মনোযোগ হারিয়ে এলোমেলো বাংলাদেশ

প্রথমবারের মতো আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ হারলো বাংলাদেশ। বিশ্বকাপের আগে আফগানিস্তানের বিপক্ষে এমন হার লাল-সবুজ জার্সিধারীদের জন্য অশনি সংকেত। তামিম ইকবালের অবসর কাণ্ডে পুরো দলের মনোযোগ সরে যাওয়া ছিল স্বাভাবিক। এত এত বিপর্যয়ের মুখে পড়বে বাংলাদেশ, সেটি ছিল কল্পনাতীত। ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং তিন বিভাগেই আফগানিস্তানের বিপক্ষে কোণঠাসা হয়ে লিটনের দল ১৪২ রানের বড় ব্যবধানে ম্যাচ হারে।

সিরিজ বাঁচানোর মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে শুরু থেকেই এলোমেলো এক বাংলাদেশের দেখা মিলেছে। ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে বাংলাদেশের শুরু। টস জিতে বোলিংয়ে নেন ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক লিটন। মোস্তাফিজুর রহমান, এবাদত হোসেন ও হাসান মাহমুদ-তিন পেসত্রয়ীর পাশাপাশি সাকিবর আলা হাসান ও মেহেদী হাসান মিরাজের নির্বিষ বোলিংয়ে আফগানিস্তান বাংলাদেশকে নিয়ে ছেলেখেলায় মেতে উঠে। আফগান দুই ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরান মিলে বাংলাদেশের বোলিং লাইনআপকে দুমড়ে-মুচড়ে দেন। পাক্কা ৩৬ ওভার রাজত্ব করে তারা দুইজন তোলেন ২৫৬ রান। দুইজনই সেঞ্চুরি পেয়েছেন। শেষ ১৪ ওভারে বাংলাদেশের বোলাররা আফগানদের ৯ উইকেট তুলে নিলেও লাভ হয়নি কোনও। কেননা ততোক্ষণে ৩৩১ রানের বিশাল রান পাহাড় গড়ে ফেলে সফরকারী দল।

শুধু বোলারদের ব্যর্থতাই ছিল! ফিল্ডিংয়ে পুরো দলের হতাশ করা পারফরম্যান্স ফুটে উঠেছে। আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে লিটন বলেছিলেন তামিমের অবসর তাদের ড্রেসিংরুমে কোনও প্রভাব ফেলবে না। তারা চিল মুডেই আছেন। কিন্তু ম্যাচের দিন দেখা গেলো ভিন্ন চিত্র। তামিমের এই ঘটনার আঁচ পুরো দলেই লেগেছে। 

বোলারদের বাজে পারফরম্যান্সের পর ব্যাটারদের দিকে তাকিয়ে ছিল ক্রিকেটপ্রেমীরা। চট্টগ্রামে সিরিজ হার এড়াতে ৩৩২ রান করে রেকর্ড গড়তে হতো স্বাগতিক দলকে। কিন্তু বোলারদের দেখানো পথই যেন অনুসরণ করলেন বাংলাদেশের ব্যাটাররা। শনিবার বাংলাদেশের ব্যাটারদের ব্যাটিং দেখে মনে হয় ভয়ঙ্কর কোনও বোলার যেন তাদের বিপক্ষে বোলিং করছেন। এক প্রান্ত আগলে রেখে মুশফিক একা লড়াই করলেও বাংলাদেশ দল অলআউট হয়েছে ৪৩.২ ওভারে ১৮৯ রানে। যার ফলে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে আফগানদের বিপক্ষে ১৪২ রানের বড় ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ। ওয়ানডেতে আফগানদের বিপক্ষে রানের ব্যবধানে এটিই সবচেয়ে বড় পরাজয় বাংলাদেশের।

তামিমবিহীন বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ কেমন করে সেটি দেখার অপেক্ষায় ছিল গোটা দেশ। আম্পায়ারের কল্যাণে প্রথম দফায় জীবন পেলেও ১৩ রানের বেশি করতে পারেননি ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক লিটন। এরপর মুজিবের ঘূর্ণি বল বুঝতে পারেননি শান্ত, বোল্ড হয়ে ফেরেন মাত্র ১ রানে। তামিমের বদলে সুযোগ পাওয়া নাঈম শেখ শুরু থেকেই অস্বস্তি নিয়ে ব্যাটিং করেছেন। শেষ পর্যন্ত দুই বছর পর খেলতে নেমে ২১ বলে ৯ রান করে বোল্ড হন তিনি। 

২৫ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর সাকিব-হৃদয়ের প্রতিরোধ শুরু হয়। দুজনে খেলতে থাকেন দেখেশুনে। কিন্তু রশিদ খান বোলিংয়ে এসেই হৃদয়কে সাজঘরের পথ দেখিয়ে জুটি ভাঙেন।  ভালো খেলতে থাকা সাকিবও পরের ওভারে নবীর শিকার হন। আফিফও রানের খাতা না খুলে আউট হয়েছেন।  এমন অবস্থায় সপ্তম উইকেট জুটিতে মিরাজ ও মুশফিক ৮৭ রানের জুটি গড়ে আফগানিস্তানকে জবাব দিচ্ছিল। কিন্তু মিরাজ লম্বা শট খেলতে গিয়ে আউট হলে স্বপ্ন শেষ হয়। মুশফিক টেলঅ্যান্ডারকে নিয়ে কিছুক্ষণ লড়াই করলেও শেষ পর্যন্ত ১৮৯ রানে থামে বাংলাদেশের ইনিংস।

বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশ তাদের প্রথম ম্যাচ খেলবে। বিশ্বকাপের ড্রেস রিহার্সেল হিসেবে এই সিরিজকে ধরা হচ্ছিল। টানা দুই ম্যাচ আফগানদের বিপক্ষে নাস্তানাবুদ হয়ে পরিস্থিতি কঠিন করে তুললো বাংলাদেশ। এই ফরম্যাটে গত কয়েক বছর ধরে দাপট দেখিয়ে আসছিল দল। বিশ্বকাপের তিন মাস আগে এভাবে ছন্দপতন ভক্তদের মনে ভয় ধরিয়ে দিচ্ছে। বিশ্বকাপের আগে নিজেদের ভুলগুলো শুধরে ঘুরে দাঁড়াতে না পারলে ভারত বিশ্বকাপ বিষাদে পরিণত হওয়াটা সময়ের ব্যাপার মাত্র!