দেশে ৩৬ শতাংশ মৃত্যুর কারণ হৃদরোগ

মৃত্যুর শীর্ষ কারণগুলোর অন্যতম হৃদযন্ত্র ও রক্তনালির রোগ বা কার্ডিওভাস্কুলার ডিজিজ। দেশে মোট মৃত্যুর ৩৬ শতাংশের পেছনে আছে হৃদযন্ত্র ও রক্তনালির রোগ। এমনটি জানিয়েছেন জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এনজিওগ্রাম ও এনজিও প্লাস্টিক বিশেষজ্ঞ ডা. মহসীন আহমদ।

মঙ্গলবার (১১ জুলাই) দুপুরে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের ক্যাথল্যাবে শততম এনজিওগ্রাম সম্পন্ন করার পর এ তথ্য জানান তিনি।

ডা. মহসীন আহমদ বলেন, ‘হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণে দেশে ডায়াবেটিস রোগী বেড়ে গেছে। ব্যাপক হারে ধূমপান, বায়ু দূষণ, মানুষের মাঝে হাঁটার অভ্যাস না থাকা, পরিশ্রম না করা, উচ্চ রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরলের কারণে হৃদরোগ বাড়ছে৷ এ থেকে রক্ষা পেতে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।’

বিদেশিদের মাঝে সাধারণত ৭০ বছরের আগে হৃদরোগ দেখা যায় না উল্লেখ করে মহসীন আহমদ বলেন, ‘কিন্তু আমাদের দেশে ২০-৪০ বছরের মানুষের মাঝে ব্যাপক হারে হৃদরোগ দেখা যাচ্ছে। তবে সচেতনতার মাধ্যমে হৃদরোগ থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব।’

এদিন দুপুরে হাসপাতালের ক্যাথল্যাবে শততম রোগীর এনজিওগ্রাম সম্পন্ন করা হয়। এ নিয়ে ১০৭ জন রোগীর এনজিওগ্রামসহ রিং পরানো হয়।

ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের প্রধান ডা. গোবিন্দ কান্তি পাল বলেন, ‘এই অঞ্চলের মানুষের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অঙ্গীকার হিসেবে মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে হাসপাতালে ক্যাথল্যাব উদ্বোধন করা হয়। ২০২১ সালের ২৮ মার্চ প্রথম এনজিওগ্রাম কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু করোনার কারণে দীর্ঘদিন কার্যক্রম বন্ধ ছিল। পরে ২০২২ সালের ৫ এপ্রিল আবারও ক্যাথল্যাবে এনজিওগ্রাম কার্যক্রম শুরু হয়। মঙ্গলবার ১০০তম এনজিওগ্রাম সম্পন্ন করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩০ জনকে রিং পরানো হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের এনজিওগ্রাম বিশেষজ্ঞ ডা. মহসীন আহমদ তার টিম নিয়ে আমাদের এনজিওগ্রাম কার্যক্রমের সহযোগিতা করে থাকেন। তার মাধ্যমে আমাদের বিভাগের চিকিৎসকরা এনজিওগ্রাম করতে পারদর্শী হয়ে উঠেছেন। খুব অল্প খরচে হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগে এসে এই অঞ্চলের গরিব মানুষ এনজিওগ্রামসহ রিং পরানোর সেবা নিতে পারছেন। এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

 

 

এনজিওগ্রাম করতে আসা সুনামগঞ্জের মধ্যনগরের গোলহা গ্রামের কৃষক কিশোর রায় (৬০) বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগে আক্রান্ত। বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসক দেখিয়েছি। অনেকে এনজিওগ্রাম করার পরামর্শ দিয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘অনেকে বলেছেন ঢাকা যেতে কিংবা ভারতে গিয়ে এনজিওগ্রাম করাতে। এ জন্য খরচ পড়বে পাঁচ থেকে সাত লাখ টাকা। এই টাকা জোগাড় করা নিয়ে খুব চিন্তিত ছিলাম। সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম চিকিৎসা খরচ জোগানোর জন্য প্রয়োজনে কৃষিজমি বিক্রি করে দেবো। পরে যখন জানতে পারলাম, ময়মনসিংহ মেডিক্যালে এনজিওগ্রাম কম খরচে করা হয়। এরপর হাসপাতালে এসে ভর্তি হলে অল্প খরচে আমার এনজিওগ্রাম করে দুটি রিং বসানো হয়। খুব সহজেই আমি চিকিৎসাসেবা পেয়েছি। আমাকে আর জমিজমা বিক্রি করতে হয়নি।

জামালপুরের বকশীগঞ্জ থেকে এনজিওগ্রাম করতে আসা সাইদুল মিয়া (৫০) বলেন, ‘এভাবে হাতের কাছে এনজিওগ্রাম সহজে করাতে পারবো, এটা কল্পনাও করিনি। একেবারেই অল্প খরচে এনজিওগ্রাম করাতে পেরেছি। এখনকার চিকিৎসক, নার্স এবং অন্যান্য কর্মচারী খুব ভালো সেবা দিচ্ছেন।’

ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গোলাম ফেরদৌস বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অঙ্গীকার অনুযায়ী মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে হাসপাতালে ক্যাথল্যাব চালু করা হয়। ময়মনসিংহের গরিব-দুঃখী মানুষ অল্প খরচে এনজিওগ্রামসহ স্বাস্থ্যসেবা পেয়ে আসছেন। এখানে স্বাস্থ্যসেবার মান আরও বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে।