Expenses on Lawyers by West Bengal Govt: মামলার পর মামলা, গত ৮ বছরে আইনজীবীদের পিছনে রাজ্য সরকারের খরচ বেড়েছে ৩১২.৫%

জয়দীপ ঠাকুর: প্রায় ১০টিরও বেশি নিয়োগ দুর্নীতির মামলা। একবার সেগুলি হাই কোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ থেকে ডিভিশন বেঞ্চে যায়। আবার তা সুপ্রিম কোর্টে যায়। প্রতি ক্ষেত্রেই আইনজীবী নিয়োগ করে মোটা টাকা খরচ করতে হচ্ছে রাজ্যকে। আবার সেই মামলায় কখনও কেউ চাকরি হারালে আলাদা করে আবেদন জানাচ্ছে, আবার কেউ নিয়োগ না পেয়ে আবেদন করছেন। তাতেও হাজির থাকতে হচ্ছে সরকার পক্ষের আইনজীবীকে। তাতেও সরকারের খরচ হচ্ছে প্রচুর। শুধু তাই নয়, কয়লা, গরু, বালি পাচারের মতো মামলাতেও আইনজীবীর পিছনে খরচ হচ্ছে বিস্তর। এছাড়াও তো জেলা আদালতে এমনি অপরাধের মামলা রয়েছে। অন্য আরও অনেক ধরনের মামলা রয়েছে। পরিস্থিতি এমনই দাড়িয়েছে যে ২০১৪-১৫ অর্থবর্ষের তুলনায় বর্তমানে আইজনীবীর খরচ তিন গুনেরও বেশি বেড়েছে এই রাজ্যে। (আরও পড়ুন: ‘…ভাগ হয়ে যেতে পারে ভারত’, মোদীর মার্কিন সফরকালে বিস্ফোরক ওবামা)

আরটিআই তথ্য দেখাচ্ছে, ২০১৪-১৫ অর্থবর্ষে আইনজীবীর ফি বাবদ রাজ্য সরকারকে খসাতে হয়েছিল ২৪ কোটি টাকা। এদিকে ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে সেই পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৭৫ কোটি। অর্থাৎ, আইনজীবী বাবদ ৩১২.৫ শতাংশ খরচ বেড়েছে রাজ্য সরকারের। এদিকে এই খরচ শুধুমাত্র জেলা আদালত, ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট এবং হাই কোর্টে নিযুক্ত আইনজীবীদের জন্য হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের খরচ এতে অন্তর্ভুক্ত নয়। এদিকে ২০১৪-১৫ অর্থবর্ষে শুধুমাত্র হাই কোর্টের নিযুক্ত আইনজীবীদের সরকার দিয়েছিল ১৩ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে সেই খরচের পরিমাণ বেড়ে হয়েছে ৪২ কোটি টাকা। এদিকে এই একই সময়ে জেলা আদালতগুলির ক্ষেত্রেও আইনজীবীদের খরচ বেড়েছে। ২০১৪ সালে যেখানে জেলা আদালতে আইনজীবীদের পিছনে ৬.৮৬ কোটি টাকা খরচ হয়েছিল। ২০২২ সালে সেখানে জেলা আদালতের আইনজীবীদের জন্য বরাদ্দ বেড়ে হয়েছে ৩১ কোটি টাকা। এদিকে ফাস্ট ট্র্যাক আদালতের আইনজীবীদের জন্য খরচ প্রায় একই থেকেছে আট বছর পরও। ২০১৪-১৫ অর্থবর্ষে যেখানে ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টের আইনজীবীদের জন্য সরকার ৪ কোটি টাকা খরচ করেছিল। ২০২২ সালে সেই খরচ ছিল ৪.২৪ কোটি টাকা।

এদিকে আরটিআই-এর জবাবে জানানো হয়েছে, ২০১১ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত আইনজীবীদের পিছনে করা খরচের কোনও হিসেব বা নথি নেই সরকারের কাছে। এদিকে নথি থেকে জানা যাচ্ছে যে ২০১৬ সালে ১১ হাজার ৯৬৯টি ফৌজদারি মামলার সঙ্গে যুক্ত ছিল সরকার পক্ষ। এদিকে ২০২২-২৩ সালে সেই সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৩৫। এদিকে ২০১৬ সালে জেলা আদালতে ২২ হাজার ৮২৮টি মামলায় যুক্ত ছিল সরকার। ২০২২-২৩ সালে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫ হাজার ৫৭৬-এ। বর্তমানে হাই কোর্টে ফৌজদারি মামলা লড়ার জন্য ৫১১ জন আইনজীবীকে এমপ্যানেল করেছে সরকার। এদিকে দেওয়ানী মামলা লড়ার জন্য আদালতে এমপ্যানেল করা হয়েছে ৭২৬ জন আইনজীবীকে। ২০১৪ সালে হাই কোর্টে সরকার পক্ষের ফৌজদারি আইনজীবী ছিলেন ১৩২ জন। আর দেওয়ানী মামলা লড়ার জন্য আইনজীবী ছিলেন ৪৬৪ জন।

এই নিয়ে বাম নেতা তথা আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘রাজ্যে প্রশাসনিক বিচার নেই। তাই জনগণ আদালতে যেতে বাধ্য হচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে, তৃণমূলের রাজনৈতিক স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে চলে যাচ্ছে। সেখানে তারা প্যানেলের বাইরের আইনজীবী নিয়োগ করছে এবং বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করেছে।’ এদিকে এই আরটিআই রিপোর্ট নিয়ে কংগ্রেস নেতা এবং আইনজীবী কৌস্তভ বাগচি বলেন, ‘রাজ্য সরকার যদি বেআইনি এবং অসাংবিধানিক কিছু করে তবে জনগণ আদালতে যেতে বাধ্য হবেই।’