সম্প্রতি ভোপালে এক জনসভা থেকে অভিন্ন দেওয়ানি বিধির পক্ষে সওয়াল করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এরপর থেকেই জাতীয় রাজনীতি জুড়ে এই নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। এদিকে রিপোর্ট অনুযায়ী, আসন্ন বাদল অধিবেশেনেই অভিন্ন দেওয়ানি বিধির খসড়া নিয়ে আলোচনা হতে পারে সংসদে। আর এরই মধ্যে কংগ্রেস অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করল। এই নিয়ে হাত শিবিরের হাই কমান্ড বৈঠকে বসেছিল সম্প্রতি। এরপর কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ জানান, এই মুহূর্তে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কার্যকর করার পক্ষে নয় কংগ্রেস। তবে এই নিয়ে সংসদে বিল বা খসড়া পেশ হলে এই নিয়ে বিস্তারিত ভাবে নিজেদের মনোভাব ব্যক্ত করবে দল।
প্রসঙ্গত, এর আগে গুজরাট বিধানসভা নির্বাচনের আগে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কার্যকর করার বার্তা দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ইতিমধ্যেই বহু বিজেপি শাসিত রাজ্য অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কার্যকর করার বিষয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করে দিয়েছে। তবে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে এখনও এই নিয়ে সেভাবে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। যদিও বিজেপি নেতারা বরাবরই এর পক্ষে সওয়াল করে এসেছেন। এই আবহে সম্প্রতি ভোপালে দাঁড়িয়ে মোদীর বক্তব্য বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। মোদী বলেছিলেন, ‘অভিন্ন দেওয়ানি বিধির নাম করে মানুষকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। পরিবারের এক সদস্যের জন্য একটি আইন আবার পরিবারের অপর সদস্যের জন্য় অন্য আইন, এভাবে কি ঘর চলতে পারে! এই ব্যবস্থায় কীভাবে দেশ চলবে? সংবিধানে ভারতের নাগরিকদের জন্য সমান অধিকারের কথা বলা হয়েছে। মুসলিমদের ক্ষেত্রে তিন তালাক যদি ধর্মীয় ভাবে এতই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকে তাহলে পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশে কেন এটা নেই? সুপ্রিম কোর্টও বলেছে যে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি লাগু করা উচিত।’
প্রসঙ্গত, ভারতের গণপরিষদ ৪৪ নং অনুচ্ছেদে বলা আছে, যখনই দেশের সব রাজ্যের বিধায়ক এবং ভারতের সংসদের জন্য পরিস্থিতি অনুকূল হবে তখনই অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কার্যকর করা উচিত। এই অনুচ্ছেদকে হাতিয়ার করেই বারংবার জনসংঘ থেকে বিজেপি অভিন্ন দেওয়ানি বিধির পক্ষে সওয়াল করে এসেছে। উল্লেখ্য, বিবাহ, বিবাহবিচ্ছেদ, সন্তান দত্তক নেওয়া থেকে সম্পত্তির উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে দেশে ধর্ম নির্বিশেষে একটি আইন কার্যক করার দাবি করে এসেছে গেরুয়া শিবির। বিজেপির অভিযোগ, সংখ্যালঘুদের তোষণ ও তুষ্টির রাজনীতির কারণেই ধর্মনিরপেক্ষ ভারতে এখনও অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করেনি কংগ্রেস। এই আবহে বারবার নির্বাচনী ইস্তেহারে অভিন্ন দেওয়ানি বিধির বিষয়টি উল্লেখও করেছে বিজেপি।
এর আগে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালুর দাবিতে সুপ্রিম কোর্টে মামলা হয়েছিল। তবে শীর্ষ আদালত জানিয়ে দেয় এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এক্তিয়ার রয়েছে শুধুমাত্র সংসদের। এই পরিস্থিতিতে কয়েক সপ্তাহ আগেই একটি নোটিশ জারি করে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়ে আম জনতা এবং বিভিন্ন সংস্থা ও সংগঠনের থেকে মতামত জানতে চাওয়া হয়। উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে আগের আইন কমিশনও বিভিন্ন সংগঠনের থেকে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়ে মতামত চেয়েছিল। তবে এরপর ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটে জয়ের পর এই নিয়ে কোনও পদক্ষেপ করেনি কেন্দ্রীয় সরকার। তবে ২০২৪ সালের ভোটের আগে ফের একবার অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়ে তৎপর হয়েছে আইন কমিশন। আর তা নিয়েই রাজনৈতিক পাদ চড়ছে।