ABP Exclusive: Bengal Pacer Irfan Aftab Got Chance To Practice In MRF Pace Foundation Under Australia Legend Glenn McGrath

সন্দীপ সরকার, কলকাতা: আর পাঁচটা শিশুর মতো প্লাস্টিক বল হাতে যখন পাড়ায় ক্রিকেট খেলতে শুরু করেছিলেন, গ্লেন ম্যাকগ্রার (Glenn McGrath) নামই শোনেননি।

অস্ট্রেলিয়ার (Australia Cricket Team) সেই কিংবদন্তি পেসারের কাছেই এখন ফাস্ট বোলিংয়ের পাঠ নিচ্ছেন বাংলার ইরফান আফতাব (Irfan Aftab)। চেন্নাইয়ের এমআরএফ পেস ফাউন্ডেশনে (MRF Pace Foundation)। যে স্কুলের প্রাক্তনীদের নাম বেশ চমকে দেওয়ার মতো!

জাভগাল শ্রীনাথ, বেঙ্কটেশ প্রসাদ, জাহির খান, ইরফান পাঠান, আর পি সিংহ… লম্বা তালিকা। বিদেশিদের মধ্যে চামিণ্ডা ভাস থেকে শুরু করে ব্রেট লি, মিচেল জনসন, মহম্মদ আসিফ, এক সে বড়কড় এক নাম। এমনকী, ছোটবেলা পেসার হওয়ার স্বপ্ন দেখা সচিন তেন্ডুলকরও (Sachin Tendulkar) ভর্তি হয়েছিলেন এমআরএফ পেস ফাউন্ডেশনে।

বিখ্যাত সেই গুরুকূলে সুযোগ পেয়েছেন বাংলার ইরফান। আলমবাজারের ডানহাতি পেসার প্রায় এক মাস কাটিয়ে ফেলেছেন চেন্নাইয়ে। কোচ ও এমআরএফ পেস ফাউন্ডেশনের ডিরেক্টর ম্যাকগ্রার কাছে সপ্তাহ দুয়েক ক্লাসও করেছেন। ডানহাতি পেসারকে হাতে ধরে আউটস্যুইং শিখিয়েছেন বিশ্বজয়ী ফাস্টবোলার।

বছর ঊনিশের ইরফান চেন্নাই থেকে ফোনে এবিপি লাইভকে বলছিলেন, ‘মনঃসংযোগ ও নিষ্ঠার পাঠ দিয়েছেন ম্যাকগ্রা স্যর। বলেছেন, বেশি কিছু করার চেষ্টা কোরো না। সারাদিন এক জায়গায় বল করে যাও। ব্যাটারদের ধৈর্য্যের পরীক্ষা নাও।’ নিজে সারাদিন অক্লান্তভাবে অভ্রান্ত নিশানায় এক জায়গায় বল করে যেতেন। ব্যাটারদের কাছে রীতিমতো আতঙ্ক ছিল ম্যাকগ্রার লাইন-লেংথ। ছাত্রদেরও সেই মন্ত্রেই দীক্ষা দিচ্ছেন বিশ্বক্রিকেটের ‘পিজিয়ন’।

ইরফান বলছেন, ‘প্রচুর বোলিং করাতেন ম্যাকগ্রা স্যর। এক এক স্পেলে ৬-৭ ওভার করে বল করাতেন। উনি নিজের কেরিয়ারে একবার টানা ২৩ ওভার বল করেছিলেন। সেই উদাহরণ দিয়েছেন।’ যোগ করলেন, ‘আমি ইনস্যুইং করাতে পারতাম। উনি অফ দ্য পিচ আউটস্যুইং করানোও দেখিয়ে দিয়েছেন। প্র্যাক্টিসে সেই শিক্ষা কাজে লাগাচ্ছি। ম্যাকগ্রা স্যর বলেছেন, ফাস্টবোলার মানে ফিট থাকতেই হবে। ফিটনেসে প্রচুর জোর দেওয়া হচ্ছে এখানে। ট্রেনিং, জিম চলছে জোর কদমে। দু’সপ্তাহ আমাদের সঙ্গেই ছিলেন ম্যাকগ্রা। ফের আসবেন।’

