স্বস্তির জয়ে উবে গেলো শঙ্কার কালো মেঘ!

কোনও প্রতিপক্ষই দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশ করতে পারছিল না। তাও আবার ঘরের মাঠে! তৃতীয় ওয়ানডেতে আফগানিস্তানের সুযোগ ছিল সেটি করে দেখানোর। শেষ পর্যন্ত পারেনি অবশ্য। মঙ্গলবার দারুণ বোলিং-ব্যাটিংয়ে ১৫৯ বল হাতে রেখে ৭ উইকেটের স্বস্তির জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে লিটন দাসের দল।

আফগানিস্তানের বিপক্ষে টানা দুই ম্যাচ হেরে শঙ্কার কালো মেঘ উড়ছিল বাংলাদেশের ক্রিকেট আকাশে। সেই কালো মেঘ কিছুটা হলেও উবে গেছে স্বস্তির এই জয়ে। আগের দুই সিরিজে আফগানিস্তানের বিপক্ষে অনায়াসে জিতলেও এবার চোখ রাঙাচ্ছিল হোয়াইটওয়াশ। অথচ বাংলাদেশ সেই ২০১৪ সালে সর্বশেষ ভারতের কাছে সিরিজের সব ম্যাচে হারের তিক্ত স্বাদ পেয়েছিল। অবশ্য তিন ম্যাচের সিরিজে একটি পরিত্যক্ত হয়েছিল বৃষ্টির কারণে। ৯ বছর পর প্রায় একই লজ্জায় পড়তে যাচ্ছিল বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত মান রক্ষা হয়েছে।

তবে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে আফগানিস্তানের কাছে পাত্তাই পায়নি তারা। এমন পরিস্থিতিতে সিরিজের শেষ ম্যাচটি নিয়েও শঙ্কা ছিল। সিরিজ হারে আইসিসি র‌্যাঙ্কিংয়ের সাত নম্বর পজিশন না হারিয়ে ফেলে! শেষমেশ সেটি হয়নি। বরং বাংলাদেশ তৃতীয় ম্যাচ জিতে হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর পাশাপাশি নিজেদের অবস্থানও সংহত করে রেখেছে। তবে বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজ জিতে লঙ্কানদের পেছনে ফেলে আট নম্বরে উঠে এসেছে আফগানরা।

বাংলাদেশকে কোণঠাসা করে এক ম্যাচ আগে সিরিজ নিশ্চিত করা আফগানিস্তান কিছুটা নির্ভার হয়েই মঙ্গলবার জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে শেষ ম্যাচটিতে মাঠে নেমেছিল। আগের দুই ম্যাচ খেলা একাদশ থেকে দুটি পরিবর্তন এনেছিল তারা। আফগানদের মূল অস্ত্র রশিদ খানকে বিশ্রাম দেয় টিম ম্যানেজমেন্ট। বাংলাদেশও একাদশে এনেছিল তিন পরিবর্তন। তাসকিন-শরিফুলরা ফিরেই আগুন ঝরিয়েছেন। তাদের আগুনে বোলিংয়ে ছারখার হয়ে যায় আফগান ব্যাটিং। অবস্থা এমন ছিল যে ১০০ রানের নিচেই তারা অলআউট হতে পারতো। সেটি হয়নি আজমতউল্লাহ ওমরজাইয়ের ৫৮ রানের দায়িত্বশীল ইনিংসের কল্যাণে। তার ব্যাটেই আফগানিস্তান ১২৭ রানের লক্ষ্য দেয় বাংলাদেশকে।

প্রথম দুই ম্যাচে একাদশের বাইরে থাকা পেসার শরিফুল ছিলেন ভয়ংকর। ৯ ওভার বোলিং করে ২১ রান খরচায় তার শিকার ছিল ৪ উইকেট। তাসকিন ২৩ রানে নেন দুটি উইকেট। তাছাড়া তাইজুল ২ এবং মিরাজ ও সাকিব একটি করে উইকেট নিয়েছেন।

সহজ লক্ষ্যে খেলতে নেমে শুরুতে অবশ্য অস্বস্তিতে পড়েছিল বাংলাদেশের দুই ওপেনার। আবাহনীর জার্সিতে ঢাকা লিগে ৯৩২ রান করে জাতীয় দলে ফিরেও ভালো করতে পারেননি নাঈম শেখ। তামিমের অবসর কাণ্ডের পর দ্বিতীয় ম্যাচে সুযোগ পেয়ে খেলেছেন ৯ রানের ইনিংস। আজ তো রানের খাতাই খুলতে পারেননি। তার সঙ্গী লিটন শুরুতে অস্বস্তিতে থাকলেও শেষ পর্যন্ত ৫৩ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে দলের জয় নিশ্চিত করে মাঠ ছেড়েছেন। ৬০ বলে ৩ চার ও ২ ছক্কায় নিজের ইনিংসটি সাজান দলের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক।

তবে লিটন চাপ কাটিয়ে রানে ফিরলেও শান্ত (১১) ব্যর্থ হয়েছেন পুরোপুরি। ফজল হক ফারুকির সঙ্গে তর্কে জড়ানোর কিছুক্ষণের মধ্যেই আউট হয়ে যান তিনি। ফারুকির স্ট্যাম্প বরাবর বলটি লাইন মিস করে ক্লিন বোল্ড হয়েছেন। এছাড়া সাকিবের ব্যাট থেকে এসেছে ৩৯ রানের ইনিংস। ১৯ বলে ২২ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছেন তাওহীদ হৃদয়। তাতে ২৩.৩ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্য ছুঁয়ে ফেলে বাংলাদেশ।

আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ খোয়ানোর পর এই জয়টি নিশ্চিতভাবেই ড্রেসিংরুসের অস্বস্তি কিছুটা হলেও দূর করবে। ওয়ানডে সিরিজ শেষে আগামী সপ্তাহে সিলেটে শুরু হবে টি-টোয়েন্টি সিরিজ। সামনেই এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপের মতো বড় দুটি টুর্নামেন্ট। জয়ের ধারা অব্যাহত রেখে খুশি মনে বৈশ্বিক মঞ্চে যেতে পারলে সেটি হবে দেশের ক্রিকেটের জন্যই মঙ্গলজনক।