামরায় উঠে পড়ি। এরপর একে একে জখমদের বের করে আনি।

রঞ্জন মুর্মু একেবারে প্রথমে উদ্ধারকাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। তিনি বলেন, চোখের সামনে কতজন মারা গেল। তাদের শেষ সময়ে জলটা পর্যন্ত দিতে পারলাম না। এত মানুষ চারদিকে আহত। কী করব কিছু বুঝতে পারছিলাম না। তবু হাল ছাড়িনি।

গণেশ প্রসাদ নায়েক। প্রাক্তন পুলিশ আধিকারিক। বর্তমানে ইসকনের কৃষ্ণ ভক্ত। তিনি বলেন, জানেন ইসকনের ভক্তদের নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ি উদ্ধারে। সব মিলিয়ে ৭১টি দেহ তুলে আনি। এক মহিলা বললেন আমার ১৮ বছরের ছেলে কামরায় আছে। মোবাইলের টর্চ জ্বেলে ভেতরে গিয়ে দেখলাম মৃত অবস্থায় রয়েছে ওই ছেলেটি।

স্থানীয়দের পাশাপাশি এনডিআরএফ, ওডিআরএএফ, ওড়িশা ফায়ার সার্ভিস, ভারতীয় বায়ুসেনা ঝাঁপিয়ে পড়ে উদ্ধারকাজে। এক আর্মি কমান্ডান্ট বলেন, দুটি বগি খালে পড়ে যায়। সেখান থেকে ক্রেন নিয়ে এসে উদ্ধার করাটা অসম্ভব। তবে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।

এদিকে বালাশোর আর ভদ্রকে দেখা যায় যুবকরা রক্ত দেওয়ার জন্য লাইন দিয়েছেন। ওড়িশার মুখ্যসচিব প্রদীপ কুমার জেনা তাঁদের ধন্য়বাদ জানিয়েছেন। বালাশোরে এক রাতেই ৫০০ ইউনিট রক্ত সংগ্রহ করা হয়। এক মহান লক্ষ্যে যাঁরা রক্ত দিয়েছেন তাঁদেরকে অসংখ্য় ধন্য়বাদ। টুইট করেছেন মুখ্যসচিব।

আসলে পূর্ণচন্দ্র, রঞ্জন, রক্তের লাইনে দাঁড়ানো অসংখ্য যুবক,গণেশ প্রসাদ নায়েক তাঁরাই তো আসল হিরো। সেই রিয়েল হিরোদের কুর্নিশ।