ইরফানের প্রিয় বোলার মহম্মদ শামি। তবে জাতীয় দলের তারকা পেসারের সঙ্গে কখনও কথা বলার সুযোগ হয়নি। ইরফানের কাকা একলাখ আমেদ বাংলার প্রাক্তন ক্রিকেটার। বরানগরে কাকার কোচিং ক্যাম্পেই প্রথাগত ক্রিকেটে হাতেখড়ি হয় ইরফানের। অনূর্ধ্ব ১৩ পর্যায়ে খেলা শুরু করেন। তারপর অনূর্ধ্ব ১৫ দলে নজরকাড়া পারফরম্যান্স। সফল হওয়ায় বাংলার অনূর্ধ্ব ১৬ দলের ট্রায়ালে ডাক পান। বাংলার অনূর্ধ্ব ১৯ দলের হয়ে প্রথম মরশুমে ৩ ম্যাচে ১৩ উইকেট। গত মরশুমে কোচবিহার ট্রফিতে ৬ ম্যাচে ২৬ উইকেট নেন ইরফান। নির্বাচকদেরও নজর কেড়ে নেন।

জুনিয়র পর্যায়ে ধারাবাহিকতার জন্য বোর্ডের আঞ্চলিক শিবিরে ডাক পেয়েছেন। পরপর দুবার। গত বছর নাগপুরে। এবার গিয়েছিলেন দেহরাদূনে। বাংলার রাহুল প্রসাদ, সুমিত নাগ ও সুখমিত সিংহের সঙ্গে। হোলি ক্রাইস্ট স্কুলে কলাবিভাগ নিয়ে পড়াশোনা করছেন ইরফান। দ্বাদশ শ্রেণিতে। কাস্টমস ক্লাবের হয়ে প্রথম ডিভিশনে খেলতেন। এবার সই করেছেন কালীঘাট ক্লাবে। 

উদীয়মান পেসারকে নিয়ে আশাবাদী বাংলার পেস বোলিং কোচ, প্রাক্তন ক্রিকেটার শিবশঙ্কর পাল। বলছিলেন, ‘গত তিন বছর ধরে দেখছি ওকে। ভাল বোলার। লম্বা স্পেলে বল করতে পারে। বল দুদিকেই মুভ করায়। নিজেকে ধরে রাখলে লম্বা দৌড়ের ঘোড়া।’

বাংলার অনূর্ধ্ব ১৯ দলের কোচ, জাতীয় দলের প্রাক্তন ক্রিকেটার দেবাঙ্গ গাঁধীও তরুণ পেসারকে নিয়ে ইতিবাচক। বলছেন, ‘প্রতিভা আছেই। বড় পেসারদের মতো শারীরিক গঠন। ভাল উচ্চতা। বল ভেতরে আনতে পারে। খুব ভাল ফিল্ডার। ব্যাটের হাতও ভাল। অনূর্ধ্ব ১৯ দলের হয়ে বেশ কয়েকটা ভাল ইনিংসও খেলেছে। অনেক পথ যেতে হবে। পরিশ্রম করছে।’

ইরফানের স্বপ্ন ভারতের হয়ে টেস্ট খেলার। আইপিএলের রমরমার যুগেও লাল বলের ক্রিকেট টানে তাঁকে। গুরু ম্যাকগ্রার আদর্শে দীক্ষিত হয়ে জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন দেখছেন বাংলার তরুণ। তার জন্য প্রথম সিঁড়ি হিসাবে বেছে নিচ্ছেন বাংলার হয়ে রঞ্জি খেলাকে। প্রিয় ক্রিকেটার শামির মতোই জাতীয় দলে প্রতিষ্ঠার স্বপ্নে বুঁদ আলমবাজারের প্রতিশ্রুতিমান।

আরও পড়ুন: প্রয়াত ব্যালঁ ডি অর জয়ী তারকা লুইস সুয়ারেজ়, শোকস্তব্ধ ফুটবল দুনিয়া

আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম টেলিগ্রামেও। যুক্ত হোন      

https://t.me/abpanandaofficial