Piyush Chawla Shares His IPL Experience, Inspiration Behind Returning And Lot More

আশিস সত্যম,নয়াদিল্লি: আইপিএল মানেই নিজের প্রতিভা বিশ্বের সামনে মেলে ধরার সুযোগ। বছরের পর বছর ধরে আইপিএলের মঞ্চে দুরন্ত পারফর্ম করে যেমন তরুণ বিশ্বের দরবারে নিজের প্রতিভার নিদর্শন দিয়েছেন। ঠিক তেমনই আইপিএল মোহিত শর্মা, পীযূষ চাওলার মতো অভিজ্ঞ তারকাদেরও নিজেদের প্রমাণ করার সুযোগ দেয়। সেই সুযোগকে দু’হাতে গ্রহণ করে নিয়েছেন পীযূষ চাওলা (Piyush Chawla)। নিজের পারফরম্যান্সে দেখিয়ে দিয়েছেন যে তাঁর মধ্যে এখনও অনেক ক্রিকেট বাকি রয়েছে।

গতবারের আইপিএলে পীযূষকে কোনও ফ্র্যাঞ্চাইজিই নিজেদের দলে নেয়নি। সেখান থেকে এ মরসুমে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের (Mumbai Indians) হয়ে সুযোগ পেয়েই নিজের ভেল্কিতে তারকা ব্যাটারদের কুপোকাত করেছেন পীযূষ। নিয়েছেন এক মরসুমে তাঁর কেরিয়ার সেরা ২২টি উইকেট। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের প্লে-অফের পৌঁছনোর অন্যতম কারণই হল পীযূষ চাওলার দুরন্ত। তাঁর দুরন্ত প্রত্যাবর্তন, সাফল্যরহস্য, সবটা নিয়েই এবিপি লাইভকে একান্ত সাক্ষাৎকারে দিলেন পীযূষ।

নিজের সাফল্যরহস্য খোলসা করতে গিয়ে পীযূষ জানান, তাঁর বোলিংয়ে হালকা তারতাম্যই তাঁকে সাফল্য এনে দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘ব্যাটাররা তো আমার গুগলি, রং ওয়ানগুলি সহজেই বুঝে ফেলছিল। উদাহরণস্বরূপ ডেল স্টেইনকেই ধরা যাক। সবাই জানে ওঁ দৌড়ে এসে দ্রুত গতিতে বল করবে এবং সুইং করানোর চেষ্টা করবে, তাও তো স্টেইন ধারাবাহিকভাবে উইকেট নিতেন। তেমনভাবেই আমিও নিজের রং ওয়ানগুলো করেছি, খালি পার্থক্য একটাই যে আমি নিজের বলগুলিতে খানিকটা বৈচিত্র আনতে সক্ষম হয়েছিলাম। সেই কারণেই সাফল্যও পেয়েছি।’

কিন্তু এক মরসুম না খেলেও, আইপিএলে ফেরার অনুপ্রেরণা পেলেন কীভাবে? এক্ষেত্রে পীযূষ জানান তাঁর পুত্রই আদভিকই তাঁর আইপিএলে ফেরার অনুপ্রেরণা। চওলা জানান, ‘আমি যখন কেকেআরের হয়ে খেলতম, তখন আদভিক ম্যাচ দেখতে মাঠে আসত বটে। তবে সেইসময় ওর মাত্র তিন বছর বয়স ছিল। খেলার কিছুই বুঝত না ও, খালি মাঠে এসে পরিবেশটা উপভোগ করত। আমি ১৪ বছর আইপিএল খেলেছি, তবে যখন ও খেলাটা বুঝতে শুরু করল, তখন আমি আর সুযোগ পাচ্ছিলাম না। আমার মাথায় অনেককিছু ঘোরাঘুরি করছিল। আমার খেলা চালিয়ে যাওয়া উচিত কি না, নিশ্চিত ছিলাম না। তখনই আমার পরিবারের তরফে সকলে বলে আর একবার ছেলের জন্য মাঠে ফেরার চেষ্টা করতে। এভাবেই আমার প্রত্যাবর্তনের যাত্রাটা শুরু হয়। আমি কড়া অনুশীলন করি এবং সৌভাগ্যবশত মুম্বই ইন্ডিয়ান্স আমায় দলেও নেয়।’

চাওলাকে এ মরসুমে পাওয়ার প্লে থেকে ইনিংসের ডেথ ওভার, বিভিন্ন সময়ে বল করতে দেখা যায়। ইনিংসের ভিন্ন ভিন্ন সময় বোলিং করার জন্য কী ভিন্ন পরিকল্পনা তৈরি করতেন চাওলা? এ বিষয়ে কেকেআরের হয়ে অতীতে পাওয়ার প্লেতে বোলিং করা তাঁকে সাহায্য করেছে বলেই জানান চাওলা। ‘পাওয়ার প্লে বা ডেথ ওভারে বোলিং করার মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য নেই। আমি খালি ভাল জায়গায় বল রাখার চেষ্টা করি। পার্থক্য বলতে মাঝের ওভারে মন খুলে বল করা যায়, সেখানে পাওয়ার প্লে বা ডেথ ওভারে চাপটা অনেক বেশি থাকে। পাওয়ার প্লেতে কিন্তু আমি অনেকদিন ধরেই বল করি। কেকেআরের হয়ে খেলার সময় আমি পাওয়ার প্লেতে এক, দুই ওভার বল করতামই, তো আমার অভ্যেস আছে।’ দাবি পীযূষ চাওলার।

