গতবছর ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের ওপর হামলা শুরু করেছিল রাশিয়া। তারপর থেকে প্রায় দেড় বছর অতিক্রান্ত। তবে এখনও সেই যুদ্ধ অব্যাহত। এদিকে এই যুদ্ধের মাঝেই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছিল মোদীর। সম্প্রতি আবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গেও মুখোমুখি বৈঠকে বসেছিলেন মোদী। ভারত অনবরত এই যুদ্ধ বন্ধের ডাক দিয়ে এসেছে। তবে আমেরিকা বা তার মিত্র দেশগুলির মতো রাশিয়ার বিরোধিতা করেনি ভারত। বরং সূক্ষ্ম কূটনৈতীতির মাধ্যমে ভারসাম্য বজায় রেখেছে দিল্লি। এরই মাঝে দেশের স্বার্থে রাশিয়ার থেকে সস্তায় জ্বালানি তেল কিনে চলেছে ভারত। অপরদিকে আবার জেলেনস্কির আবেদনে ইউক্রেনকে একাধিবার ত্রাণ সামগ্রী পাঠিয়েছে মোদী সরকার। যদিও এই পরিস্থিতিতে আমেরিকা চাইছিল, ভারত রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও কিছুটা সরব হবে। তবে ভারত কোনও কিছুতেই প্রভাবিত না হয়ে স্বাধীন বিদেশ নীতি অবলম্বন করে চেলেছে। এই পরিস্থিতি মার্কিন সফরের আগে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে মুখ খুললেন মোদী।
মার্কিন সংবাদপত্র ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে দেওয়া এক একান্ত সাক্ষাৎকারে মোদী বলেন, ‘আমরা এই যুদ্ধে নিরপেক্ষ নই। আমরা শান্তির পক্ষে।’ প্রসঙ্গত, ভারত ঐতিহাসিক ভাবে রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ। এবং এর জন্য অনেক অর্থেই ‘দায়ী’ আমেরিকা। ১৯৬৫ সালে আমেরিকার থেকে অস্ত্র কিনতে চেয়েছিল আমেরিকা। তবে ভারতের বদলে পাকিস্তানকে সাহায্য করেছিল আমেরিকা। সেই সময় থেকেই ভারত সোভিয়েত ইউনিয়ন ও পরবর্তীতে রাশিয়ার থেকে অস্ত্র কিনতে শুরু করে। ভারতের বর্তমান অস্ত্রভাণ্ডারে প্রায় ৫০ শতাংশ রাশিয়া থেকে আমনাদি করা। তবে আমেরিকার সঙ্গে বিগত কয়েক বছরে বাণিজ্যিক কারণে সম্পর্ক ভালো হয়েছে ভারতের। সেই সম্পর্ক সামরিক ও কৌশলগত জোটেও পরিণত হয়েছে কিছু ক্ষেত্রে। তবে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেনি ভারত। এই আবহে রাষ্ট্রসংঘে রাশিয়ার বিরুদ্ধে কোনও ভোটাভুটিতেই অংশ নেয়নি ভারত। তবে বারবারই কূটনীতি ও আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের পক্ষে সওয়াল করেছে ভারত।
বিগত বছরে রাশিয়ার অস্ত্রের ওপর ভারতীয় নির্ভরশীলতা কমাতে দিল্লিকে চাপ দিয়েছে আমেরিকা। তবে সেই চাপের কাছে নতি স্বীকার না করেই রাশিয়া থেকে এস-৪০০ মিসাইল সিস্টেম কিনেছে ভারত। এদিকে রাশিয়ার থেকে জ্বালানি তেলও কিনে চলেছে ভারত। এই আবহে ইউরোপের সামলোচনার মুখে পড়েছে ভারত। এরই মাঝে ইউক্রেন যুদ্ধের বিরোধিতা করলেও ভারত সরাসরি রাশিয়ার বিরুদ্ধে কথা বলেনি। বরং পুতিনের সঙ্গে দেখা করে মোদী বলেছিলেন, ‘এটা যুদ্ধের সময় নয়’। মোদীর সেই কথাকে মান্যতা দিয়েছিলেন পুতিনও। তবে যুদ্ধ থামেনি। এই আবহে মোদী বলেন, ‘গোটা বিশ্বই ভারতের অবস্থানের বিষয়ে অবগত। এবং আমার বিশ্বাস তারা ভারতের অবস্থান বুঝতে পারছে। ভারত শান্তি চায়। এবং ভারতের এই নীতির ওপর পূর্ণ আস্থা আছে সবার। ইউক্রেন যুদ্ধের ইস্যুতে অনেকেই মনে করেন যে আমরা নিরপেক্ষ। বিষয়টা সেরকম নয়। আমরা শান্তির পক্ষে। সকল দেশের উচিত আন্তর্জাতিক আইন এবং দেশের সার্বভৌমত্বকে সম্মান করা।’ মোদী আরও বলেন, ‘যুদ্ধ বন্ধে ভারত যথা সম্ভব ভূমিকা পালন করতে প্রস্তুত।’