গত মরসুমে আইপিএলে ধারাভাষ্যকারের ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল চাওলাকে। সেই অভিজ্ঞতাটা বেশ উপভোগই করেছেন বলে জানান তারকা লেগ স্পিনার। তিনি বলেন, ‘আমি গত বছর অবিক্রিত থাকার পর কী করব বুঝতে পারছিলাম না। তখনই আমায় ধারাভাষ্য দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিছু না করার থেকে আমি ধারাভাষ্য দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। অভিজ্ঞতাটা বেশ ভালই ছিল এবং আমি গোটা বিষয়টা উপভোগও করেছি।’ তবে এ মরসুমের আগে নিলামে প্রাক্তন দল মুম্বই ইন্ডিয়ান্স চাওলার দক্ষতায় আস্থা রাখে এবং তাঁকে ৫০ লক্ষ টাকায় দলেও নেয়।

সফল মরসুম শেষে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ফ্র্যাঞ্চাইজির প্রতি নিজের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন চাওলা। তিনি বলেন, ‘সত্যি বলতে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স সবসময়ই আমায় সমর্থন করেছে। আমাকে অনুশীলনের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকায় পাঠানো হয়। তারপরে বিজয় হাজারে, সৈয়দ মুস্তাক আলির মতো ঘরোয়া টুর্নামেন্টগুলিও খেলি আমি। ডিওয়াই পাতিল লিগেও খেলি। আইপিএল শুরু হওয়ার মাসখানেক আগে আমি মুম্বইয়ের ক্যাম্পে যোগ দিই। আইপিএলে মাঠে নামার আগে কিন্তু যথেষ্ট পরিমাণ ক্রিকেট খেলেছিলাম আমি।’

মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের পাশাপাশি তাঁর ঘরোয়া ক্রিকেট দল গুজরাতকেও ধন্যবাদ জানান চাওলা। তিনি যোগ করেন, ‘আমি যখন গুজরাতের হয়ে খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, তখন পার্থিব পটেল আমায় খুব সমর্থন করে। ও আমায় আরও বেশি ম্যাচ খেলার জন্য বলছিল। আমি ১৮-১৯ বছর ধরে ঘরোয়া ক্রিকেট খেললেও, রাজ্যগুলির আয়োজিত ক্যাম্পে যাওয়া একদমই পছন্দ করতাম না আমি। তবে পার্থিবই আমায় সমস্ত ক্যাম্পে যোগ দেওয়ার জন্য রাজি করায়। দিনের শেষে ক্যাম্পে যোগ দেওয়াটা আমার কাজেই লাগে।’

তবে সাদা বলের ক্রিকেটে এই দুর্দান্ত ফর্ম সত্ত্বেও চাওলার কিন্তু লাল বলের ক্রিকেট অর্থাৎ রঞ্জি ট্রফিতে ফেরার কোনও ইচ্ছা আপাতত নেই। আইপিএল শেষেই শুরু হয়েছে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল। এই ফাইনাল নিয়ে চাওলা কিন্তু বেশ উত্তেজিত। ভারতের জয়ের আশা করে তিনি বলেন, ‘এটা বিরাট বড় মঞ্চ। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে পৌঁছনোটা বড় কৃতিত্ব। এ বছর আমরা সকলেই চাই ভারত যেন অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে খেতাব জেতে।’ 

ভারত তথা মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের অধিনায়ক রোহিতের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নিয়ে খোলামেলা পীযূষ। ‘জুনিয়র স্তর থেকে আমি রোহিত শর্মার সঙ্গে প্রচুর ক্রিকেট খেলেছি। অধিনায়ক হিসাবে ও সকলের পাশেই দাঁড়ায়। সতীর্থদের পাশে দাঁড়ানোর কোনও সুযোগ হাতছাড়া করে না। আমি ওকে অনেক সময়ই খেলোয়াড়দের পাশে বসে তাদের সঙ্গে কথা বলতে দেখেছি। বিশেষত যারা সেইসময় পারফর্ম করতে পারছে না, তাদের সঙ্গে ও বেশি করে কথা বলে।’ জানান চাওলা।

৩৪ বছর বয়সি চাওলা নিজের কেরিয়ারের একেবারে শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছেন। তবে তিনি নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে এখনও তেমন কিছু সিদ্ধান্ত নেননি, বরং বর্তমানেই থাকতে চান পীযূষ। ‘দুই-তিন বছর পর হয়তো আপনারা আমায় আমার বাড়িতে বসে থাকতেই দেখবেন। ভবিষ্যৎ নিয়ে এখনই কিছু ভাবছি, বর্তমানেই থাকতে চাই। আমি নিজের প্রক্রিয়া অনুসরণ করে যাচ্ছি। (দেশের হয়ে সুযোগ পাওয়া না পাওয়া) আমার হাতে নেই। নিঃসন্দেহে দেশের হয়ে খেলাটা সবসময়ই গর্বের এবং যদি আবার সুযোগ পাই তাহলে আমার থেকে বেশি খুশি আর কে ই বা হবে।’ বলেন পীযূষ।